ইসির সেই জয়নাল এবার জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতিতে

জয়নাল
জয়নাল আবেদীন। ছবি: সংগৃহীত

জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জাতীয় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও তাদের এনআইডি কার্ড পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন। গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকার করেছেন কীভাবে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে বাসায় বসেই ভোটার করেছিলেন রোহিঙ্গাদের।

জবানবন্দিতে কীভাবে রোহিঙ্গাদের ভুয়া এনআইডি তৈরি করা হতো কোন কোন পদস্থ কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের নাম এবং যারা সার্ভার পরিচালনা করতেন এবং সার্ভারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এনআইডির প্রাথমিক কাজগুলোতে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কারা ছিলেন তা জানিয়েছিলেন জয়নাল।

নির্বাচন কমিশনার কর্মকর্তার করা মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকলেও জামিনে বের হয়ে আবার সেই একই পথে জয়নাল। এবার জাতীয় জন্মসনদ সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে অবৈধভাবে জন্মসনদ দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপির) কাউন্টার টেররিজম বিভাগ।

গতকাল সোমবার রাতে জয়নালকে নগরীর লালদীঘি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, জন্মসনদ জালিয়াতি চক্রের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে জয়নালের। গত ৮ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে প্রায় ৫০০ এর মতো জন্মসনদ ইস্যু করে একটি চক্র। এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসে চসিক। পরে এই ঘটনায় নগরীর খুলশী থানায় মামলা হয়। কাউন্টার টেররিজম মামলা তদন্ত করতে গিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি এক কিশোরসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পতেংগা এলাকা থেকে। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়েই এবার জয়নালের সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেলেও জন্মসনদ জালিয়াতি চক্রের সাথে যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গাসহ অন্যদের জন্মসনদ দিয়ে আসছিল জয়নাল ও চক্রটি।

কাউন্টার টেররিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশার আসিফ মহিউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জয়নালের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুলশী থানার মামলায় পতেংগা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ৪ ব্যক্তির একজনের জবানবন্দিতে জয়নালের সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে। জয়নালের ফোনে বিকাশের লেনদেনের প্রমাণ এবং রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য অনেকের জন্মসনদ পাওয়া গেছে।'

'এর আগে রোহিঙ্গা এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় কোতয়ালী থানায় করা মামলায় জয়নাল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জালিয়াতি চক্রের সাহায্যে জন্মসনদ করতে জয়নাল ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা করে নিতেন,' বলেন আসিফ মহিউদ্দিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাউন্টার টেররিজমের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন 'ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে গেলে দরকার হয় জন্ম সনদের। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ডিভাইস ব্যবহার করেই তখন ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করত জয়নালের সিন্ডিকেট। এখন বিভিন্ন কাজে জন্মসনদের ব্যবহার বাড়ায় দালালের মাধ্যমে জয়নালের কাছে রোহিঙ্গাসহ অন্যরা আসত। আর আগের সেই সিন্ডিকেটসহ একাধিক চক্রের মাধ্যমে সরাসরি সার্ভার থেকে জন্মসনদ ইস্যু করেছেন জয়নাল।'

'এই ৪ জনের মাধ্যমেই জয়নাল বেশ কিছু জন্মসনদ ইস্যু করেছে। মূলত গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে এই কাজ চলে। বিকাশের লেনদের তথ্য পেয়েছি আমরা,' বলেন সেই পুলিশ কর্মকর্তা।

জয়নাল আবেদীনের বাড়ি জেলার বাঁশখালীর দক্ষিণ জলদীর আশকরিয়াপাড়ায়। ২০০৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে যোগ দেন জয়নাল।

জয়নালের বিরুদ্ধে দুদকসহ চারটি মামলা রয়েছে যা আদালতে বিচারাধীন।

আদালতে দায়ের করা দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৫ হাজার ৯৬০ টাকা বেতন স্কেলে চাকরিতে ঢোকেন জয়নাল। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি ১৩ হাজার ৯০০ টাকা বেতন পেতেন। চাকরি থেকে জয়নাল পান ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৯০০ টাকা। সাংসারিক ব্যয় ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫২০ টাকা বাদ দিলে তার কাছে থাকার কথা ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে জয়নাল ও তার স্ত্রীর নামে পাওয়া গেছে ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ৭৬৩ টাকার সম্পদ। এর মধ্যে রয়েছে বাঁশখালীর আশকরিয়া এলাকায় জয়নাল ও তার স্ত্রীর নামে কেনা ৭ শতক জমির ওপর পাঁচতলা ভবন, যা নির্মাণে ৬১ লাখ ২৬ হাজার ৮৪১ টাকা খরচ হয়।

নগরের পাঁচটি ব্যাংক হিসাবে স্বামী–স্ত্রীর নামে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪৮ টাকা থাকার তথ্য পায় দুদক।

এনআইডি জালিয়াতি ধরা পড়ে ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট। সেদিন লাকী নামের এক নারী চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে স্মার্ট কার্ড তুলতে গেলে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, ওই নারী রোহিঙ্গা এবং টাকা দিয়ে এনআইডি করিয়েছেন। এরপরে একে একে বেরিয়ে আসে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা। গ্রেপ্তার করা হয় জয়নালসহ কয়েকজনকে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh welcomed 20 percent US tariff

Bangladesh gains edge after US tariff cut

Trump admin has reduced tariffs on Bangladeshi goods from 35% to 20%, a move expected to strengthen the country’s competitiveness against rivals such as India and Vietnam

8h ago