শীতে খাদি বা খদ্দর

ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

শীতে প্রকৃতি রুক্ষ হলেও পোশাকের রঙে থাকে উজ্জ্বলতা। অনেক ধরনের পোশাক পরা যায় এ সময়। তাই এই সময়টা ফ্যাশনের জন্য বেশ উপযুক্ত। তবে শুধু ফ্যাশন নয় বরং ফ্যাশনকে মাথায় রেখে শীতের কাপড় হওয়া উচিত এমন, যা প্রতিদিনের ব্যবহার ও যে কোনো অনুষ্ঠানে খুব সহজেই মানিয়ে যায়। এদিক থেকে শীতে মোটা খাদি কাপড়ের রয়েছে আলাদা চাহিদা।

ঐতিহ্যের খাদি এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় আরও বর্ণিল। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদি কাপড়ে এসেছে ভিন্নতা, কিন্তু তাই বলে হারিয়ে যায়নি আভিজাত্য। অমসৃণ থেকে মসৃণ হয়েছে টেক্সচার। এবারের শীতে খাদি হয়ে উঠেছে ফ্যাশন প্রিয়দের পছন্দের কাপড়। 

খাদি কাপড়ের সুতা তৈরি থেকে তাঁতে কাপড় বোনা—পুরো প্রক্রিয়া হয় হাতে। খাদি কাপড়ের মূল বৈশিষ্ট্য এটিই। পাঞ্জাবি আর চাদরের বাইরেও খাদি কাপড় দিয়ে বৈচিত্র্যময় পোশাক বানানো সম্ভব, সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন এ দেশের ডিজাইনাররা। শীতের পোশাকে চাদর-শালের পাশাপাশি জ্যাকেট, কোট, ব্লেজার, হুডিরও চাহিদা বেড়ে যায়। তাই খাদি কাপড়ে এসব পোশাকও তৈরি হচ্ছে।

নতুন ধরনের এসব পোশাকে ফ্যাশন ট্রেন্ডে শীতের পোশাকে বড়সড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এ বছর হালকা শীতের পোশাক প্রাধান্য পেয়েছে। একটা সময় দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতে শীতের খাদি পোশাক নানা ধরনের চাদর ও শালেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বছর কয়েক ধরে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ নানা ধরনের শীতের পোশাক নিয়ে এসেছে। খাদি কাপড়ে নতুন কাট এবং লুকের পোশাক জায়গা করে নিয়েছে তরুণদের মনে।

খাদি পরিবেশবান্ধব কাপড়। একে বলা হচ্ছে 'ফিউচার ফেব্রিক'। চরকায় যে খাদি হয় সেই সুতা কিছুটা মোটা হয়। শীতের সময় হাতে বোনা মোটা খাদি কাপড়ের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। খাদি কাপড়ের জ্যাকেট, কোট, ব্লেজার, হুডি, পঞ্চ ও ক্রেপ চলছে ট্রেন্ডে। এবার শীতের পোশাকে মূলত ক্যাজুয়াল ওয়্যার প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। ডাই করে খাদির জমিনে আনা হচ্ছে নতুনত্ব। সাদা রঙের খাদিতে ভেজিটেবল, কেমিক্যালসহ নানা রঙের ডায়িং হচ্ছে।

দেশে এখন খাদি নিয়ে কাজ করছেন অনেকেই। অনেক নামকরা ব্র্যান্ড খাদিকে কেন্দ্র করে নানা পোশাক বানাচ্ছে। অনলাইনেও রয়েছে বেশ কিছু পেইজ যারা খাদি কাপড়কে তুলে ধরছে ভিন্নভাবে, দিচ্ছে নতুন মাত্রা। মেয়েদের ভিন্ন স্টাইলের ব্লেজার, ওপেন ফ্রন্ট ওভার কোট, জ্যাকেট, রিভারসেবল জ্যাকেট, ফুল লেংথ কটি সবই তৈরি হচ্ছে খাদি কাপড়ে।

এমন একটি অনলাইন পেইজ 'খাদি'র স্বত্বাধিকারী ফাতেমা তুজ জোহরা নুভিয়া বলেন, 'এ বছর চাদর এবং জ্যাকেট সবচেয়ে এগিয়ে। অফ হোয়াইট, সাদা, হলুদ, মেরুন রঙের দিকে এবারের ঝোঁক বেশি।'

এখন খাদি পোশাকের ডিজাইনে ফোক আর্ট, বাংলাদেশের আবহমান কালের চিত্র ফুটিয়ে তোলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। নানা ধরনের পটচিত্রে নতুন রূপ নিচ্ছে খাদি। সবাই দারুণ পছন্দও করছেন এই পোশাকগুলো।

বর্তমানে পালাজ্জো ও খাদির কুর্তা বেশ ট্রেন্ডিং। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের জন্যও রয়েছে আরামদায়ক খাদির কুর্তা ও প্যান্ট।

নুভিয়া জানান, যেহেতু নতুন প্রজন্ম ফোক আর্ট বা আবহমান কালের চিত্র খুব একটা জানতে পারে না তাই তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে খাদির মাধ্যমে তুলে ধরতে চান ঐতিহ্য।

সত্যিই তো! ব্যাপারটা যখন ঐতিহ্যের, তখন খাদি কাপড়ের থেকে ভালো আর কী হতে পারে?

Comments

The Daily Star  | English

Shutdown is another economic peril

Vowing to continue an indefinite work stoppage and stage a protest march on tax offices, the NBR Reform Unity Council has intensified its demands

9h ago