এমবাপের চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্য কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্স
ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বল দখল ও আক্রমণে দাপট দেখাল ফ্রান্স। প্রথমার্ধে অলিভিয়ের জিরু রেকর্ড গড়া গোলে দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে কিলিয়ান এমবাপে দেখালেন পায়ের জাদু। জোড়া গোল করে তিনি এককভাবে উঠে গেলেন কাতার বিশ্বকাপের গোলদাতার তালিকার শীর্ষে। একদম শেষ মুহূর্তে পোল্যান্ডের রবার্ত লেভানদোভস্কি পেনাল্টি থেকে লক্ষ্যভেদ করে কেবল ব্যবধানই কমালেন। দারুণ জয়ে আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখাল শিরোপাধারী ফরাসিরা।
রোববার রাতে আল থুমামা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ফ্রান্স। আগামী ১১ ডিসেম্বর সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তারা মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড-সেনেগাল ম্যাচের বিজয়ী দলের।
জাতীয় দলের জার্সিতে এসি মিলান স্ট্রাইকার জিরুর গোল হলো ৫২টি। থিয়েরি অঁরিকে ছাড়িয়ে তিনি এখন ফ্রান্সের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। এবারের বিশ্বকাপে পিএসজি ফরোয়ার্ড এমবাপের গোল বেড়ে দাঁড়াল পাঁচটিতে। আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট জয়ের দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে গেলেন তিনি। পাশাপাশি দুটি অ্যাসিস্টও আছে তার নামের পাশে।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে গিয়েছিল ফ্রান্স। ওই ম্যাচে নিয়মিত তারকাদের বেশিরভাগকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। সেই একাদশে নয়টি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামা ফরাসিরা গোলমুখে এদিন শট নেয় ১৬টি। যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল আটটি। অন্যদিকে, পোল্যান্ড ১২টি শট নিয়ে তিনটি রাখে লক্ষ্যে।
ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি ছড়ায় ফ্রান্স। আতোঁয়ান গ্রিজম্যান কর্নারে রাফায়েল ভারানের হেড থাকেনি লক্ষ্যে। নয় মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে আহেলিয়া চুয়ামেনির জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক ভোইচেখ শেজনি। চার মিনিট পর উসমান দেম্বেলের দুর্বল প্রচেষ্টাও রুখে দেন তিনি।
২১তম মিনিটে গোলমুখে প্রচেষ্টা চালান পোল্যান্ডের তারকা লেভানদোভস্কি। ২০ গজ দূর থেকে তার আচমকা বাঁ পায়ের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে ছিল না। ৩৬তম মিনিটে আবারও বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান শেজনি। কাছের পোস্টে এমবাপের শট ফিরিয়ে দেন তিনি।
দুই মিনিট পর খেলার ধারার বিপরীতে গোল পেয়ে যেতে পারত পোলিশরা। তাদের তিন তিনটি প্রচেষ্টা প্রতিহত হয়! প্রথমে বার্তোশ বেরেশিন্সকির কাটব্যাকে পিওতর জিয়েলিন্সকির বিপজ্জনক শট রুখে দেন গোলরক্ষক হুগো লরিস। আলগা বলে জিয়েলিন্সকির আরেকটি শট প্রতিহত করেন দায়ত উপামেকানো। কিন্তু তাতেও বিপদ কাটেনি। ইয়াকব কামিন্সির শট গোললাইন থেকে ফেরান ভারান।
হাঁফ ছেড়ে বেঁচে ৪৪তম মিনিটে লিড নেয় দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা। এমবাপের থ্রু বল ডি-বক্সে পেয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে নিশানা ভেদ করেন জিরু। এগিয়ে যাওয়ার স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা।
দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটেই ফের শেজনির পরীক্ষা নেন গ্রিজম্যান। এরপর থিও হার্নান্দেজ শট নিলেও তা হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। আট মিনিট পর এমবাপের শট গ্রেগর্জ ক্রাইচোভিয়াকের পায়ে লেগে চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে। ১০ মিনিট পর জিরুও পারেননি ব্যবধান বাড়াতে।
৭৪তম মিনিটে ম্যাচের চালকের আসনে বসে পড়ে ফ্রান্স। পাল্টা আক্রমণে দেম্বেলের কাছ থেকে বল পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় নিখুঁত শটে জাল কাঁপান এমবাপে। সামনে থাকা দুই পোলিশ খেলোয়াড় ও গোলরক্ষকের কিছুই করার ছিল না।
যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান এমবাপে। বদলি মার্কাস থুরামের পাস প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। এরপর ডান পায়ের শটে দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্য খুঁজে নেন। বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে তার গোলসংখ্যা বেড়ে হলো নয়টি। গত রাশিয়া বিশ্বকাপে তিনি করেছিলেন চার গোল।
সাত মিনিট পর পেনাল্টি পায় ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে ওঠা পোল্যান্ড। ডি-বক্সে উপামেকানোর হাতে বল লাগলে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে স্পট-কিকের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। প্রথমবার লেভানদোভস্কির দুর্বল শট লুফে নিলেও আগেই লাইন থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলন লরিস। ফলে আবার শট নিতে দেন রেফারি। এবার আর ভুল করেননি বার্সেলোনা স্ট্রাইকার লেভানদোভস্কি।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাজে খেলা শেষ হওয়ার বাঁশি। ফ্রান্স মাতে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রাখার আরেকটি ধাপ পার হওয়ার উল্লাসে।
Comments