এটা একটা শিশু পার্ক
মুজগুন্নি শিশু পার্কটি সংস্কার করে আবার চালুর আশ্বাস দিয়ে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তা বন্ধ করে দেয় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। এরপর প্রায় ৪ বছর কেটে গেছে। পার্কের আধুনিকায়নের অগ্রগতি দেখা যায়নি।
খুলনা নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই শিশু পার্কটি বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের ৮টি পার্ক থাকলেও শিশুদের বিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।
জাতিসংঘ পার্ক, হাদিস পার্ক, নিরালা ও সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার পার্ক, সোলার পার্ক সারাদিন তরুণ-প্রবীণদের দখলে থাকে। শুধু খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্কটিতে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
২০০৭ সালে কেডিএ শিশুদের বিনোদনের জন্য মুজগুন্নি আবাসিক এলাকায় ৮ দশমিক ৬৭ একর জমিতে শিশু পার্ক প্রতিষ্ঠা করে। ওই বছরের ১৮ এপ্রিল পার্কটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসএস ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেয়।
আধুনিক খেলনার বৈচিত্র্য ও মনোরম পরিবেশের কারণে পার্কটি প্রাথমিকভাবে শিশুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
স্থানীয়দের দাবি, ২০০৯ সাল থেকে পার্কের পরিবেশ নষ্ট হতে থাকে। পার্কের ভেতরে অনৈতিক কার্যকলাপ, পার্কের সীমানায় অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নিয়ম লঙ্ঘন করে অন্যদের কাছে ভাড়া দেওয়া নানান অভিযোগের কারণে ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি কেডিএ পার্কটির ইজারা বাতিল করে।
এর ঠিক এক মাস পর কেডিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পার্কের ইজারাদারকে উচ্ছেদ করে পার্কের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে দেন। এরপর থেকে এটি বন্ধ আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দারোয়ান ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। পার্কের ভেতর কোনো স্থাপনা নাই। ভেতরটা ঘাস-আগাছায় ভরা। চারদিক ঝোপ-জঙ্গলে পূর্ণ। পার্কের পুকুরটি যেন মশার প্রজনন কেন্দ্র।
পার্কের মূল গেটে একটি বিশালাকার ডাইনোসরের প্রতিকৃতিটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। গেটের সামনে দোকানগুলো সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আগের সব রাইড বিক্রি বা পার্ক থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে। পার্কে শুধু ভাঙা টিনের ছাদের ঘর ছাড়া অন্য স্থাপনা নেই।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ সাজ্জাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিশুদের বিনোদনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা পার্কটি বছরের পর বছর সেবা দিতে পারছে না। এই পার্ককে ঘিরে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। এখানে মাঝেমধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো।'
'কেডিএ মুজগুন্নি আবাসিক এলাকায় গড়ে তুলেছে এই পার্কটি। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি উপেক্ষা করে পার্কটি ইজারা দিচ্ছে কেডিএ। এটি সবার জন্য বিনামূল্যে খুলে দেওয়া উচিত,' যোগ করেন তিনি।
শেখ সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, 'এ এলাকায় এমন কোনো স্থান বা বিনোদনের জায়গা নেই যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা সময় কাটাতে পারেন। স্থানীয়দের বিনোদনের কথা চিন্তা করে পার্কটি সবার জন্য খুলে দেওয়া উচিত।'
মুজগুন্নি এলাকার কাজী পাড়ার বাসিন্দা কাজী রোমান হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুজগুন্নি আবাসিকের আশেপাশে এক লাখেরও বেশি মানুষ বাস করছেন। তাদের জন্য তেমন কোন খোলা জায়গা নেই। পার্কটি সবার জন্য খুলে দেওয়ার দাবি জানাই।'
পার্কের একমাত্র নিরাপত্তা প্রহরী মো. ফারুক হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, '২৪ ঘণ্টা পার্কের পরিচর্যা করা অসম্ভব। মাদকসেবীরা পার্কে প্রবেশ করে। মাঝেমধ্যে বাইরের লোক এসে পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যায়।'
কেডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর পার্কের ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। যোগ্য প্রতিষ্ঠানের অভাবে ইজারা প্রক্রিয়া বাতিল হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কেডিএ আবার ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেয়। দরপত্রের শেষ দিন ছিল ১২ অক্টোবর।'
'দরপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'শেষ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ২ জন দরদাতা আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ দরদাতাকে পার্কটি ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেডিএ কর্তৃপক্ষ।'
কেডিএর পরিচালক (এস্টেট) মো. বদিউজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পার্কটি আধুনিক খেলনা দিয়ে সাজানো পরিকল্পনা আছে। দ্রুত পার্কটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।'
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ এলাকায় কোনো পার্ক না থাকায় শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষের বিনোদনের কোনো সুযোগ নেই।'
'পার্কটি দ্রুত চালুর দাবি জানাচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।
Comments