‘অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার’ এ মনোনীত মির্জা ফখরুলের মেয়ে শামারুহ মির্জা

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সম্মানসূচক পুরস্কার 'অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার'। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার মনোনীত বর্ষসেরা অস্ট্রেলিয়ানদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই তালিকায় আছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মির্জা ফখরুল ইসলামের মেয়ে শামারুহ মির্জা।

ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ডে কাউন্সিল বোর্ড ৩২টি রাজ্য ও অঞ্চল থেকে বছরের সেরা অস্ট্রেলিয়ানদের নির্বাচিত করে। অস্ট্রেলিয়া দিবসের প্রাক্কালে ক্যানবেরায় জাতীয় পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণার মাধ্যমে বছরব্যাপী মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

ডা. শামারুহ মির্জা একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী। ২০০৬ সাল থেকে তিনি স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরাতে বাস করছেন। চিকিৎসক হলেও মূলত তিনি একজন নারী সংগঠক হিসেবে সমধিক পরিচিত।

বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের নারীদেরকে তাদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করতে এবং আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য একটি নিরাপদ স্থান দিতে শামারুহ ২০১৭ সালে সিতারার গল্প (সিতারাস স্টোরি) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। বাংলাদেশে ২ জন নারী বীরপ্রতীক রয়েছেন। ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা ও তারামন বিবি। তাদের নামানুসারেই এই সংগঠনটির নামকরণ করা হয়েছে। সি মানে সিতারা বেগম, আর তারা মানে তারামন বিবি।

টেলিফোনে কথা হয় ডা. শামারুহ মির্জার সঙ্গে। তিনি বলেন, 'নামটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর ভূমিকাকে স্বীকার করার জন্য নয়, সর্বত্র সব নারীর সংগ্রামকে স্বীকার করার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।'

এই সংস্থাটি কর্মশালা, আলোচনা, সেমিনার ও সৃজনশীল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে, যা নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য, অক্ষমতা, পারিবারিক সহিংসতা ও দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে সহায়তা করে। ২০২১ সালে স্বেচ্ছাসেবকমূলক ও অলাভজনক সংস্থাটিকে মানসিক স্বাস্থ্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। শামারুহ নিজেও ক্যানবেরা 'কমিউনিটি স্পিরিটস অ্যাওয়ার্ড ২০২১' পেয়েছিলেন।

ডা. শামারুহ মির্জা বলেন, 'আমাদের সংস্থাটি এমন একটি জায়গা, যেখানে নারীরা ভয় ছাড়াই কলঙ্কজনক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। সমর্থন নেটওয়ার্ক গঠন করতে পারেন এবং নিজেদের ক্ষমতায়ন করতে পারেন।'

'চূড়ান্তভাবে বিজয়ী না হলেও মনোনীত হয়েছি, এতেই আমি আনন্দিত। আমি আমার কাজের স্বীকৃতি পেয়েছি, সেটাই অনেক বড় ব্যাপার। আর আমি অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করতে পেরেছি, সেটাও অনেক বড় প্রাপ্তি', যোগ করেন তিনি।

২০২৩ সালের ক্যানবেরার 'অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার' পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের মধ্যে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে মহাকাশ রকেট উৎক্ষেপণকারী একজন ব্যক্তি, একজন হিপ-হপ সংগীতশিল্পী, একজন পোকা বিশেষজ্ঞ চাষি ও একজন নারী।

আগামী ৯ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল গ্যালারিতে মনোনীতদের মধ্য থেকে ৪ জনের নাম ঘোষণা করা হবে। আগামী ২৫ জানুয়ারি জাতীয় পুরস্কারের জন্য রাজধানীতে জাতীয় বিজয়ী হিসেবে তারা অন্যান্য রাজ্য ও অঞ্চলের পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগদান করবেন।

ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ডে কাউন্সিলের সিইও কার্লি ব্র্যান্ড মনোনীতদের তাদের স্বীকৃতির জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'মনোনীতরা আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, অঞ্চলটি কী একটি অসাধারণ সক্রিয় সম্প্রদায়ের আবাসস্থল।'

