আর্জেন্টিনা বনাম ক্রোয়েশিয়া: প্রেডিকশন, একাদশ ও অন্যান্য রেকর্ড

আর মাত্র দুটি ধাপ, এরপরই অধরা সোনালী ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখার হাতছানি লিওনেল মেসির সামনে। ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘোচানোর মিশন আর্জেন্টিনার। ছেড়ে কথা বলবে না ক্রোয়েশিয়াও। ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারে তারাও। রাশিয়া বিশ্বকাপে মেসিদের হারানোর সুখস্মৃতি নিয়ে আরও একটি স্বপ্নের ফাইনালের দ্বারপ্রান্তে দলটি।

ম্যাচের ফলাফল জানা যাবে ম্যাচ শেষেই, তবে তার আগে কাগজে কলমে দুদলের সামর্থ্য ও সাম্প্রতিক ফর্মের আলোকে ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে হাজির আমরা। পাশাপাশি দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ, ফর্মেশনও তুলে ধরা হলো ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য-

কখন?

মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টা

কোথায়?

লুসাইল স্টেডিয়াম, লুসাইল

টিম নিউজ

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে দুই ফুলব্যাক মার্কোস আকুনা ও গঞ্জালো মন্তিয়েলকে নিষেধাজ্ঞার কারণে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। মিডফিল্ডার আলেহান্দ্রো গোমেজের খেলা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা, সামান্য চোট রয়েছে তার। তবে ম্যাচের গুরুত্ব বিবেচনায় বদলী হিসেবে দেখা যেতেও পারে সেভিয়া তারকাকে।

চোট কাটিয়ে সম্পূর্ণ ফিট না থাকায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পুরো ম্যাচ খেলতে পারেননি মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পল। এ ম্যাচে শুরু করার সম্ভাবনা থাকলেও পুরোটা খেলতে পারা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। আরেক তারকা আনহেল দি মারিয়াও সেরে উঠেছেন। ফলে শুরুর একাদশে তাকেও রাখতে পারেন স্কালোনি।

অন্যদিকে এসব দিক বিবেচনায় অনেকটাই নির্ভার থাকবে ক্রোয়েশিয়া। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই লড়াইয়ে পূর্ণশক্তির দলই পাচ্ছেন দালিচ। তার দলে নেই কোনো কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞা কিংবা চোট সমস্যা।

নজরে থাকবেন যারা

স্বপ্ন পূরণ থেকে আর মাত্র দুই ম্যাচ দূরে আছে লিওনেল মেসি। এই ম্যাচে তাই সর্বোচ্চ দিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়বেন তিনি, বলাই বাহুল্য। ছন্দময় ড্রিবলিং ও চুলচেরা পাসিং ধরে রাখতে পারলে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে ক্রোয়েশিয়া রক্ষণকে। সঙ্গে ইনজুরি কাটিয়ে শুরুর একাদশে ফিরতে পারলে এক্স-ফেক্টর হতে পারেন দি মারিয়াও। বড় ম্যাচে বরাবরই দূর্বার এ উইঙ্গার। তেমনটা হলে আরও শক্তিশালী হবে আলবিসেলেস্তেদের আক্রমণভাগ। দুই তরুণ তুর্কি হুলিয়ান আলভারেজ ও এঞ্জো ফার্নান্দেজের ওপরও বাড়তি নজর থাকবে ভক্তদের। গোলবারের প্রহরী এমিলিয়ানো মার্তিনেজের ওপরও থাকবে প্রত্যাশার চাপ।

ক্রোয়েশিয়ার সাফল্যের জন্য লুকা মদ্রিচকে খেলতে হবে জীবনের অন্যতম সেরা ম্যাচটি। আসর জুড়ে অবশ্য দারুণ ছন্দে রয়েছেন তিনি। আক্রমণ গড়ার পাশাপাশি গোল করার দিকেও নজর থাকবে রিয়াল মাদ্রিদ তারকার। ইভান পেরিসিচ গোলমুখে আরও নিখুঁত হতে পারলে বিপদে পড়তে পারে আর্জেন্টিনা। গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকোভিচের ওপর এই ম্যাচেও নির্ভর করবে অনেক কিছু।

সম্ভাব্য লাইন আপ

আর্জেন্টিনা: (৪-৩-৩) এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (গোলরক্ষক), নাহুয়েল মলিনা, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, নিকোলাস ওতামেন্দি, ক্রিস্তিয়ান রোমেরো, রদ্রিগো দি পল, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্তার, এঞ্জো ফার্নান্দেজ, লিওনেল মেসি, হুলিয়ান আলভারেজ ও আনহেল দি মারিয়া।

ক্রোয়েশিয়া: (৪-৩-৩) দমিনিক লিভাকোভিচ (গোলরক্ষক), জোস্কো গার্দিওল, দেজান লোভরেন, জসিপ জুরানোভিচ, বোর্না সোসা, লুকা মদ্রিচ, মাতেও কোভাচিচ, মার্সেলো ব্রোজোভিচ, ইভান পেরিসিচ, আন্দ্রেজ ক্রামারিচ ও মারিও পাসালিচ।

