হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে উত্তরের মানুষ
অন্যান্য বছরের তুলনায় দেশের উত্তরে এবার শীতের প্রকোপ কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও গতকাল থেকে হিমালয়ের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষ।
এতে ব্যাহত হচ্ছে তাদের প্রতিদিনের কার্যক্রম। বিশেষ করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। যাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভর করে সংসার চালাতে হয়।
আজ শনিবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও নওগাঁর বদলগাছীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল বদলগাছীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং তেঁতুলিয়ায় ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল এবং আজ সকালে এই ২ জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ- কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালকরা শরীর কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে কাজ করছেন
সবজি খেতে কাজ করা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুণ গ্রামেরগ হাসান আলী বলেন, 'ঠান্ডা হাওয়ার কারণে খেতে কাজ করা খুব কষ্টসাধ্য। তবুও কাজ করতে হবে। না হলে খাব কী।'
একই উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের বুধারু বর্মণ বলেন, 'এমন শীতে মাঠে কাজ করা কঠিন ব্যাপার। এবার কিছুটা দেরিতে শীত এসেছে। ২ দিন আগেও দিনের বেলায় পর্যাপ্ত রোদের কারণে ঠান্ডার মাত্রা কম ছিল। কিন্তু, গতকাল থেকে সকালের দিকে কুয়াশা কম থাকায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে।'
রিকশাচালক দীন মোহাম্মদ বলেন, 'উত্তর থেকে ধেয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় দিনের বেলাতেও রিকশা চালানো যাচ্ছে না। তারপরও চালাতে হচ্ছে, কারণ আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।'
এছাড়া, অন্যান্য বারের মতো শীতের মৌসুমে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক রোগীর ভিড় বেড়েছে।'
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিবুল আলম চয়ন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৮৭ জন শিশু রোগী ভর্তি আছে। এছাড়া, ৪০৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক রোগী আছে, যাদের বেশিরভাগই শীতজনিত অথবা শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণজনিত রোগে ভর্তি আছেন।'
সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ বলেন, 'এমনিতে শীতকালে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ে। কারণে এসময় শিশু ও বয়স্ক মানুষের শ্বাসনালীতে সহজে সংক্রমণ হয়। যেসব শিশু কিংবা বয়স্ক মানুষ শ্বাস কষ্টে ভোগেন তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এখনো করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আছে।'
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, 'এ পর্যন্ত পাওয়া ২৮ হাজার কম্বলের মধ্যে জেলায় ২৩ হাজার শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে আরও ৫০ হাজার কম্বল এবং স্থানীয়ভাবে শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য ২০ লাখ টাকা চেয়ে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।'
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, জেলায় এ পর্যন্ত ২২ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরেও বিভিন্ন বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় কম্বল বিতরণ করছে। কম্বল পেলে আরও বিতরণ করা হবে।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. আব্দুল আজিজ জানান, রবি শস্যের জন্য এখনো তেমন বিরূপ আবহাওয়া দেখা দেয়নি। বরং গম, সরিষা আবাদের এই সময়ে ভাল ফলনের জন্য শীত প্রয়োজন।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যেবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ জানান, তেঁতুলিয়ায় ও বদলগাছীতে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আকাশে মেঘ কমে যাওয়া ও ঘন কুয়াশমুক্ত আবহাওয়ায় উত্তরের শীতল বাতাস নির্বিঘ্নে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শীতের মাত্রা বেড়েছে।
আগামী ১ সপ্তাহ এমন আবহাওয়া থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
Comments