মাদক তো দূরের বিষয়, ধূমপানও করেনি আমার ছেলে: ফারদিনের বাবা

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি করে বাবা কাজী নুর উদ্দিন বলেছেন, আমার ছেলে জীবনে কখনো ধূমপান পর্যন্ত করেনি, মাদক তো অনেক দূরের বিষয়।
আজ সোমবার বুয়েট ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সিরাজুল ইসলাম রুবেল/ স্টার

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি করে বাবা কাজী নুর উদ্দিন বলেছেন, আমার ছেলে জীবনে কখনো ধূমপান পর্যন্ত করেনি, মাদক তো অনেক দূরের বিষয়।

নূর উদ্দিন জানতে চান, ফারদিন কেন ক্যাম্পাসে না গিয়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গেলো? বান্ধবীর সঙ্গে তার কী যোগাযোগ হয়েছে? ফারদিনকে যদি ৬-৭ জনে মিলে পিটিয়ে থাকে পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা। সেখানে শুধু মাথায় এবং বুকে প্রচণ্ড আঘাতের চিহ্ন কেন?

আজ সোমবার বুয়েট ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তিনি এসব প্রশ্ন তুলেন।

কাজী নূর উদ্দিন বলেন, 'ফারদিনের বান্ধবীকে আমরা আসামি করে মামলা করেছি, কারণ সে ফারদিনের সর্বশেষ সঙ্গী ছিল। আমার সন্তান কখনও মাদকাসক্ত হতে পারে না। সে কখনও মাদক কিনতে যায়নি। যারা বলছে সেটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না। সে ডেমরার বাসা থেকে ক্যাম্পাসে এসে বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করার কথা ছিল। আমার প্রশ্ন এখানে যে, আমার ছেলে ক্যাম্পাসে না গিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গেলো কেন? তার সঙ্গে কেন এতো সময় কাটালো? কী কারণে তার সঙ্গে দেখা করলো? সেই মেয়েটির সঙ্গে কী ধরনের যোগাযোগ হয়েছে? তার ফোন ট্রাকিং করে বের করা যেতে পারে। আমার সংশয় এখানে যে, ছেলের ছিল পরদিন পরীক্ষা, সে বান্ধবীর সঙ্গে রাত ১০টা পর্যন্ত সময় কাটালো কেন?'

'মাদক গ্রহণের অভ্যাস আমার সন্তানের কখনো ছিল না। সে মাদক কিনতে চানপাড়াতে গেলো এটা আমি জীবনেও বিশ্বাস করি না। আমার ৩টি সন্তান। তারা ধূমপান তো দূরের কথা, এটির ধোঁয়া পর্যন্ত সহ্য করতে পারে না। তার বন্ধু এবং যাদের সঙ্গে ফারদিনের চলাফেরা ছিল, তারা কেউ বলতে পারবে না যে, ফারদিন ধূমপান করে। যেখানে তার ধূমপান করার অভ্যাস নেই, সেখানে ফেন্সিডিল আসক্ত হওয়ার প্রশ্নই আসে না,' যোগ করেন তিনি।

ফারদিনের বাবা আরও বলেন, 'ফারদিনের মরদেহের ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, ফারদিনের দেহে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে এমন কোনো তথ্য ডাক্তাররা আমাদের বলেনি।'

তিনি রামপুরা থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্টতা প্রকাশ করে বলেন, 'আমার সন্তান যখন নিখোঁজ হয়, এর একদিন পর আমরা আশঙ্কা থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করলাম। সে জিডির প্রেক্ষিতে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, সেটা আমরা জানতে পারিনি। জিডি করার ৪৮ ঘণ্টা পরে কী অগ্রগতি হয়েছে, সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানেন। আমরা জানি না। জিডি থেকে মরদেহ পাওয়া পর্যন্ত পুলিশের যে কার্যক্রম তাতে আমরা সন্তুষ্ট না। মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বানোয়াট এবং নাটক। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।'

একটি গণমাধ্যমে সংবাদ বিষয়ে তিনি বলেন, 'এ ধরনের মনগড়া রিপোর্ট তদন্ত কাজকে বাধাগ্রস্ত করে। যারা ফারদিন হত্যার বিচারের দাবিতে দাঁড়িয়েছে তাদের মনোবলটাকে ভেঙে দেয়।'

ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন বলেন, 'আমি আশা করি, ঘটনাটি তদন্তে যে সংস্থাগুলো কাজ করছে তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। আমার সন্তান কারো শত্রু নয়। আমার পেশাগত জীবনেও কোনো শত্রু তৈরি করিনি। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে তদন্তকারী সংস্থার প্রতি আস্থা রাখতে চাই। কোনো কারণে তদন্তকারী সংস্থার প্রতি আমার সেই আস্থা ভেঙে যাক, এটা আমি প্রত্যাশা করি না। প্রকৃত হত্যাকারীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে ফারদিন হত্যার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার দাবি জানান। সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যমকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তারা।

Comments

The Daily Star  | English

$800m repayment to Russia in limbo

About $809 million has piled up in a Bangladesh Bank escrow account to repay loans and interest for the Russia-funded Rooppur Nuclear Power Plant.

8h ago