মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অমূলক: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অমূলক। গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথায় কত টাকা দুর্নীতি হয়েছে তা স্পষ্ট করে বলতে হবে। তাহলে তিনি এর জবাব দেবেন।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এমন কোনো শক্তি তৈরি হয়নি যে আওয়ামী লীগকে উৎখাত করতে পারে।

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য নির্ধারতি দিন ছিল আজ। প্রধানমন্ত্রীকে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন মোকাব্বির খান। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকটের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই কেবল দায়ী নয়, অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয়ও আছে। আর্থিকখাতে বিশৃঙ্খলা, মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাট এবং বিদ্যুতখাতে কুইক রেন্টালের ইনডেমনিটি এই গুলো অনেক কিছুই দায়ী। এর ফলাফল কী হয়েছে? ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা আজ ‍দুর্বিষহ।

মোকাব্বির বলেন, বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা নিয়ে সাধারণ মানুষ খুবই আতঙ্কিত। সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অংকটা বলেনি। কারণ এটি বললে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হবে। তিনি জানতে চান নির্বাচনী বছরে  জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হবে না- এই বিষয়ে আশ্বস্ত করা হবে কি না। আর বিগত বছরে ইনডেমনিটির সুযোগ নিয়ে যেসব কুইক রেন্টাল হাজার হাজার কোটি টাকা ‍মুনাফা লুটেছে তাদের ওপর ৫০ শতাংশ উইন্ডফিল্ড ট্যাক্স আরোপ করা হবে কি না।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'মনে হচ্ছে আমাদের সংসদ সদস্য বিরোধী দলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যে সমস্ত অভিযোগ তিনি এনেছেন তা সম্পূর্ণ অমূলক। তিনি মেগা প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছেন। এই মেগা প্রকল্পের সুবিধাভোগী কারা? এদেশের সাধারণ মানুষ। এই মেগা প্রকল্প অন্য কোনো সরকার করতে পারেনি, আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করেছি। মেট্রো রেল- এটাও সাধারণ মানুষের যোগাযোগের জন্য। মেট্রো রেলে চড়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অল্পসময়ে আসতে পারছে স্বল্প খরচে। এটা সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। মাননীয় সংসদ সদস্য অনেক অর্থশালী- সম্পদশালী, গাড়িতে চড়েন- ওনার এসব সমস্যা জানার কথা নয়।'

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, 'মাননীয় স্পিকার আপনার মাধ্যমে মাননীয় সম্পূরক প্রশ্নকর্তাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, কোথায়, কত দুর্নীতি হয়েছে, সেই কথাটা তাকে এখানে স্পষ্ট বলতে হবে। যার জবাব আমি দেব।'

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল।  তারা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার ফেডারেল কোর্টের মামলার রায়েই বলা হয়েছে- সব অভিযোগ মিথ্যা। কোনো অভিযোগ সত্য নয়, সব ভুয়া। দুর্নীতি যদি সত্যিই হতো তাহলে এত অল্প সময়ে এসব প্রকল্পের কাজ কি শেষ হতো?

মোকাব্বির খানকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'মাননীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। ওনার একটা সেকেন্ড হোমও আছে। সেই সেকেন্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম কত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে? সেখানে বিদ্যুতের দাম দেড়শ পার্সেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ভোগ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন বিদ্যুত সাশ্রয় করা হয়। নির্দেশনা নিয়ে তা মনিটরিং করা হয়। নিয়মের ব্যত্যয় হলে জরিমানা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সেই অবস্থায় নয়।'

বিদ্যুৎ খাতে রেন্টাল, কুইক রেন্টালে যাওয়ার কারণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো করার কারণে মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখানে দুর্নীতি হলে এত বিদ্যুত দিতে পারার কথা ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যেখানে বড় বড় মহারথিরা আমাদের দুর্নীতির খোঁজ পায়নি, সেখানে কিছু লোক ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো বলেই যাচ্ছে কুইক রেন্টাল, কুইক রেন্টাল। সব বিদ্যুত বন্ধ করে দেয়া হতো এখন! আওয়ামী লীগ সরকার এসে যতগুলি বিদ্যুত কেন্দ্র করেছে সেই সবগুলি যদি বন্ধ করে দিই কী অবস্থা হবে আপনাদের? বলেন? কয়েকদিন মাত্র লোডশেডিং দিয়েছিলাম তাই চারিদিকে হাহাকার। সেই লোডশেডিং যাতে না হয় সেজন্য কুইক রেন্টাল আবার চালু রাখতে হয়েছে। নিজেরা ভোগ করবেন আর বলার সময়ে অভিযোগ করবেন। এটা মেনে নেয়া যায় না।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'যারা এর পরে বেশি বলবেন তাদের বিদ্যুত চাওয়াটা বন্ধ করে দেবো। তখন দেখি কী হয়?'

সম্পূরক প্রশ্নে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আজকে কিন্তু ১/১১। দেশের যে পরিস্থিতি আমরা জানি, আমাদের দেশে প্রজ্ঞাবান নেতা আছেন, অনুধাবনের ক্ষমতা যে ক্ষমতা- এক এগারো আসবে না আবার। তবুও আমার জিজ্ঞাসা, সবপক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে পা বাড়ানোর বোধ হয় এখনই সময়। আপনি কি মনে করেন?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সমঝোতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি ফখরুল ইমামকে না ঘাবড়ানোর পরামর্শ দেন।

বিএনপির অতীতের আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা সরকারে যখন আছি, জনগণের জানমাল রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। এমন কোনো শক্তি তৈরি হয়নি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে পারে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ, খালেদা জিয়া সবাই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক গভীরে।

বিএনপির দুঃশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, ভুয়া ভোটার সৃষ্টির কারণে এক এগারো এসেছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টীর সংসদ সদস্যের উদ্দেশে বলেন, 'ঘাবড়ানোর কিছুই নেই, একটুকুও।'

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

3h ago