যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচ: খেলার চেয়ে রাজনীতি বড় ভূমিকা রেখেছে

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কিছুটা সময় কয়েকজন দর্শক মাহসা আমিনির নাম লেখা ব্যানার তুলে ধরেন। ছবি: রয়টার্স
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কিছুটা সময় কয়েকজন দর্শক মাহসা আমিনির নাম লেখা ব্যানার তুলে ধরেন। ছবি: রয়টার্স

কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের ২ দলের শেষ খেলায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে ১-০ গোলে পরাজিত করেছে।

গতকাল মঙ্গলবারের এই প্রতিযোগিতা শুধু ফুটবল মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ২ দেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কয়েক দশকের অস্থিরতার প্রকাশ ঘটেছে এই খেলাকে ঘিরে।

গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রায় ৪০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ইরান। গত ১৬ সেপ্টেম্বর উপসাগরীয় দেশটিতে ২২ বছর বয়সী কুর্দি বংশোদ্ভূত নারী মাহসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। এই আন্দোলন খেলার মাঠকেও প্রভাবিত করতে পারে—এই আশঙ্কায় বাড়তি নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত হয় ২ দলের এই খেলা।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে কাতারের বেশ ভালো সম্পর্ক। তেহরানের সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশটি। এবারের বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে কাতার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে।

ইরানের প্রতিটি খেলায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাঠে কিছু বিতর্কিত উপকরণ, যেমন ইরানের ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের আগের পতাকা নিয়ে আসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্কে বড় ফাটল দেখা দেয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসেন। বাইডেন প্রশাসন ২০১৫ সালের সেই চুক্তির বাস্তবায়নের চেষ্টা চালালেও তা সফল হয়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এই খেলার সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকার বিষয় উড়িয়ে দেন। তিনি খেলা দেখবেন এবং নিজ দেশকে সমর্থন জানাবেন বলেও গণমাধ্যমকে জানান।

ক্রিস্তিয়ান পুলিসিকের গোলে ১-০ গোলে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী রাউন্ডে পৌঁছে যাওয়ার পাশাপাশি ইরান এই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েছে।

খেলা শুরুর আগের দৃশ। ছবি: রয়টার্স
খেলা শুরুর আগের দৃশ। ছবি: রয়টার্স

এই ম্যাচের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ও প্রতিযোগিতায় টেকা না টেকার বিষয়ের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা থাকা সত্ত্বেও মাঠের খেলায় এর আঁচ পাওয়া যায়নি। ২ দলের খেলোয়াড়রা একে অপরকে খুব একটা ফাউল করেননি এবং তারা মাঠে কোনো বিবাদেও জড়াননি।

বিশ্বকাপে সর্বশেষ এই ২ দল মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্সে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে। সেবার ইরান ২-১ গোলে জয়ী হয়েছিল।

দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামের বাইরে বাড়তি নিরাপত্তাকর্মী ঘোড়ায় চড়ে টহল দেন। স্টেডিয়ামের বাইরে নিরাপত্তা কর্মীদের ইরানি পতাকা খুলে দেখানোর পরই কেবল মাঠে ঢুকতে পেরেছেন ভক্তরা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কিছুটা সময় কয়েকজন দর্শক মাহসা আমিনির নাম লেখা ব্যানার তুলে ধরেন। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল মাহসার নামের এক একটি অক্ষর। আশেপাশে থাকা ইরানি দর্শকরা করতালি দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানান। নিরাপত্তাকর্মীরা ব্যানারগুলো নিয়ে গেলেও তাদেরকে বাকি খেলা দেখায় বাধা দেননি।

খেলার পর মাঠে বাইরে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিরাপত্তাকর্মীরা মাঠে বাইরে ২ ব্যক্তিকে ধাওয়া করেন। সে সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

৩ নিরাপত্তাকর্মী এক ব্যক্তিকে ধরে মাটিতে উপুড় করে রাখেন। সেই ব্যক্তি ইরানে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের স্লোগান—'নারী, জীবন, স্বাধীনতা' লেখা টি-শার্ট পরে ছিলেন।

তিনি বারবার 'নারী, জীবন, স্বাধীনতা' বলে চিৎকার করছিলেন। সে সময় নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে মাটিতে চেপে রাখেন।

এক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানান, নিরাপত্তাকর্মীরা লোকটির টি-শার্ট খুলে নেওয়ার চেষ্টা চালালে অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত হয়।

তেহরানের একটি স্টেডিয়ামে জায়ান্ট স্ক্রিণে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের খেলা দেখছেন দর্শকরা। ছবি: রয়টার্স
তেহরানের একটি স্টেডিয়ামে জায়ান্ট স্ক্রিণে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের খেলা দেখছেন দর্শকরা। ছবি: রয়টার্স

অপর এক ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মীরা এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে স্টেডিয়ামের ভেতরে নিয়ে যান।

প্রতিযোগিতার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও আয়োজক কমিটি এই ঘটনায় মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ইরানের ফুটবল দল বিশ্বকাপের শুরু থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানানোর চাপে আছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম খেলার শুরুতে বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য দলের সদস্যরা ইরানের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সুর মেলাননি। সে খেলায় দলটি ৬-২ গোলে পরাজিত হয়।

দ্বিতীয় খেলায় মত পালটে তারা জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সুর মেলান। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত খেলাটিতে ইরান ২-০ গোলে ওয়েলস এর বিরুদ্ধে জয় লাভ করে।

ইরানের ধর্মভিত্তিক শাসকগোষ্ঠীর জন্য চলমান বিক্ষোভ বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago