সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও যেভাবে বাড়াবেন সৃজনশীল কাজের পরিচিতি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার-প্রসার ছাড়া আজকাল কোনো কাজেই বেশি দূর এগোনো সম্ভব না; এমন একটা ধারণা আমাদের মধ্যে জোরালোভাবে গেঁথে গেছে। বিভিন্ন ধরনের শিল্পের ক্ষেত্রেও ধারণাটা একই। টুইটার, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা থাকলে মানুষের সঙ্গে সহজেই যুক্ত হতে পারেন শিল্পীরা।
তবে অনেকের কাছে এই অতি যুক্ত হবার প্রবণতা বা সবসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার তাদের শিল্পের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তারা হয়তো অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার এড়িয়ে যেতে চাইবেন।
আজকের লেখায় আমরা এ ধরনের শিল্পীদের জন্য বিকল্প কিছু উপায় নিয়ে ভাববো, যেখানে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ডামাডোলের বাইরেও অনলাইনে বিভিন্ন বিকল্প ব্যবহার করে নিজেদের অডিয়েন্সের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।
ই-মেইল মার্কেটিং
অনেকেরই ধারণা ছিল যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উত্থানের সঙ্গে ই-মেইল মার্কেটিংয়ের পতন হবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। এবং শিগগিরই এ মাধ্যমের হারিয়ে যাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রাতিষ্ঠানিক কাজে ই-মেইলের ভূমিকা এখনো বেশ এগিয়ে আছে। তাই শিল্পীদের ক্ষেত্রে অডিয়েন্সে সঙ্গে যুক্ত হবার এটি একটি ভালো পদ্ধতি।
এমনকি এর মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যমের বিশৃঙ্খলার বাইরে প্রতিদিনের যোগাযোগও সম্ভব। সফলভাবে নিউজলেটার সক্ষম করতে পারলে বিজ্ঞাপন থেকে বাড়তি উপার্জনও করা যায়। তবে ই-মেইল মার্কেটিং তালিকা করার সময় জিডিপিআরের মতো তথ্য সংরক্ষণ আইনগুলো মাথায় রাখতে হবে।
ওয়েবসাইট তৈরি
শিল্পীর সব কাজ যদি একটি ওয়েবসাইটে সংরক্ষণ করা যায়, তবে তা সবার জন্যই সহজ হয়। কনটেন্টের ক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যমের চেয়ে এখানে বেশি পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা সম্ভব হয়। যিনি লেখালেখি করেন, তার জন্য একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ব্লগ তৈরি করা যায়। অন্য চ্যানেল ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও সেই ওয়েবসাইটের রেফারেন্স দেওয়া সম্ভব। ওয়েবসাইট নির্মাণকারী হিসেবে ওয়ার্ডপ্রেস এক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে আছে। এ ছাড়া স্কয়ারস্পেস এবং উইক্সও বেশ জনপ্রিয় পছন্দ।
পডকাস্ট করা
আমাদের বর্তমান দ্রুতগতির জীবনে অডিয়েন্সের অন্যতম পছন্দ হচ্ছে পডকাস্ট। জ্যামে বসা অবস্থায়, জিমে ব্যায়াম করার সময় কিংবা ঘুমোনোর আগমুহূর্তে পডকাস্ট শোনা অনেকেরই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেক কাজের ফাঁকে যে সময়টা কিছুই করা হচ্ছে না, সে সময়টায় পডকাস্ট বেশ ভালো সঙ্গী। তাই শিল্পীরা পডকাস্টকে নিজেদের প্রচার-প্রসারের মাধ্যম করে নিতে পারেন সহজেই। এজন্য খুব দামি স্টুডিও সেটআপেরও দরকার হয় না। ভালো মানের মাইক্রোফোন থাকলে ভালো, কিন্তু আজকাল স্মার্টফোনের রেকর্ড অপশনগুলোও পডকাস্ট শুরুর জন্য বেশ উপযোগী।
পডকাস্ট শুরুর সময়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এপিসোডগুলো হোস্ট করা যায়। বর্তমান সময়ে অ্যাংকর অন্যতম জনপ্রিয়, তবে বাজস্প্রাউট, গুগল পডকাস্ট, স্পটিফাই, অ্যাপল পডকাস্ট– এমনকি ভিডিও ব্যবহার করতে চাইলে নিত্যদিনের ব্যবহার্য ইউটিউবকেও কাজে লাগানো যায়।
পরিচিতজনের মাধ্যমে পরিচিতি তৈরি
ইংরেজিতে 'ওয়ার্ড অব মাউথ' বলে যে পুরনো ঘরানার পরিচিতি মাধ্যমটি আছে, তা কিন্তু এখনো হারিয়ে যায়নি। দিনশেষে যেকোনো মাধ্যমই একে ঘিরে তৈরি হয়। তাই কারও যদি খুব বেশি প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতি না থাকে, সেক্ষেত্রে পরিবার-বন্ধুবান্ধব তথা পরিচিতজনদের মাধ্যমে প্রচারের শুরুটা করা যায়। সেক্ষেত্রে একজন শিল্পীর যদি ওয়েবসাইট বা পডকাস্ট থাকে, সেগুলোও পরিচিতজনদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে পারে।
বিজনেস কার্ড
পরিচিতজনদের মাঝে শিল্পী হিসেবে পরিচিতি বৃদ্ধির আরেকটি ভালো উপায় হচ্ছে বিজনেস কার্ড বিতরণ। তবে নিজস্ব পরিসরের মধ্যে ছাড়াও এর কার্যকারিতা রয়েছে। হয়তো কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর সেখানে অনেক নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা হলো। তাদের সঙ্গে পরিচয়ের পর তাদের আগ্রহ অনুযায়ী কুশল বিনিময়ের একটি অংশ হিসেবে বিজনেস কার্ড বিনিময় একটি ভালো সংযোগ। সেখানে শিল্পীর অন্যান্য প্রচারমাধ্যম অর্থাৎ ওয়েবসাইট, পডকাস্ট, ইমেইল ইত্যাদি যুক্ত করে দেওয়া থাকবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
এই পদ্ধতিটি অপেক্ষাকৃত পুরনো পদ্ধতি হলেও কথায় আছে 'পুরনো চাল ভাতে বাড়ে'। নিজের শিল্প সম্পর্কিত কোনো ইভেন্ট বা নতুন কোনো কাজের কথা ছড়িয়ে দেবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এখনো বেশ কার্যকর। তবে সেটি লেখার সময় যথাযথ তথ্য যাতে সংক্ষিপ্ত পরিসরে যোগান দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রচলিত কাঠামো মেনে চলাই শ্রেয়।
তথ্যসূত্র: এমইউও
গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী
Comments