লোডশেডিংয়ে উৎপাদন সংকটে ট্যানারি শিল্প, নষ্ট হচ্ছে চামড়া

সাভার চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিগুলোতে গত এক সপ্তাহ  হঠাৎ করে লোডশেডিং বেড়েছে জানিয়ে ট্যানারি মালিকেরা বলছেন এতে চরম সংকটে পড়েছেন তারা।
সাভার ট্যানারি
সাভার চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিগুলোতে গত এক সপ্তাহে লোডশেডিং বেড়েছে। ট্যানারি মালিকেরা জানিয়েছেন, দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে কারখানাগুলোতে, এতে ব্যাহত হচ্ছে কাজ। ফাইল ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/ স্টার

সাভার চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিগুলোতে গত এক সপ্তাহ  হঠাৎ করে লোডশেডিং বেড়েছে জানিয়ে ট্যানারি মালিকেরা বলছেন এতে চরম সংকটে পড়েছেন তারা।

পল্লীবিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বলছেন, চাহিদার বিপরিতে গত এক সপ্তাহ যাবত বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।

চলমান বিদ্যুতের এই সংকটের কারণে শেষ দুদিনে সরবরাহ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে এসেছে। এতে দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে এই অঞ্চলের শিল্প কলকারখানাগুলোতে।

রাইশা লেদারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিটু চৌধুরী বলেন, 'গত মঙ্গলবার টানা ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল কারখানায়। জেনারেটর দিয়ে আর কতক্ষণ সাপোর্ট দেওয়া যায়। দিনভর শ্রমিকরা বসে ছিল। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা করব কীভাবে?'

'গত দুই সপ্তাহে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার স্কয়ার ফিট কাঁচা চামড়া ওয়েট ব্লু প্রসেসের সময় স্পট পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব চামড়া তো লোকাল বাজারেও বিক্রি করতে পারব না, এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে আমাদের,' বলেন তিনি।

কুমিল্লা ট্যানারির মালিক খলিলুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমনিতেও চলমান লোডশেডিংয়ে আমাদের নাকাল অবস্থা। দিনে ২ ঘণ্টা করে দুই তিন দফায় লোডশেডিং হতো। গত দুই দিন যাবত এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এভাবে তো একটা শিল্প চলতে পারে না।'

তিনি বলেন, 'শ্রমিকদের যদি এভাবে বসিয়ে বেতন দিতে হয়, এভাবে টাকায় কেনা চামড়া নষ্ট হতেই থাকে, তাহলে কারখানায় উৎপাদন ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।'

যোগাযোগ করলে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর ট্যানারি জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. গোলাম কাদির মোল্লা বলেন, 'এতদিন লোডশেডিং থাকলেও তা সহনীয় মাত্রায় ছিল। গত দুদিন যাবত চাহিদার বিপরিতে সরবরাহ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে এসেছে। তাই বাধ্য হয়েই আমাদেরও ব্যালেন্স করতে গিয়ে ট্যানারিতে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।'

তিনি জানান, ট্যানারি জোনাল অফিসের আওতায় গড়ে প্রতিদিন ৪৬ মেগাওয়াট চাহিদা রয়েছে, যার বিপরিতে গত দুই দিন সরবরাহ ছিল ১৮ থেকে ১৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শুধু ট্যানারিতেই চাহিদা আছে ১২ থেকে ১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের।

তিনি বলেন, এর মধ্যে ৮ মেগাওয়াট নিয়ে যায় ৫টি ডেডিকেটেড ৩৩ কেবি গ্রাহকরা। এই ৮ মেগাওয়াটে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সুতরাং ১৮ মেগাওয়াটের মধ্যে ৮ মেগাওয়াট যদি মেইন লাইন থেকে নিরবিচ্ছিন্ন এসব সংযোগে চলে যায়, তাতে বাকি যা অবশিষ্ট থাকে, সেটুকু দিয়েই আমার এই পুরো জোনের ট্যানারি, অন্যান্য শিল্প কলকারখানা ও বাসাবাড়িতে সাপোর্ট দিতে হয়।'

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, লোডশেডিং যখন শুরু হয়েছিল এই সেক্টরের ঠিক পিক সিজনের মধ্যে। তখন থেকেই এই লোডশেডিং এর জন্য আমাদের প্রচুর চামড়া নষ্ট হয়েছে। আর গত এক সপ্তাহ যাবত যেটি শুরু হয়েছে, এটি তো ভয়াবহ পরিস্থিতি। টানা ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ৮ ঘণ্টার মধ্যে ৫ ঘণ্টাই যদি শ্রমিকরা বসে থাকে তাহলে উৎপাদন কীভাবে সম্ভব, চামড়া নষ্ট হওয়ার বিষয় তো আছেই।

'এভাবে চলতে থাকলে এবছর আমরা যেই রপ্তানি লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছি, তা অর্জন করা মুশকিল হয়ে যাবে,' তিনি যোগ করেন।

গত বছর দেশে চামড়া খাতের রপ্তানি ছিল ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন, যা এবছর বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ ৩ এর ডিজিএম (পিএন্ডএম) মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর আওতায় শুধু সাভার গ্রিডেই চাহিদা রয়েছে ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের, সেখানে সরবরাহ রয়েছে ১১০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট। প্রায় ৮০ থেকে ১০০ মেগাওয়াটের ঘাটতি রয়েছে বর্তমানে।

গত এক সপ্তাহ যাবত এই পরিস্থিতি চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

 

Comments

The Daily Star  | English
quota reform movement,

Govt publishes preliminary list of those killed in July-August protests

The interim government today published a preliminary list of the people who died during the student-led mass protests in July and August.

2h ago