যমুনা সার কারখানা, না ‘দূষণের কারখানা’

যমুনা সার কারখানা
যমুনা সার কারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে এর আশপাশের এলাকা। ছবি: শহিদুল ইসলাম নিরব/স্টার

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সার কারখানা লিমিটেড যেন পরিবেশ দূষণের 'কারখানায়' পরিণত হয়েছে।

কারখানার আশপাশের ৫ গ্রামের অন্তত ১২ হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত কারখানা থেকে বাতাসে নির্গত বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু, এর প্রতিকারে কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালে যমুনা সার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই এটি পাশের যমুনা ও এর শাখা নদনদীসহ জলাশয়গুলো দূষণ করে আসছে। প্রতি বছর এসব নদী ও জলাশয়ে মরে ভেসে ওঠে মাছ। পাশাপাশি অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে পাশের গ্রামগুলোতে জমির ফসল ও গাছপালা মরে যাচ্ছে।

কারখানা সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, কারখানাটি নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে তরল অ্যামোনিয়া গ্যাস নির্গত করে। যা বছরে ১ বা ২ বার ব্যাপকহারে বিষক্রিয়া ছড়ায়। ইউরিয়া সার মিশ্রিত বর্জ্য-পানি আশেপাশের গর্ত, পুকুর ও নদীকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। এতে এলাকাবাসী নলকূপের পানিও না ফুটিয়ে ব্যবহার করতে পারছেন না।

যমুনা সার কারখানা
যমুনা সার কারখানার বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামে। ছবি: শহিদুল ইসলাম নিরব/স্টার

কৃষকরা ডেইলি স্টারকে জানান, কারখানার আশেপাশের জমিগুলোয় ফসল উৎপাদনে তাদের চরম সংকটে পড়তে হয়। কারখানার থেকে নির্গত অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে ফসলের ক্ষতি হয়, কিন্তু কৃষক এর কোনো ক্ষতিপূরণ পান না।

শিক্ষার্থীরা ডেইলি স্টারকে জানান, যখন কারখানাটি বিপুল পরিমাণে গ্যাস ছাড়ে, তখন নির্গত গ্যাসের কারণে আশেপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে থাকতে পারে না। চক্ষু রোগ, চর্মরোগসহ নানান ব্যাধী সেখানে সাধারণ বিষয়।

তারাকান্দি গ্রামের মরিয়ম বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে শাক-সবজি চাষ করতে পারি না। মধ্যরাতে উচ্চশব্দের জন্য ঠিকমতো ঘুমও হয় না।'

চেচিয়াবান্দা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ হানিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই কারখানা থেকে জমিতে বিষাক্ত পদার্থ ছেড়ে দেওয়ায় চাষাবাদ করতে পারছি না।' তিনি কারখানার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

যমুনা সার কারখানা
যমুনা সার কারখানার বর্জ্য অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। ছবি: শহিদুল ইসলাম নিরব/স্টার

কারখানার বাইরে নির্গত অ্যামোনিয়া গ্যাস মানবদেহ ও কৃষিজমির জন্য খুবই ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন সরিষাবাড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের বিষাক্ত বাতাসে কেউ দীর্ঘসময় নিঃশ্বাস নিলে, এই গ্যাস কারো চোখ-মুখে প্রবেশ করলে তা শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।'

জামালপুর পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, 'যমুনা সার কারখানায় দূষণবিরোধী প্রযুক্তি স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।'

জামালপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যমুনা সার কারখানা থেকে এলাকায় পরিবেশ দূষণের অভিযোগ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও তা জানানো হয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিবেশ দূষিত না করতে সতর্ক করেছেন।'

যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল্লাহ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক সময় কারখানার প্রয়োজনে অ্যামোনিয়া ছাড়তে হয়। এটি সাধারণ প্রক্রিয়া। তবে দূষণবিরোধী প্রযুক্তি স্থাপনের বিষয়টি বিসিআইসি বা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।'

Comments

The Daily Star  | English

No sharp rise in crime, data shows stability: govt

The interim government today said that available data does not fully support claims of a sharp rise in crimes across Bangladesh this year

15m ago