চনপাড়ার বজলুর বিরুদ্ধে ৩ মামলা, রিমান্ড আবেদন

চনপাড়ার বজলুর
বজলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও কায়েতপাড়া ইউপি সদস্য বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও জাল টাকা রাখার অভিযোগে ৩টি মামলা করেছে র‌্যাব।

রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা এসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিন করে মোট ২১ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।

আজ শনিবার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, 'মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক ২টি মামলায় ৭ দিন করে ১৪ দিন এবং জাল টাকা ও বিদেশি মুদ্রা রাখার অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আরেকটি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। বিকেলে বজলুর রহমানকে আদালতে পাঠিয়েছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। রোববার রিমান্ড শুনানি হবে।'

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুক্রবার রাতে র‌্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকা রাখার অপরাধে ৩টি মামলা করেন। ওই ৩ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।'

র‌্যাব-১-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার বিকেলে পূর্বগ্রাম থেকে অস্ত্র, মাদক, জাল টাকা ও বিদেশি মুদ্রাসহ বজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, ২২০ গ্রাম হেরোইন, ২৫ হাজার ভারতীয় রুপি ও ৭৫ হাজার টাকার জাল নোট, মাদক বিক্রির নগদ সাড়ে ২১ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র (চনপাড়া বস্তি) এলাকার চিহ্নিত অপরাধী ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক বজলুর রহমান ওরফে বজলু (৫২)। এছাড়া নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে তার বেশ কয়েকজন সহযোগী হিসেবে কাজ করে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অপরাধে এখন পর্যন্ত ২৩টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। সে চনপাড়া বস্তি এলাকাসহ আশপাশের এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ হতে মাসিক ভিত্তিতে টাকা তুলতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব আরও বলেছে, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রটি প্রকৃতপক্ষে চনপাড়া বস্তি নামে অধিক পরিচিত। যেখানে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের মানুষ এই বস্তিতে বসবাস করে, যাদের অধিকাংশ দিনমজুর। বিশাল ও অত্যন্ত ঘিঞ্জি এবং ঘনবসতিপূর্ণ এই চনপাড়া বস্তিটি ৯টি এলাকায় বিভক্ত। এই এলাকার শীর্ষ ৫-৬টি মাদক কারবারির প্রধান সমন্বয়ক ও গডফাদার ছিলেন বজলুর রহমান ওরফে বজলু। বস্তি এলাকার মাদকের প্রায় ২০০টি স্পট থেকে কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বজলু এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া যায়।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানিয়েছে, বজলুর রহমান স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে 'বজলু ভাই' নামে পরিচিত। বিভিন্ন সোর্স তার ছত্রছায়ায় এলাকার কিশোর-যুবকদের টাকা প্রদান করে নানা প্রকার অপকর্ম পরিচালনা করত। কেউ চাঁদা না দিলে তার ওপর নেমে আসত ভয়াবহ নির্যাতন। এসব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক-দেড় বছরে নিহত হয়েছেন ৬ জন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাধী গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা (র‌্যাব) চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালালে বজলুর রহমান ওরফে বজলুর নির্দেশে অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে অপরাধী ছিনিয়ে নেওয়ারও অপচেষ্টা চালায়।

Comments