দক্ষিণ কোরিয়াকে গুঁড়িয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল

ফুটবলে নিষিদ্ধ হতে পারে ব্রাজিল
ছবি: এএফপি

শুরুতেই আগ্রাসী ফুটবলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল ব্রাজিল। প্রথম ৩৬ মিনিটের মধ্যে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা জালের ঠিকানা খুঁজে পেল চারবার। তাদের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের বিপরীতে রীতিমতো অসহায় হয়ে রইল দক্ষিণ কোরিয়া। দাপট দেখানো উড়ন্ত জয়ে তিতের শিষ্যরা নাম লেখাল কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।

সোমবার রাতে ৯৭৪ স্টেডিয়ামে আসরের শেষ ষোলোতে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ব্রাজিল। তাদের পক্ষে একটি করে গোল করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, নেইমার, রিচার্লিসন ও লুকাস পাকেতা। কোরিয়ানদের পক্ষে সান্ত্বনাসূচক গোল করেন পাইক সিউং-হো। আগামী শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে সেলেসাওরা।

বল দখলে কিছুটা এগিয়ে থাকা ব্রাজিল প্রতিপক্ষের গোলমুখে ১৮টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখে নয়টি। যার মধ্যে তিনটি পৌঁছায় জালে। গ্রুপ পর্বে একই সংখ্যক গোল করতে তিন ম্যাচে তাদের নিতে হয়েছিল সব মিলিয়ে ৫১টি শট। অন্যদিকে, গোলমুখে কোরিয়ার নেওয়া আটটি শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে।

গোড়ালির চোট কাটিয়ে এই ম্যাচের একাদশে ফেরেন নেইমার। তাকে পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ব্রাজিল দল। প্রথমার্ধে একইসঙ্গে চোখ জুড়ানো ও আক্রমণাত্মক ফুটবলে তারা কাঁপিয়ে দেয় প্রতিপক্ষকে। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে কমে আসে তাদের খেলার গতি।

এগিয়ে যেতে একদমই সময় নেয়নি ব্রাজিল। সপ্তম মিনিটেই গোলের উল্লাসে মাতে তারা। ডান প্রান্ত দিয়ে দারুণভাবে আক্রমণে উঠে রাফিনহা ক্রস করেন ডি-বক্সে। জটলা পেরিয়ে দূরের পোস্টে বল পেয়ে যান ভিনিসিয়ুস। এগিয়ে আসতে থাকা কোরিয়ান তিন ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষক কিম সিউং-গিউকে ফাঁকি দিয়ে জাল খুঁজে নেন তিনি।

ছয় মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন নেইমার। এবারের বিশ্বকাপে এটি তার প্রথম গোল। রিচার্লিসন ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট-কিক থেকে অনায়াসে বল জালে পাঠান নেইমার।

দুই গোল হজম করে ম্যাচে ফেরার তাড়া দেখায় কোরিয়ানরা। ১৬তম মিনিটে হোয়াং হি-চ্যান ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেন দূরপাল্লার শট। বামদিকে ঝাঁপিয়ে বল রুখে দৃঢ়তার পরিচয় দেন গোলরক্ষক অ্যালিসন।

ম্যাচের ২৯তম মিনিটে পুরোপুরি চালকের আসনে বসে পড়ে ব্রাজিল। গোলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্কিলের প্রদর্শনী দেখান রিচার্লিসন। দারুণভাবে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে এড়িয়ে তিনি পাস দেন মার্কুইনহোসকে। তার কাছ থেকে বল পেয়ে যান থিয়াগো সিলভা। তিনি রক্ষণচেরা পাসে খুঁজে নেন রিচার্লিসনকে। নিখুঁত শটে জাল কাঁপান তিনি। এবারের বিশ্বকাপে এটি তার তৃতীয় গোল।

তিন মিনিট পর দুরূহ কোণ থেকে হি-চ্যানের আরেকটি প্রচেষ্টা আটকে দেন অ্যালিসন। দুই মিনিট পর কাসেমিরো দূর থেকে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করেও সফল হননি। তবে এশিয়ার দলটিকে ফের হতাশায় আচ্ছন্ন করে সেলেসাওরা। ৩৬তম মিনিটে নেইমারের কাছ থেকে বল পেয়ে ভিনিসিয়ুস খুঁজে নেন পাকেতাকে। সিউং-গিউকে পরাস্ত করতে ভুল হয়নি তার।

বিরতির আগে আরও গোল পেতে পারত তিতের দল। রাফিনহার পাসে বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন পাকেতা। তবে সুযোগ নষ্ট করেন তিনি। তার বাম পায়ের প্রচেষ্টা রুখে দেন গোলরক্ষক। বিরতির পর আক্রমণে আগের ধার দেখায়নি ব্রাজিল। বরং পাবলো বেন্তোর শিষ্যরা বারবার ভীতি ছড়ায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আক্রমণে ওঠে কোরিয়া। ৪৮তম মিনিটে সতীর্থের লম্বা বল ধরে সন হিউং-মিন শট নেন গোলমুখে। দারুণ সেভ করে জাল অক্ষত রাখেন অ্যালিসন। ছয় মিনিট পর রাফিনহার শট ঠেকান সিউং-গিউ। এরপর ভিনিসিয়ুসের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। আট মিনিট পর ফের রাফিনহাকে হতাশ হতে হয়।

৭৬তম মিনিটে অবশেষে অ্যালিসন হন পরাস্ত। ডি-বক্সের বাইরে থেকে সতীর্থের ফ্রি-কিক ব্রাজিলের রক্ষণে প্রতিহত হওয়ার পর পান পাইক। তিনি বাম পায়ের বুলেট গতির হাফ-ভলিতে কাঁপান জাল।

পাঁচ মিনিট পর নেইমারকে উঠিয়ে নেন তিতে। তার পরিবর্তে রদ্রিগোকে মাঠে নামানো হয়। এর আগে অ্যালিসনকেও বদলি করা হয়। চমক দেখিয়ে গোলপোস্টের নিচে জায়গা পান তৃতীয় গোলরক্ষক ওয়েভারতন। ৮৩তম মিনিটে পাইকের নিচু শট থাকেনি লক্ষ্যে।

দুই মিনিট পর আরেক গোল হজম করতে পারত কোরিয়া। বদলি রদ্রিগোর কাটব্যাক রিচার্লিসনের কাছে পৌঁছানোর আগেই হয় ব্লকড। তিন মিনিট পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে দানি আলভেসের বাইসাইকেল কিক অল্পের জন্য লক্ষ্য খুঁজে পায়নি। কয়েক মিনিট পর শেষ বাঁশি বেজে উঠতেই উল্লাসে মাতে শিরোপাপ্রত্যাশী ব্রাজিল।

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

12h ago