ইরানের স্বপ্নভঙ্গ করে নকআউট পর্বে যুক্তরাষ্ট্র
মাহদি তারেমির শট যখন গোলমুখ থেকে ফেরান মার্কিন ডিফেন্ডার কিংবা মোর্তেজা পউরালিগাঞ্জির হেডটা যখন বারপোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়, তখন যেন সব আশাই শেষ হয়ে যায় ইরানের। তাতে হয়নি কোনো রূপকথা গল্প। অথচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রীতিমতো বিধ্বস্ত হওয়ার পরও ওয়েলসের বিপক্ষে দারুণ জয়ে প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে ওঠার স্বপ্ন দেখেছিল দলটি। কিন্তু উল্টো ইরানকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে নাম লেখায় যুক্তরাষ্ট্রই।
বুধবার দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপের 'বি' গ্রুপের ম্যাচে ইরানকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন চেলসি তারকা ক্রিস্তিয়ান পুলিসিক।
এই গ্রুপের অপর ম্যাচে ওয়েলসকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারায় ইংল্যান্ড। ফলে তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে তাদের সঙ্গী হয় যুক্তরাষ্ট্র।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটিও ভাঙ্গল ইরানের। এর আগে ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপের ম্যাচে ২-১ গোলের পর ২০০ সালে প্রীতি ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করেছিল দল দুটি। এরপর এবারই প্রথম মুখোমুখি হয় তারা।
তবে ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি ইরান। প্রথমার্ধে প্রায় একক আধিপত্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। মাঝ মাঠের দখল সমানে সমান হলে মোট ১২টি শট নেয় যুক্তরাষ্ট্র, যার ৫টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ৪টি শট নিয়ে কেবল একটি লক্ষ্যে রাখতে পারে এশিয়ান দলটি।
এদিন ম্যাচের একাদশ মিনিটে গোল করার মতো প্রথম সুযোগটি পায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু পুলিসিকের দুর্বল হেড সহজেই ধরে ফেলেন ইরানি গোলরক্ষক। নয় মিনিট পর ডান প্রান্ত থেকে ভালো ক্রস দিয়েছিলেন ডেস্ট। তবে আগেই গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে ঠেকালে ফাঁকায় থাকা পুলিসিকের কাছে যায় বল। অন্যথায় বিপদে পড়তে পারতো এশিয়ান দলটি।
২৭তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পায় মার্কিন বাহিনী। একবারে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন টিমথি উইয়াহ। তার হেডে জোর না থাকায় তা লুফে নিতে কোনো সমস্যা হয়নি ইরানি গোলরক্ষক আলিরেজা বেইরানভান্দ।
৩২ তম মিনিটে উইয়াহর ব্যাকপাস থেকে নেওয়া ডেস্টের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এর সাত মিনিট পর এগিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাককিনির ক্রস থেকে নিখুঁত এক হেডে গোলমুখে বল রাখেন ডেস্ট। একেবারে ফাঁকায় পেয়ে আলতো ভলিতে বল জালে পাঠান পুলিসিক।
৪৪তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার ভালো সুযোগ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে গিয়ে উইয়াহকে বল দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ফাঁকায় থেকে ফিরতি বলের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। তাকে বল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন উইয়াস। কিন্তু ইরানি এক ডিফেন্ডার ব্লক করলে সে যাত্রা কোনো বিপদ হয়নি।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে ফের ইরানের জালে বল জড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। উইয়াহ অফসাইডে থাকায় গোল মিলেনি। তবে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় দলটি।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ইরান। ৫২তম মিনিটে রামিন রেজাইয়ানের ক্রস থেকে সামন ঘোড্ডোসের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। ৬৫তম মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি পায় ইরান । ঘোড্ডোসের শট একেবারের বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৭০তম মিনিটে সাইদ এজাতোলাহির ডান পায়ের শটও লক্ষ্যে থাকেনি। ম্যাচের যোগ করার সময়ে তৃতীয় মিনিটে রামিনের ক্রস থেকে মোর্তেজার হেড একেবারের বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশা বাড়ে ইরানের। এর তিন মিনিট পর মোর্তেজার পাস থেকে পা ছুঁইয়েছিলেন তারেমি। কিন্তু গোলমুখ থেকে ঠেকান এক ডিফেন্ডার। ফলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় ইরানকে।
Comments