এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষ কষ্ট পায়: ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষ কষ্ট পায় বা মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ বিশ্বব্যাপী এখন খাদ্যের অভাব। এ জন্য আমরা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেছেন, অনেক দেশ নিজেরাই অর্থনৈতিক মন্দা ঘোষণা দিয়ে গেছে। এখনো আমি বলতে পারি, বাংলাদেশ অন্তত অত খারাপ অবস্থায় নেই। কিন্তু আমাদের এখানে যারা শিল্পপতি আছেন, তাদের অনুরোধ করবো ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে অন্তত নিজের দেশের মানুষের চাহিদা পূরণের প্রচেষ্টা আপনারা নেবেন। কারণ আপনাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে।

আজ রোববার সকালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) আওতাধীন ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আর হাওয়া ভবন নেই যে আপনাদের কোনো কাজ পেতে হলে হাওয়া ভবনে পাওনা বুঝাতে হয় বা এখানে-ওখানে ছোটাছুটি করতে হয়। আমরা সব ধরনের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে দেশকে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। ব্যবসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা, সেটা কিন্তু আমরা করে দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আপনারা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। মানুষের কল্যাণে যত বেশি কাজ করবেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের সহযোগিতা করবো।

করোনা মহামারির যে অর্থনৈতিক অভিঘাত সারাবিশ্বে পড়েছে বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্তত আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতা যাতে অব্যাহত থাকে সে ব্যবস্থা আমি নিচ্ছি। এর ওপর এলো মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ; ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার ফলে আমাদের ক্রয় করার সুযোগ অনেক কমে গেছে। আমরা যেসব জিনিস বাইরে থেকে আমদানি করি, সেগুলোর দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। পরিবহন খরচ আরও বেড়ে গেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখানেই থেমে থাকবো না, মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আমরা মেরিন ড্রাইভ করে দেবো। সেই চিন্তা আমাদের আছে। আমাদের বিশাল সমুদ্র মানুষ উপভোগ করতে পারবে। ব্লু ইকোনমির ওপর আমরা জোর দিচ্ছি। আমাদের সমুদ্র সম্পদ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কিছু কিছু কাজ আমরা শুরু করেছি।

এ সময় বিদেশি বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এসব পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হচ্ছে, আরও আসবে। সেই সঙ্গে আমি যুব সমাজকে বলবো, শুধু চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেরা নিজেদের শিল্প-ব্যবসা গড়ে তোলেন। নিজেরা অন্য লোককে চাকরির সুযোগ করে দেন। নিজের মাস্টার নিজেই হোন।

আমাদের নারী উদ্যোক্তা আরও বেশি আসা দরকার। এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে আমরা নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়েছি। প্রত্যেকটা শিল্পাঞ্চলে নারীদের আলাদা প্লট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমি আশা করি, আমাদের নারী উদ্যোক্তারাও আরও এগিয়ে আসবেন। সেটাই আমি চাই। কারণ একটা সমাজে সকলে মিলে কাজ করতে হবে। আমাদের নারী-যুব সমাজের প্রত্যেক উদ্যোক্তা যদি কাজ করে আমরা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর হওয়ার পরে দক্ষিণাঞ্চে একেবারে অল্প সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমবার সরকারে আসার পর চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। রেল-নৌ যোগাযোগ যাতে সহজ হয় সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সব ধরনের সড়কের উন্নয়ন ব্যাপকভাবে করে দিচ্ছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেন আমরা করেছি, এটা ৬ লেন করে দিলেই ভালো হতো। আগামীতে আরও উন্নত করে দেবো সে আশা আমাদের আছে। ঢাকা থেকে আরও অল্প সময়ে যাতে চট্টগ্রাম রেলে পৌঁছানো যায় তাই নতুন একটি অ্যালাইনমেন্টের কথা আমরা চিন্তা করছি। করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের যে অর্থনৈতিক চাপটা আমাদের ওপর আছে এটা কমে গেলেই এ কাজগুলো আমরা করতে পারবো।

যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মাছ, মাংস, ডিম, মুরগি, দুধ সব উৎপাদনে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। আমাদের চাহিদা পূরণ করার মতো যোগ্যতা আমরা অর্জন করেছি। আমরা অতিরিক্ত উৎপাদনের মাধ্যমে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশে রপ্তানি করার সক্ষমতা রাখি। হালাল মাংস উৎপাদন করে আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। কিছু কিছু কাজ শুরু হয়েছে। এসব বিভিন্ন নতুন নতুন দিকে আমাদের যারা উদ্যোক্তা, বিশেষ করে যুব সমাজ এগিয়ে আসবেন। তাদের জন্য আমরা অনেক সুযোগ রেখেছি। 

Comments