প্রেডিকশন

শক্তি ও ঐতিহ্যে এগিয়ে থাকবে আর্জেন্টিনাই। মেসি একাই গড়ে দিতে পারেন পার্থক্য। তার সঙ্গে তরুণরা জ্বলে উঠতে পারলে ভয়ঙ্কর আর্জেন্টিনাকেই দেখতে পারে ক্রোয়েশিয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ গাণিতিক ফুটবল খেলছে ইউরোপের দলটি। আসরে এখনও অপরাজিত তারা। তাদের রক্ষণ ভাঙতে হলে সেরাটা দেওয়ার বিকল্প নেই আলবিসেলেস্তেদের। তবে লড়াইটা যে হাড্ডাহাড্ডি হতে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সম্ভাব্য স্কোর:

আর্জেন্টিনা ১-১ ক্রোয়েশিয়া

টাই-ব্রেকার:

আর্জেন্টিনা ৪-৩ ক্রোয়েশিয়া

ম্যাচ ফ্যাক্টস

১. এখন পর্যন্ত পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া। সেখানে পিছিয়ে নেই কেউই, দুটি করে জয় আছে উভয় দলেরই। অপর ম্যাচটি হয়েছে ড্র।

২. বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুবার মুখোমুখি হয়েছে এই দুই দল। ১৯৯৮ সালে প্রথম লড়াই আলবিসেলেস্তেরা ১-০ গোলে জিতলেও সবশেষ মোকাবিলায় ২০১৮ বিশ্বকাপে ৩-০ গোলে হেরেছিলেন মেসিরা।

৩. এ নিয়ে ষষ্ঠবার বিশকাপের সেমি-ফাইনালে খেলছে আর্জেন্টিনা। তাদের চেয়ে বেশি সর্বোচ্চ আটবার সেমিতে উঠতে পেরেছে জার্মানি। তবে সেমি-ফাইনালে কখনোই হারেনি আর্জেন্টিনা। আগের ছয়বারই দলটি খেলেছে ফাইনালে।

৪. বিশ্বকাপে শেষ সাত ম্যাচে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা (তিনটি ড্র ও তিনটি হার)। সেটা এবার গ্রুপ পর্বে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়। তবে ড্র হওয়া দুটি ম্যাচে টাই-ব্রেকারে অগ্রগামী হয়েছে আলবিসেলেস্তেরাই।

৫. টানা দুটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার হাতছানি রয়েছে ক্রোয়াটদের সামনে। চতুর্থ ইউরোপীয় দল হিসেবে এ কীর্তির সামনে তারা। এর আগে ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে ইতালি, ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ সালে নেদারল্যান্ডস এবং ১৯৮২, ১৯৮৬ ও ১৯৯০ সালে পশ্চিম জার্মানি টানা খেলেছিল ফাইনালে। সবশেষ এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে ব্রাজিল। ১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০০২ সালে টানা বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলে সেলেসাওরা।

৬. পেনাল্টি শ্যুটআউটে শতভাগ সাফল্যের রেকর্ড ক্রোয়েশিয়ার দখলে। এখন পর্যন্ত চারবার টাইব্রেকারে গিয়ে প্রতিবারই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে দলটি।

৭. বিশ্বকাপে পেনাল্টি শ্যুটআউটে সেরা সাফল্য আর্জেন্টিনার। এখন পর্যন্ত ছয়বার এ ভাগ্য পরীক্ষায় নেমে পাঁচবার জিতেছে দলটি। একমাত্র হারটি ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে স্বাগতিক জার্মানির বিপক্ষে। 

৮. চলতি আসরে মেসি এখন পর্যন্ত ১৬বার গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন যা আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ফরাসি তারকা আঁতোয়া গ্রিজম্যান ১৭টি গোলের সুযোগ তৈরি করে আছেন এই তালিকার শীর্ষে। এছাড়া ৩২ দলের আর কোন খেলোয়াড়ই পারেননি ১১টির বেশি সুযোগ তৈরি করতে।

৯. এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার ছয়টি গোলে অবদান রেখে কিলিয়ান এমবাপের (সাতটি গোলে অবদান রেখেছেন) ঠিক পরেই আছেন মেসি।

১০. সৌদির বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হারের পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আর্জেন্টিনা। পরের চার ম্যাচে মাত্র তিন গোল হজম করেছে স্কালোনির শিষ্যরা।

১১. ব্রাজিলের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে মাত্র একবারই প্রতিপক্ষ গোলমুখে শট রাখতে সক্ষম হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। সেটা ছিল ব্রুনো পেতকোভিচের দেওয়া ১১৭ মিনিটের গোল।

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

9h ago