বিশ্ব মিঠাপানির ডলফিন দিবস আজ

বিলুপ্তির পথে মিঠাপানির ডলফিন, হালদাকে অভয়ারণ্য ঘোষণার দাবি

dolphin
প্রতীকী ছবি। (সংগৃহীত)

বিপন্নপ্রায় মিঠা পানির গাঙ্গেয় ডলফিনের গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল হালদা নদী। ডলফিনগুলো এই এলাকার বাস্তুতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে, গত কয়েক বছর ধরে নদী থেকে উদ্বেগজনক হারে বিলুপ্ত হচ্ছে প্রজাতিটি।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব কারণে প্রাণিটি বিপন্নপ্রায় হয়ে পড়েছে, তার বেশিরভাগই সম্পূর্ণরূপে মানবসৃষ্ট।

তাদের মতে, হালদা নদীতে ডলফিন সংরক্ষণের জন্য অবিলম্বে নদীটিকে ডলফিনের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের অক্টবর পর্যন্ত হালদা নদী থেকে ৫ বছরে মোট ৩৯টি ডলফিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে চলতি বছর মারা গেছে ৭টি ডলফিন।

শুধু জুলাই মাসেই মারা গেছে ৩টি ডলফিন। এর মধ্যে ২১ জুলাই হালদা নদীতে একটি ডলফিনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ করেন যে, এটি মাছ ধরা জালে আটকে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যেতে পারে। এর আগে ২০ জুলাই আরও একটি মৃত ডলফিন পাওয়া যায় যেটি প্রায় ৭ ফুট লম্বা এবং ৯০ কেজি ওজনের। একই মাসের ১৪ তারিখে হালদা নদীর আজীমের ঘাট এলাকায় আরও একটি ডলফিন পাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়ার মতে, 'তারা ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এমন একটি ডলফিনের মরদেহ প্রথম ময়নাতদন্ত করেন। এতে দেখা যায় নৌযানের ধারালো প্রপেলারের আঘাতে প্রাণিটির মৃত্যু হয়েছিল।'

'ওই সময়, আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে ৬ দফা সুপারিশ পেশ করেছিলাম, যার মধ্যে রয়েছে নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা, নদী থেকে মাটি তোলা বন্ধ, নদীতে মাছ ধরার জন্য ঘেরা জাল না দেওয়া এবং নদীটিকে ডলফিনের অভয়ারণ্য ঘোষণা করা', বলেন তিনি।

'কর্তৃপক্ষ ওই সব সুপারিশের বেশিরভাই বাস্তবায়ন করেছিল। ফলে মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে গিয়েছিল।'

মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, '৩টি কারণে হালদা নদীতে ডলফিনের মৃত্যু বাড়ছে। এগুলো হলো- ইঞ্জিনচালিত নৌযানের প্রপেলারের আঘাতে বা অন্যান্য আঘাতের কারণ, জালে আটকে থেকে দমবন্ধ হওয়া এবং অবৈধ শিকার।'

'একটি ডলফিন গড়ে ২৫ বছর বাঁচে, তবে পরিপক্ক হতে সময় নেয় নয় থেকে ১০ বছর এবং একটি প্রাপ্তবয়স্ক ডলফিনের একটি বাচ্চা জন্ম দিতে প্রায় ২ বছর সময় লাগে। এর অর্থ হলো একটি ডলফিন তার প্রজনন বছরে সর্বাধিক ৫টি বাচ্চার জন্ম দিতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'নদীতে দুর্ঘটনায় যে হারে ডলফিন মারা যাচ্ছে, তাতে তাদের মৃত্যুহার প্রজনন হারের চেয়ে অনেক বেশি। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে নদী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।'

এ জন্য নদীটিকে ডলফিনের অভয়রাণ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ গাঙ্গেয় ডলফিন এবং ইরাবতি ডলফিন সংরক্ষণের জন্য 'গুরুত্বপূর্ণ জলজ বাস্তুসংস্থান প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংরক্ষিত এলাকা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ'- এর অধীনে একটি কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।

ডলফিন সংরক্ষণ অ্যাকশন প্ল্যানের জাতীয় পরামর্শক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ আবদুল আজিজ পরিকল্পনাটি তৈরি করেছেন।

এতে গাঙ্গেয় ডলফিনের মোট ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে হালদা নদীর মদুনাঘাট থেকে সাত্তারঘাট এলাকা এবং হালদা মোহনায় নতুন সেতু এলাকা দুটি ডলফিনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো গাঙ্গেয় ডলফিন রক্ষা করা জরুরি কেন?

কর্ম পরিকল্পনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে গাঙ্গেয় ডলফিন খাদ্য শৃঙ্খলে একটি তৃতীয় স্তরের প্রাণি এবং প্রাজাতিটি আমাদের নদী বাস্তুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। যদিও বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো প্রধান নদীতে প্রজাতিটি পাওয়া যায়, কিছু উজানের নদীসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো প্রজাতিটির একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল।

গাঙ্গেয় ডলফিন নদী সংরক্ষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি, যাদের সুরক্ষা অন্যান্য নরম আবরণের কচ্ছপ, ঘড়িয়াল এবং মসৃণ-আবরণের শুশুকসহ বিস্তৃত জলজ এবং বিপন্ন প্রজাতির প্রাণিদের জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিষয়ে তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রজাতিটির সুরক্ষা এবং রক্ষণাবেক্ষণ নদীর বাস্তুতন্ত্রের আরও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে, যা প্রকারান্তরে নদীর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ স্থানীয় সম্প্রদায়কে উপকৃত করবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর লাল তালিকায় বিপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত হওয়ার আগেই প্রজাতিটিকে সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

যোগাযোগ করা হলে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল এর বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৯ সালে প্রণীত অ্যাকশন প্ল্যান অ্যাপ্রুভাল হতে প্রায় ২ বছর সময় লাগে। গত বছর এটি অনুমোদন দেওয়া হয় এবং এর পর থেকে আমরা মিঠাপানির ডলফিন সংরক্ষণে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।'

'অ্যাকশন প্ল্যানের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছ ' বলেও জানান তিনি। তবে কী কাজ করছেন, তা বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

14h ago