পর্তুগালকে বিদায় করে মরক্কোর ইতিহাস
প্রথমার্ধেই এক গোলের লিড পায় মরক্কো। ম্যাচের যোগ করা সময়ে এক খেলোয়াড় হন বহিষ্কার। কিন্তু তারপরও জমাট রক্ষণের দারুণ শৈলী গড়ে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে সে লিড। গড়ে নতুন ইতিহাস। প্রথম কোনো আফ্রিকান দল হিসেবে সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নিল মরক্কো।
দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে পর্তুগালকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারায় মরক্কো। ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন ইউসুফ এন-নেসিরি।
এই হারে সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো হয়তো বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেললেন। কারণ পরবর্তী বিশ্বকাপে তার বয়স ছাড়িয়ে যাবে ৪১। অথচ এদিন নতুন এক ইতিহাসই গড়েন এ তারকা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে কুয়েতের ফরোয়ার্ড বাদের আল-মুতাওয়ার ১৯৬ ম্যাচ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করেন তিনি। কিন্তু এমন কীর্তি গড়ার ম্যাচটি জয় দিয়ে রাঙাতে পারলেন তিনি।
এদিন অবশ্য বেঞ্চ থেকে শুরু করেন রোনালদো। দ্বিতীয়ার্ধের ৫১তম মিনিটে মাঠে নামেন। খেলেন প্রায় ৫০ মিনিট। দারুণ দুটি সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু পিছিয়ে থাকা দলটিকে উদ্ধার করতে পারেননি।
শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিয়ে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করে পর্তুগাল। কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ফরোয়ার্ডরা। তার উপর মরক্কান গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনোর অবিশ্বাস্য কিছু সেভও পিছিয়ে দেয় তাদের। ৭৩ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল পর্তুগিজরা। মোট শট নেয় ১২টি, যার ৩টি ছিল লক্ষ্যে। তবে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে সুযোগ অনেক তৈরি করেছিল মরক্কোও। একটি কাজে লাগাতে পারলেও তারচেয়েও সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন তাদের ফরোয়ার্ডরা।
ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই গোল দেওয়ার মতো সুযোগ পেয়েছিল পর্তুগিজরা। ব্রুনো ফার্নান্দেজের ক্রস থেকে জোয়াও ফেলিক্সের হেড মরোক্কান গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনো ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। পরের মিনিটে সুযোগ ছিল মরক্কোরও। কর্নার থেকে হাকিম জিয়েখের নেওয়া ক্রস ফাঁকায় হেড দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন এন-নেসিরি। কিন্তু লক্ষ্যে রাখতে পারেননি
১৩তম মিনিটে রাফায়েল গেরেইরোর শট এক মরোক্কান ডিফেন্ডার ব্লক না করলে বিপদে পড়তে পারতো দলটি। ২৬তম মিনিটে জিয়েখের নেওয়া ফ্রিকিক থেকে এন-নেসিরি ফের ফাঁকায় থেকে হেড নিয়েছিলেন। কিন্তু এবারও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। পাঁচ মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জোয়াও ফেলিক্সের ভলি এক খেলোয়াড়ের গায়ে দিক বদলে জালেই দিকেই যাচ্ছিল। কিন্তু একেবারে বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশ হতে হয় পর্তুগিজদের।
৩৪তম মিনিটে ইয়াহইয়া আত্তিয়াত-আল্লাহর কাটব্যাক থেকে সেলিম আমাল্লাহ ভালো শট নিতে পারলে গোল পেতে পারতো মরক্কো। কিন্তু উড়িয়ে মেরে নষ্ট করেন সে সুযোগ। ৪২তম মিনিটে গোল পেয়ে যায় মরক্কো। বাঁ প্রান্ত থেকে আত্তিয়াত-আল্লাহর ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় লাফিয়ে উঠে দুর্দান্ত এক হেডে এবার বল জড়াতে কোনো ভুল করেননি এন-নেসিরি।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে সমতায় ফিরতে পারতো পর্তুগাল। ডান প্রান্তের দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া ব্রুনো ফার্নান্দেজের শট বারপোস্টে লেগে বেরিয়ে গেলে গোল মিলেনি দলটির। তবে যোগ করা সময়ে ব্যবধান বাড়াতে পারতো মরক্কো। সুবর্ণ এক সুযোগ নষ্ট করেন আত্তিয়াত-আল্লাহ। আজেদিন অউনাহির কাছ থেকে বাঁ প্রান্তে অনেকটা ফাঁকায় পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিয়ে নষ্ট করেন সে সুযোগ।
৫০তম মিনিটে জিয়েখের নেওয়া ফ্রিকিক থেকে জাওয়াদ এল ইয়াকিমের হেড দারুণ দক্ষতায় পর্তুগিজ গোলরক্ষক দিয়াগো কস্তা না ঠেকালে ব্যবধান বাড়াতে পারতো মরক্কো। ৫৬তম পাল্টা আক্রমণ থেকে ভালো সুযোগ ছিল মরক্কোর। কিন্তু ফাঁকায় বল পেয়েও আকাশে মারেন অউনাহি। পরের মিনিটে বড় ধাক্কা খায় মরক্কো। ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন দলীয় অধিনায়ক রোমান সাইস।
৫৮তম মিনিটে সুবর্ণ এক সুযোগ নষ্ট করেন গনসালো রামোস। ওতাভিওর ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড নেন তিনি। ছয় মিনিট পর ডি-বক্সের সামান্য বাইরে থেকে নেওয়া ব্রুনো ফার্নান্দেজের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশা বাড়ে দলটির। ৭১তম মিনিটে ব্রুনোর ফ্রিকিকে বের্নার্দো সিলভা ঠিকভাবে পা লাগাতে পারলে সমতায় ফিরতে পারতো পর্তুগাল। ।
৮২তম মিনিটে তো অবিশ্বাস্য বুনো। জোয়াও ফেলিক্সের শট দুর্দান্ত দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান এ গোলরক্ষক। ৯১তম মিনিটে সমতায় ফেরানো দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন রোনালদো। তবে তার শট ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক বুনো। পরের মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে বহিষ্কার হন বদলি খেলোয়াড় ওয়ালিদ সেদিরা।
৯৬তম মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি নষ্ট করেন মরক্কোর জাকারিয়া আব্দুখলাল। পাল্টা আক্রমণ থেকে গোলরক্ষককে পেয়েও অবিশ্বাস্যভাবে কস্তার বরাবর শট নেন তিনি। তাতে ম্যাচে টিকে থাকে পর্তুগিজরা। পরের মিনিটে সমতায় ফিরতেও পারতো দলটি। রাফায়েল লিয়াওর ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় পেয়ে লক্ষ্যে হেড রাখতে না পারলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
Comments