চট্টগ্রামে জমজমাট বিজয় মেলা

বিজয় মেলায় একটি অলঙ্কারের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

বন্দরনগরীর কাজির দেউড়ির আউটার স্টেডিয়ামে ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। প্রতিদিন মেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লেগে আছে। মেলা উপভোগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা করছেন তারা মেলা থেকে।

১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা এ বছর ৩৪ বছরে পা রেখেছে। গত ৩৪ বছর ধরে প্রতি বছর একই সময়ে একই স্থানে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। 

মেলা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন পরিষদের চেয়ারম্যান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

আয়োজকরা জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের স্মরণে ১৯৮৯ সালে বন্দর নগরীতে প্রথম এ মেলার সূচনা হয়। এই উদ্যোগের পর এখন সারা দেশে মর্যাদাপূর্ণভাবে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

চট্টগ্রামে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে মেলার স্টলগুলোতে সাধারণত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য এবং খাদ্যসামগ্রীর পসরা সাজানো থাকে। পাশাপাশি আছে বিনোদন শো ও নাগরদোলা। 

বিজয় মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত এই মেলা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বলে জানান পরিষদের কো-চেয়ারম্যান বদিউল আলম।

গৃহ সাজসজ্জার সরঞ্জামের দোকান। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

এই মেলার উদ্যোগের কথা স্মরণ করে মেলার আহ্বায়ক ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে আমরা এই বিজয় মেলার সূচনা করেছিলাম।'

'মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় উপলক্ষে আমরা যখন চট্টগ্রামে মেলার সূচনা করি, তখন এটি ছিল দেশে প্রথম এই ধরনের মেলা। আমাদের উদ্যোগের পর দেশের অন্যত্রও এখন বিজয় মেলার আয়োজন করা হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

প্রথম বিজয় মেলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'একদল যুবক যারা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন, তারাই ১৯৮৯ সালের ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে প্রথম বিজয় মেলার উদ্বোধন করেন।'

ফারুক-ই-আজম বলেন, 'সে বছর মেলায় ১৪ ডিসেম্বর শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে মেলা কমিটির পক্ষ থেকে শহীদ জননী হিসেবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।'

সরেজমিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের স্টলে বিক্রি হচ্ছে ব্যাগ, নারী ও শিশুদের পোশাক, স্যান্ডেল, সিরামিক, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্য, খেলনা, প্রসাধনী, গৃহস্থালি সামগ্রী, গহনা, শাল, কুটির সামগ্রী, ডোরম্যাট, শোপিস, পারফিউম ইত্যাদি। 

গৃহস্থালির প্রায় সব জিনিসপত্র এই মেলায় পাওয়া যায় বলে শহর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে সমাজের সব স্তরের মানুষ এই মেলায় আসেন।

নয় বছরের ছেলে তন্ময় বিশ্বাস তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মেলায় এসেছিল। মেলায় ঘোরার সময় এক স্থানে সে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে। তার সামনে একটি স্টলে একজন যাদুকর যাদুর কৌশল দেখাচ্ছেন।

আসলে তিনি যাদুকর ছিলেন না। তন্ময় যাদুর সামগ্রীর একটি স্টলের একজন সেলসম্যানকে যাদুকর মনে করেছিল। সেলসম্যান দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য এই যাদুর সরঞ্জাম দিয়ে যাদু দেখাচ্ছিলেন। 

ফুলের রং বদলানো হচ্ছিল, সাদা কার্ডে মুহূর্তেই ছাপানো অক্ষর দেখা যাচ্ছিল এবং সেলসম্যানের কৌশলে বইয়ের রঙ পরিবর্তন হচ্ছিল। স্টলে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন যাদুর সরঞ্জাম।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তন্ময় ৪০০ টাকায় একটি যাদুর সরঞ্জাম কিনল। ডেইলি স্টারকে সে জানালো, 'আমি খুব খুশি। বাবা আমাকে যাদুর এই সরঞ্জামটি কিনে দিয়েছেন। সহপাঠীদের এই যাদুটি দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেবো।'

কড়াই (ফ্রাইপ্যান), রুটি বানানোর জন্য চলন্ত ময়দার কাঠের থালা, জলচৌকি (কাঠের টুল), বটিসহ রান্নাঘরের জিনিসপত্র বিক্রির একটি স্টলের সামনে নারীদের ভিড় দেখা যায়।

ওই দোকানে হাতুড়ি, যাঁতি, দা, পাটা ও হামানদিস্তাও পাওয়া যাচ্ছিল। একটি বটি ২৫০-৬০০ টাকা, একটি দা ৩০০-৫০০ টাকা, একটি কড়াই ৩৫০-৬০০ টাকা, বটি ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতারা পণ্য যাচাই-বাছাই করে তারপর দামের জন্য দর কষাকষি করছিলেন।

নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা রাশেদা আক্তারকে হামানদিস্তা ও বটি কিনতে দেখা গেছে। তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, তার শাশুড়ির পান-সুপারি খাওয়ার অভ্যাস আছে। বেশিরভাগ দাঁত পড়ে যাওয়ায় শাশুড়ির একটি হামানদিস্তার প্রয়োজন।

তিনি ক্রোকারিজ ও অ্যালুমিনিয়ামের আরও কিছু গৃহস্থালির জিনিসপত্র কিনছিলেন।

সিরামিক স্টলের বিক্রয়কর্মী মনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ হাজার টাকার জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে। স্টলে একটি বড় থালা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, ছোট থালা ১৫০ টাকা, চামচ ৫০ টাকা এবং বড় বাটি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মেলার মাঠের এক কোনে খোলা আকাশের নিচে হস্তশিল্প ও কুটির সামগ্রী বিক্রেতা আবদুর রহমানকে দেখা যায় পণ্য বিক্রি করতে। 

তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, ডোরম্যাট, কার্পেট ও ফ্লোর ওয়াইপারসহ বেশিরভাগ পণ্য তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। একটি ডোরম্যাট ৩০০ টাকায় এবং একটি ফ্লোর ওয়াইপার ৭০ টাকায় বিক্রি করেন। প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার টাকার বেচাকেনা হচ্ছে তার।

Comments

The Daily Star  | English
Chief Adviser Muhammad Yunus returns after COP29

Chief adviser returns home after joining COP29 in Baku

Chief Adviser Professor Muhammad Yunus returned home this evening wrapping up his Baku tour to attend the global climate meet Conference of Parties-29 (COP29)

2h ago