মাঝপথে দিক হারিয়ে বাংলাদেশের মামুলি পুঁজি

ছবি: এএফপি

ইনিংসের মাঝপথে ভালো সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু একাদশ ওভারে সৌম্য সরকার ও আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সাকিব আল হাসানের বিদায়ে খেই হারাল তারা। সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা থামল মামুলি পুঁজিতে। অন্য ব্যাটারদের ব্যর্থতার ভিড়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকল ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটি।

রোববার অ্যাডিলেডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে টস জিতে আগে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ২০ ওভারে তারা স্কোরবোর্ডে জমা করেছে ৮ উইকেটে ১২৭ রান। এই সাদামাটা সংগ্রহ নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে হলে টাইগার বোলারদের করে দেখাতে হবে অসাধারণ কিছু।

বাংলাদেশের পক্ষে বাঁহাতি শান্ত সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন। ৪৮ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ৭ চার। তার বাইরে দুই অঙ্কের রানে পৌঁছাতে পারেন কেবল তিন ব্যাটার। পাকিস্তানের জার্সিতে দারুণ বোলিংয়ে আলো কাড়েন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ২২ রান খরচায় তিনি পান ৪ উইকেট। ২ উইকেট নিতে শাদাব খান দেন ৩০ রান।

শাহিনের প্রথম ওভারে লিডিং এজ থেকে এক বাউন্ডারি পান শান্ত। নাসিম শাহর পরের ওভারেও চার পান তিনি। বাঁহাতি পেসার শাহিনের ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে পুল করে দারুণ ছক্কা মারেন লিটন দাস।

বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার অবশ্য উড়তে পারেননি। ওই ওভারেই পয়েন্টে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান লিটন। ৮ বলে ১০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। দলীয় ২১ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

ব্যক্তিগত ১০ রানে জীবন পান শান্ত। মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে শর্ট মিড অফে তার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন শাদাব। জীবন পেয়েই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি মারেন তিনি। এরপর একাদশে ফেরা সৌম্য সরকার স্ট্রাইক পেলে পুল শটে অনায়াসে বল পাঠান গ্যালারিতে।

ডানহাতি পেসার নাসিমের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আসে মাত্র ২ রান। ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪০ রান। হাতে উইকেট থাকায় এই সংগ্রহকে কাজে লাগিয়ে ভালো পুঁজি পাওয়ার রাস্তা ছিল খোলা।

পাওয়ার প্লের পর শান্তকে সহজ রান আউটের আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া করে পাকিস্তান। লেগ স্পিনে ব্রেক থ্রুর আশায় থাকা শাদাবকেও সামলে নেন দুজন। নবম ওভারে তাকে স্লগ সুইপ মেরে সৌম্য পান বাউন্ডারি। আক্রমণাত্মক না থাকলেও শান্ত খেলতে থাকেন সাবলীলভাবে।

১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৭০। পাকিস্তানের বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণের মঞ্চ তখন প্রস্তুত। কিন্তু শাদাবের এক ওভারেই ঘুরে যায় পরিস্থিতি। শুরু হয় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের মিছিল। সুবিধাজনক অবস্থান থেকে পা হড়কায় টাইগাররা।

চতুর্থ বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে শানের হাতে ধরা পড়েন সৌম্য। তিনি থামেন ১৭ বলে ২০ রান করে। ভাঙে ৪৭ বলে ৫২ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। পরের বলেই ঘটে বিতর্কিত এক ঘটনা।

মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই অন সাইডে খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হন সাকিব। পায়ের পাতায় বল লাগলে সময় নিয়ে আঙুল তোলেন দক্ষিণ আফ্রিকান আম্পায়ার অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টক।

দেরি না করেই রিভিউ নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। আল্ট্রা এজ প্রযুক্তিতে বল তার ব্যাট পেরিয়ে যাওয়ার আগে স্পাইক দেখা যায়। তবে ব্যাট মাটিতে লাগার কারণে স্পাইক হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেননি জিম্বাবুয়ের টিভি আম্পায়ার ল্যাংটন রুজেরে। রিপ্লেতে একটা কোণ থেকে অবশ্য দেখা যাচ্ছিল, ব্যাট ও মাটির মধ্যে আছে সামান্য ফাঁক। অর্থাৎ স্পাইক হয়েছে ব্যাটে-বলে সংযোগের কারণে।

মাঠের আম্পায়ারের দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত বদলাতে হলে সেটার বিপক্ষে শতভাগ নিশ্চিত প্রমাণ দরকার টিভি আম্পায়ারের। ব্যাট ও পিচের মধ্যে ফাঁক থাকায় এই সিদ্ধান্ত বদলাতে পারতেন রুজেরে। কিন্তু তার বিতর্কিত সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে শূন্যতে ফিরতে হয় সাকিবকে।

৪৫ বলে শান্ত তুলে নেন এই বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। ঢিলেঢালাভাবে পাওয়া এই হাফসেঞ্চুরির পর এগোতে পারেনি তিনি। ইফতিখার আহমেদকে চার মারার পর ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আবার হাঁকাতে গিয়ে হয়ে যান বোল্ড।

আফিফ হোসেন এরপর একপ্রান্তে থেকে দেখতে থাকেন বাকিদের আসা-যাওয়া। শাহিন ১৭তম ওভারে ধরেন জোড়া শিকার। হতাশাজনক ব্যাটিং দেখিয়ে সাজঘরে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান।

১১ বলে মাত্র ৫ রান করে মোসাদ্দেক ইয়র্কারে হারান স্টাম্প। সোহান বাজে শটে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে আউট হন শূন্য রানে। ডিপ পয়েন্টে তার ক্যাচ নেন মোহাম্মদ হারিস। ওই ওভারে শাহিন দেন মোটে ১ রান। আক্রমণে ফিরে তাসকিন আহমেদকে তুলে নেন তিনি। ৫ বলে তাসকিন করেন ১ রান।

ইনিংসের শেষের আগের বলে নাসুম আহমেদ ডিপ মিডউইকেটে তালুবন্দি হন মোহাম্মদ ওয়াসিমের। তাকে বিদায় করেন হারিস রউফ। ৬ বলে ৭ রান করেন নাসুম। আফিফ অপরাজিত থাকেন ৩ চারের সাহায্যে ২০ বলে ২৪ রানে। মোস্তাফিজুর রহমান মুখোমুখি হওয়া একমাত্র বলে রান নিতে পারেননি। শেষ ৪ ওভারে ৪ উইকেট খুইয়ে বাংলাদেশ তোলে কেবল ২২ রান।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

2h ago