ভারতে চিকিৎসাধীন এসিডদগ্ধ মেয়ে, বাবা-মা যেতে পারছেন না টাকার অভাবে

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

গত বছর ২ আগস্ট রাতে তার ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যাওয়ার পর কয়েক হাসপাতাল ঘুরেও আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা নিতে পারেননি তিনি।

বর্তমানে ভারতে ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে আছেন পটুয়াখালীর এসিড দগ্ধ সেই কলেজ শিক্ষার্থী (১৭)।

মেয়েকে হাসপাতালে একা ফেলে চিকিৎসার খরচ জোগাতে বাংলাদেশে এসেছিলেন তার বাবা-মা। কিন্তু টাকার ব্যবস্থা করতে না পারায় এখনো ভারতে ফিরতে পারেননি তারা।  

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই কিশোরী সাহায্য চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে পটুয়াখালীর পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাইদের সঙ্গে একই এলাকার প্রতিপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাইরা তার ওপর এসিড নিক্ষেপ করেন।

পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হোয়াটসঅ্যাপে ভারতের ভেলোরে সিএমসি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এসিড দগ্ধ এক কিশোরী ফোন করেন। তিনি জানান, ৩ মাস আগে মা-বাবা তাকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যান। এর ৩ সপ্তাহ পর তার বাবা রাজা গাজী দেশে ফিরে আসেন। ৩ দিন আগে তার মা আকলিমা বেগমও চলে আসেন। মেয়েটি এখন হাসপাতালে একা প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছেন।'

রাজা গাজী পটুয়াখালী সদর উপজেলার গেঁড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা এবং পেশায় তিনি কৃষক। এসপি বলেন, 'আমরা রাজা গাজীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

ভুক্তভোগী ওই কিশোরী পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

হোয়াটসঅ্যাপে ওই কিশোরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'গত বছর ২ আগস্ট রাতে আমার ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হলে আমার মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। এরপর আমাকে প্রথমে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।'

পরে ব্র্যাকের সহযোগিতায় এসিড সারভাইভাল ইনস্টিটিউটে কিছুদিন তার চিকিৎসা হয়। এরপর তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।

ঢাকায় তার চিকিৎসার জন্য ২০ লাখ টাকা লাগবে বলে চিকিৎসকরা জানালে তার বাবা তাকে বাড়ি নিয়ে যান বলে জানান ওই ভুক্তভোগী।

যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকলে ৩ মাস আগে তার বাবা রাজা গাজী ও মা আকলিমা বেগম তাকে ভারতে নিয়ে ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসা খরচও তার কৃষক বাবার পক্ষে চালানো সম্ভব হচ্ছিল না।

তার চিকিৎসার জন্য আরও ৮০ হাজার রুপি প্রয়োজন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তাই ভারতে আসার ৩ সপ্তাহ পরই চিকিৎসার খরচ জোগাতে তার বাবা দেশে চলে আসেন।

'বাবা আর টাকা না পাঠানোর কারণে আমার মায়েরও এখানে থাকা কঠিন হয়ে যায়। তাই ৩ দিন আগে মা দেশে চলে গেছেন,' ওই কিশোরী বলেন। 

জানতে চাইলে ভুক্তভোগীর বাবা রাজা মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি একজন গরীব কৃষক। সামান্য জমি চাষ করে সংসার চালাই। মেয়ের চিকিৎসার টাকা সংগ্রহ করতে দেশে এসেছি। এখনো টাকা সংগ্রহ করতে পারিনি। এদিকে ৩ মাসে আমার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে, তাই চাইলেও এখন সেখানে যেতে পারছি না।'

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, গত বছরের ২ আগস্ট এসিড নিক্ষেপের ঘটনার পর ওই কিশোরীর চাচাতো ভাই এনায়েত গাজীকে আসামি করে ভুক্তভোগীর খালা রেবেকা বেগম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে এনায়েত গাজী ও রাসেল গাজী- এই দুজনের বিরুদ্ধে গত বছর ১৫ অক্টোবর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারীর কর্মকর্তা এস আই ইব্রাহিম। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।

Comments