সেনেগালের বিপক্ষে দাপুটে জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড
বিশ্বকাপ তো দূরের কথা, কোন প্রীতি ম্যাচেও এর আগে কখনো সেনেগালের মুখোমুখি হয়নি ইংল্যান্ড। দুই দলের প্রথম সাক্ষাৎ রাঙাল থ্রি লায়ন্সরাই, রীতিমতো ছড়ি ঘুরিয়ে ম্যাচ জিতে নিল তারা। অন্যদিকে সামান্য কয়েকটি সুযোগ তৈরি ছাড়া ম্যাচের অধিকাংশ সময় আক্রমণ রুখতে ব্যস্ত থাকতে হলো আলিউ সিসের শিষ্যদের। ফিনিশিং ব্যর্থতাও পোড়ালো তাদের, সুযোগ বুঝে চেপে ধরল ইংলিশরা।
রোববার দিবাগত রাতে আল বাইত স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর ম্যাচে সেনেগালকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। ম্যাচের শুরু থেকেই আফ্রিকান প্রতিপক্ষের ওপর ছড়ি ঘোরাতে থাকে গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা। ৩৮ মিনিটে ম্যাচের প্রথম গোল করেন জর্ডান হেন্ডারসন। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোলের দেখা পান হ্যারি কেইন। ৫৭ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ান বুকায়ো সাকা।
অথচ ম্যাচের শুরুতে ঝলক দেখায় সেনেগালই। চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত তারা। গতির ঝলক দেখিয়ে ইংল্যান্ড বক্সে ঢুকে পড়েন বোলায়ে দিয়া। হ্যারি মাগুয়ার ও জন স্টোনসের ফাঁক গলে বেরিয়েই গিয়েছিলেন ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড, কিন্তু শট আর নিতে পারেননি।
অষ্টম মিনিটে সুযোগ ধরা দেয় ইংল্যান্ডের হাতেও, কিন্তু কর্নার কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় তারা। পরের মিনিটে আবারও সুযোগ হারায় থ্রি লায়ন্সরা। জুড বেলিংহামের নিঁখুত এক ক্রসে পরাস্ত হন এডুয়ার্ড মেন্ডিসহ সেনেগাল রক্ষণ, কিন্তু সেটাকে গোলে রূপ দেওয়ার জন্য যথাস্থানে ছিলেন না কেইন, সাকারা।
২১ মিনিটে আবারও সুযোগ এসেছিল কর্নার থেকে, এবার লক্ষ্যহীন হেডে সেটা হারান স্টোনস। পরের মিনিটে মোক্ষম সু্যোগ হারায় সেনেগাল। মাগুয়ারের ভুলে বল পেয়ে যান ক্রেপিন দিয়াত্তা। তার ক্রসে ঠিকভাবে পা ছোঁয়াতে পারেননি দিয়া। দৌড়ে এসে শট নিলেও সেটা লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ইসমাইলা সার।
৩২ মিনিটে ফের আক্রমণে যায় সেনেগাল, দিয়ার জোরালো শট রুখে সে যাত্রা ইংল্যান্ডকে পিছিয়ে পড়ার হাত থেকে বাঁচান জর্ডান পিকফোর্ড। খানিক বাদে পাল্টা আক্রমণ গড়ে গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরাও, তবে ইসমাইল জ্যাকবস সাকাকে ভিড়তে দেননি কেইনের ক্রসের কাছে।
৩৮ মিনিটে এগিয়ে যায় থ্রি লায়ন্সরা। কেইনের বিচক্ষণ থ্রু পাস ধরে ক্রস করেন বেলিংহাম। সেটাকে জালে জড়ান আরেক মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসন। তিন মিনিট বাদে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ ছিল ইংলিশদের সামনে। সাকার ক্রস থেকে কেইনের নেওয়া শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেলে হতাশ হতে হয় তাদের।
গোল পেয়ে উজ্জীবিত ইংল্যান্ড শানায় টানা কয়েকটি আক্রমণ। ৪৩ মিনিটে সেনেগাল রক্ষণে আবারও ত্রাস ছড়ায় তারা। লুক শ গতির ঝলক দেখালেও শট নিতে পারেননি যথাসময়ে। পরবর্তীতে কঠিন কোণ থেকে নেওয়া তার চেষ্টা রুখে দেন মেন্ডি।
যোগ করা সময়ে সেনেগালের কফিনে দ্বিতীয় পেরেক ঠুকেন কেইন। কাতার বিশ্বকাপে প্রথম গোল করেন ইংলিশ অধিনায়ক। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল নিয়ে দারুণ ড্রিবলিংয়ে নিজেদের অর্ধ পার করেন বেলিংহাম। সযোগ বুঝে পাস বাড়ান ফিল ফোডেনকে, তিনি আবার দারুণ বিচক্ষণতায় সেটা ছেড়ে দেন কেইনকে। ফিনিশিংয়ে পটু টটেনহাম হটস্পার তারকাকে কোন বেগ পেতে হয়নি একা হয়ে পড়া মেন্ডিকে পরাস্ত করতে।
২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় সাউথগেটের শিষ্যরা। ৫০ মিনিটে অনেকক্ষণ বাদে সুযোগ তৈরি করেছিল সেনেগাল। ইউসুফ সাবালি ডানপ্রান্ত থেকে ক্রস করেন, বক্সে থাকা বাম্বা দিয়েং পাননি বলের নাগাল। শ ক্লিয়ার করলেও তা খুঁজে নেয় পাপে সারকে। কিন্তু টটেনহামের তরুণ তুর্কির শট অল্পের জন্য মিস করে গোলবার।
৫৬ মিনিটে গোল লক্ষ্য করে জোরালো শট চালান কেইন। তবে দারুণ দক্ষতায় তা রুখে দেন মেন্ডি। পরের মিনিটেই তৃতীয় সাফল্য পেয়ে যায় ইংলিশরা। কেইন বল হারালে তা গিয়ে পড়ে ফিল ফোডেনের পায়ে। ছন্দময় ড্রিবলিংয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে যোগান দেন রক্ষণচেরা ক্রস। সাকার কাজ ছিল কেবল ফিনিশ করা, সেটা ঠিকঠাকই করেন আর্সেনাল ফরোয়ার্ড।
৭৪ মিনিটে ফ্রি কিক পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি সেনেগাল। অন্যদিকে আক্রমণ অব্যাহত রাখে ইংলিশরা, ৮০ মিনিটে চতুর্থ গোলের দেখা পেতে পারত তারা। তবে বদলী মার্কাস রাশফোর্ডের ক্রস পা বাড়িয়েও ছুঁতে পারেননি কেইন। অবশিষ্ট সময়েও একই থাকে খেলার চিত্র। শেষ বাঁশি বাজলে আরও একবার স্টেডিয়াম মুখরিত হয় ইংলিশ সমর্থকদের 'ইটস কামিং হোম' গানে।
Comments