কেমন চলছে চশমার বাজার
আজকাল কমবেশি সবার চোখেই চশমা দেখা যায়। প্রয়োজন বা ফ্যাশন যে কারণেই হোক না কেন চশমার ব্যবহার বাড়ছে।
তবে দেশের এই বিশাল চশমার বাজার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। করোনার প্রভাব, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলার সংকটের কারণে যে বৈশ্বিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে চশমার বাজারেও। ফ্রেম, চশমার গ্লাস সবকিছু আমদানি নির্ভর হওয়ায় সংকটে পড়েছেন চশমা ব্যবসায়ীরা। তবে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধের মতো চশমা ব্যবহারকারিদের কাছে চশমা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।
বয়সভেদে চশমা চাহিদা
চোখের চশমার পাওয়ার যোগ হলে অনেকেই কাঁচের গ্লাসকেই প্রাধান্য দেন। তবে বর্তমানে গ্লু গামারের চাহিদা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। ফার্মগেট এর 'আইভিউ' দোকানের বিক্রয়কর্মী আসিফ বলেন, 'গ্লু গামারের চাহিদা বাড়ছে কারণ এটি হালকা আর রিফ্লেকশন কম হয়। প্রেসক্রিপশন ছাড়াও অনেকে এখন মোবাইল ও কম্পিউটারের ক্ষতিকর আলো থেকে বাঁচার জন্য বিশেষ পাওয়ার সম্পূর্ণ কম্পিউটার আই গ্লাস ব্যবহার করছে।'
তিনি আরও জানান, কমবয়সীদের আজকাল বড় ফ্রেমের চশমা বেশি পছন্দ। অন্যদিকে মধ্যবয়সীদের পছন্দ রিমলেস চশমা, তবে লেন্সের ব্যবহার বেড়েছে তুলনামূলক হারে। মোবাইল আসক্তি বাড়ার কারণে শিশুদের চোখের সমস্যা বাড়ছে তাই শিশুদের জন্য রঙিন ফ্রেমের চাহিদা আছে।'
শিশুদের চশমার বিভিন্ন ধরন আছে। শিশুদের জন্য ভালো মানের চশমা নেওয়া ভালো। এছাড়া ওয়ারেন্টি থাকায় ত্রুটি সারাই বা বদলে নেওয়ারও সুযোগ থাকে।
চশমা নেওয়া উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
ছোটবেলায় একটু বড় সাজার আশায় চোখে বড়দের চশমা পরে দেখেনি এমন মানুষ খুব কমই আছে। তবে চশমা ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ আই হসপিটাল এর মিরপুর শাখার পরামর্শক ডা: মো. আলাউদ্দিন হোসেন বলেন, 'অনেকেই আছে যারা শখের বশে চশমা পরেন, অনেকেই স্বল্পমূল্যের চশমা কিনে পড়ে থাকেন, যা চোখের জন্য ক্ষতিকর। প্লাস্টিক বা ছাঁচের চশমাগুলো রোদ শোষণ করে নেয়, ফলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি চোখের ক্ষতি করে।'
অনেক সময় চশমা পরে থাকলে দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে আসে। এমন সমস্যা দেখা দিলে চশমা বদলানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডা. আলাউদ্দিন বলেন, 'যারা চশমা ব্যবহার করেন তাদের উচিত ৬ মাস পরপর চোখের চেকআপ করানো। তবে চশমার দোকানের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় অনেকেই আছেন যারা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়ার দিয়ে চশমা বানিয়ে নিয়ে যান আর তারাও সেটি বানিয়ে দেন, যা একেবারেই উচিত নয়।'
চশমার দরদাম
মিরপুরের 'নূরানী চশমা ঘরে'র বিক্রয়কর্মী সোহাগ বলেন, 'আমাদের ৩০০ থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকার পর্যন্ত ফ্রেম আছে। লেন্সের ক্ষেত্রে হোয়াইট লেন্সের দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। অ্যান্টি রিফ্লেক্টের দাম ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা, অটোগ্লাসের দাম ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। স্টেনলেস স্টিল ফ্রেম ৪০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা, আর প্লাস্টিক ফ্রেমের দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।'
এ ছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্রেম কিনতে চাইলে দাম শুরু হবে ১০০০ টাকা থেকে। অনেকে ফ্রেমে থাকা কাচ পাল্টে নতুন কাচ ব্যবহার করে থাকেন। তবে দোকানে গিয়ে দরদামেও চৌকষ হতে হবে। চশমার বাজার বিশাল হলেও চশমার ফ্রেম ও অন্যান্য কাঁচামাল যেহেতু পুরোটাই আমদানি নির্ভর তাই সম্প্রতি ফ্রেম ও গ্লাসের দাম বেড়েছে।
কোথায় পাবেন চশমা
ঢাকায় বিভিন্ন ধরনের স্টাইলিশ ফ্রেম কিনতে নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, পল্টন, মালিবাগ, বেইলি রোড, মিরপুর-১, ফার্মগেট, ধানমন্ডির বিভিন্ন শপিংমল, উত্তরা ও গুলশানে যেতে পারেন। তবে যেখানে একসঙ্গে অনেকগুলো চশমার দোকান আছে সেখান থেকে কেনাই ভালো। তাহলে সহজে বাজারের দরদাম এবং মান যাচাই করা যায়।
Comments