বোনদের ঠকাতে ভাড়াটে খুনি দিয়ে বাবাকে হত্যা করান মাসুদ: পিবিআই

বিএনপির বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তকারী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানিয়েছে, বোনদের ঠকিয়ে ব্যাংক থেকে তোলা টাকা আত্মসাতের লোভে ভাড়াটে খুনি দিয়ে বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমকে হত্যা করান তার ছেলে।

আজ রোববার দুপুরে পিবিআইয়ের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পিবিআই জানিয়েছে, মৃত্যুর ২ মাস আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের ব্যাংক থেকে তোলা ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের লোভে ৫ লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে বাবাকে হত্যা করান তার ছেলে এইচএম মাসুদ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আলামত ও বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভ (ডিভিআর) উদ্ধারের পর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পিবিআই।

এর আগে, গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাওলাবাজার এলাকায় নিজ বাসা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের (৭২) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় তার একমাত্র ছেলে মাসুদ (৪২) দাবি করেন, ৩১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে তাদের বাসায় ঢুকে তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে, বৃদ্ধ বাবাকে খুন করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল।

তখন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রিজাউল হক বলেছিলেন, 'ডাকাতরা কীভাবে ওই বাসায় ঢুকল তা স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। বাড়িতে ৪টি সিসি ক্যামেরা থাকলেও মেশিন থেকে হার্ডড্রাইভ খুলে নেওয়া হয়েছে। তাই ঘটনাটি রহস্যজনক।'

এ ঘটনায় ১ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লা মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন নিহতের জামাতা। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, 'নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের ১ ছেলে ও ২ মেয়ে। মেয়েরা তার শ্বশুরবাড়িতে থাকে। বাদীর শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর শ্বশুর ও তার একমাত্র ছেলে মাসুদ তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মাওলাবাজারের নিজ বাড়ির দ্বিতীয়তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। ৩১ জানুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে লোক মারফত তিনি জানতে পারেন, তার শ্বশুরবাড়িতে বড় ধরনের ডাকাতি হয়েছে। তৎক্ষণাৎ বাড়ি ফিরে দেখেন তারে শ্বশুর খাটের উপর মৃত পড়ে আছেন। তার শ্যালক জানান, দু'দিন আগে তার স্ত্রী-সন্তান শ্বশুরবাড়ি গেছেন। রাত ১০টার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষে শ্বশুর ও শ্যালক নিজ কক্ষে শুয়ে পড়েন।'

এজাহারে আরও বলা হয়, 'রাত দশটা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৩ অজ্ঞাত ব্যক্তি শ্যালকের কক্ষে ঢুকে তাকে পাটের রশি দিয়ে হাত-পা ও মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে শ্বশুরের কক্ষে গিয়ে ভয় দেখিয়ে আলমারিতে থাকা শ্বশুরের ৩০ লাখ ও শ্যালকের ২ লাখ টাকা লুট করে। শ্বশুরের টাকা ২ মাস আগে আইএফআইসি ইসলামী ব্যাংক থেকে তোলা হয়। টাকা লুট করার পর আসামিরা সিসিক্যামেরার হার্ডড্রাইভ নিয়ে যায়। বাধা দিলে শ্বশুরকে শ্বাসরোধ করে খুন করে পালিয়ে যায়। আসামিরা চলে যাওয়া পর শ্যালক হাত, মুখ বাঁধা অবস্থায় দরজা ধাক্কালে শব্দ পেয়ে ভাড়াটিয়া মাহিনুর (৪০) ও তার স্বামী দেলোয়ার (৪৫) ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে তার শ্যালকের হাত ও মুখের বাঁধন খুলে দেয়।'

এ মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ছায়াতদন্ত করে বলে জানান পিবিআই পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'গত ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় পিবিআই। দায়িত্ব পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসআই শাকিল হোসেন ও এসআই কামরুল হাসানকে নিয়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাজহারুল ইসলাম।'

পিবিআই বলছে, মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর পুনরায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পিবিআই। তদন্তে তারা জানতে পারে, নিহতের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ইজিবাইক চালক মো. রুবেলের (২৭)। কিন্তু, ঘটনার ২ দিন পর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার দিন রুবেলের উপস্থিতি ভুক্তভোগীর বাড়ির আশেপাশে পাওয়া যায়। সন্দেহভাজন হিসেবে গত শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার বোনের বাসা থেকে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বাকীরোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়।

পিবিআই আরও জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি রুবেল জানিয়েছে- ব্যাংক থেকে তোলা বাবার ৩০ লাখ টাকা একাই আত্মসাতের লোভে মাসুদ নিজের বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। নিহতের ছেলে মাসুদ ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে রুবেলকে ভাড়া করে। ঘটনার দিন রাত ১০টায় মাসুদের ফোন পেয়ে তাদের বাড়িতে যায় রুবেল। রুবেলের জন্য বাসার কলাপসিবল গেট ও ফ্ল্যাটের দরজা আগে থেকেই খোলা রাখে মাসুদ। রাত ১১টার দিকে আব্দুল হালিম ঘুমিয়ে পড়লে মাসুদ তার বার হাত-পা চেপে ধরে এবং রুবেল তার গলি টিপে শ্বাসরোধের চেষ্টা করে। ভুক্তভোগী চিৎকার করার চেষ্টা করলে রুবেল তার মুখের ওপর বালিশ চাপা দেয়। পরে মাসুদ তার কক্ষে থাকা রক্তচাপ মাপা যন্ত্রের সাহায্যে মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রুবেলকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভ বাইরে কোথাও ফেলে দিতে বলে মাসুদ। পরে হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে ডাকাতির নাটক সাজাতে মাসুদকে পাটের দড়ি দিয়ে হাত, পা ও গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে রেখে যায় রুবেল।

পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, 'রুবেলকে তার বোনের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জের ভাড়া বাসার ড্রেসিং টেবিৱের ড্রয়ার থেকে ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এছাড়া, ভুক্তভোগীর বাড়ির পেছন থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভ উদ্ধার করা হয়। আলামত হিসেবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পাটের দড়ি, গামছা, বালিশ, ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মাপার মেশিন জব্দ করা হয়।'

তিনি জানান, আসামি রুবেল শনিবার বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মোল্লার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার অপর আসামি মাসুদকে গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চলছে।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

27m ago