এ পুরস্কারটি অস্ট্রেলিয়ানদের একটি ব্যতিক্রমী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ গোষ্ঠীকে সম্মানিত করে, যারা জাতীয় গুরুত্বের বিষয়গুলোতে আলোচনা এবং পরিবর্তনকে আলোড়িত করেন।

'অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড' জাতীয় অস্ট্রেলিয়া দিবস কাউন্সিলের একটি প্রোগ্রাম। প্রতি বছর দেশটি এই পুরস্কারের মাধ্যমে সেসব বিশিষ্ট অস্ট্রেলিয়ানদের কৃতিত্ব ও অবদানকে উদযাপন করে, যারা সবার জন্য আদর্শ নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা তাদের কৃতিত্বের মাধ্যমে জাতিকে অনুপ্রাণিত করেন এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক অস্ট্রেলিয়া তৈরিতে নিজ অবদান রাখার জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন।

১৯৬০ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার পুরস্কারটি অস্ট্রেলিয়া দিবসকে ঘিরে উদযাপনের অংশ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। এই সময়ে এটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জাতীয় পুরস্কার হয়ে উঠেছে ।

২০২৩ বর্ষসেরা অস্ট্রেলিয়ান পুরস্কারের মনোনীতরা হলেন—

অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার

মিকেলা জেড: প্রতিষ্ঠাতা, ইনডিজিটাল (ফিলিপ)

স্কট ওয়ালিস: প্রতিষ্ঠাতা, নিরক্ষীয় লঞ্চ অস্ট্রেলিয়া, আর্নহেম স্পেস সেন্টার (গারান)

অলিম্পিয়া ইয়ারগার: পোকা চাষের অগ্রগামী ও প্রতিষ্ঠাতা, গোটেরা (ক্যানবেরা)

হেইডি ইয়েটস: মানবাধিকার আইনজীবী এবং সম্প্রদায়ের উকিল (ক্যানবেরা)

সিনিয়র অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার

মোহাম্মদ আলী: প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, হেল্পিংএসিটি (ফ্রাঙ্কলিন)

প্রফেসর টম ক্যালমা এও: মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আইনজীবী, পরামর্শদাতা ও স্বেচ্ছাসেবক (চ্যাপম্যান)

রবার্ট কুক: শিশু আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও ওয়াররুমবুল কোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট (ক্যানবেরা)

ব্রায়ান ট্রিগ্লোন ওএএম: প্রতিষ্ঠাতা ও কন্ডাক্টর, আলকেমি কোরাস (টরেন্স)

ইয়াং অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার

ব্রাইস ক্রোনিন: প্রকৌশলী, ডিজাইনার ও প্রতিষ্ঠাতা, অ্যাক্সেস থ্রি ডি (বেলকনেন)

কফি ওউসু-আনসাহ: অভিনয়শিল্পী ও গীতিকার (ক্যানবেরা)

ক্যামিল শ্লোফেল: প্রতিষ্ঠাতা, দ্য স্টপ ক্যাম্পেইন (আইন্সলি)

হিলারি সোয়ান: শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠাতা, এমপাওয়ার (রিভেট)

লোকাল হিরো

নাজমুল হাসান: মাল্টিকালচারাল কমিউনিটি চ্যাম্পিয়ন (হোল্ডার)

গৌরব মালহোত্রা: প্রতিষ্ঠাতা, কেন বেহরেন্স হেল্পিং হ্যান্ডস (ডেনম্যান প্রসপেক্ট)

গ্যারি মালহোত্রা: প্রতিষ্ঠাতা, কেন বেহরেন্স হেল্পিং হ্যান্ডস (ডেনম্যান প্রসপেক্ট)

ক্যারল মিড: প্রতিষ্ঠাতা, পরিবর্তনের জন্য সেলাই (গর্ডন)

ডা. শামারুহ মির্জা: বিজ্ঞানী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা, সিতারার গল্প (ওয়ারমাঙ্গা)

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Discrimination Students Movement

Students to launch a party by next Feb

Student leaders who spearheaded the July-August mass uprising are planning to launch a political party by early February 2025 and contest the next general election.

8h ago