সিজারে শিশুজন্মের হার ১৪ বছরে বেড়েছে ৮ গুণ

mother_baby_symbolic_afp.jpg
প্রতীকী ছবি | এএফপি

বাংলাদেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে (সিজারিয়ান বা সি-সেকশন) শিশুজন্মের হার ৮ গুণ বেড়েছে। ২০০৪ সালে এই হার ছিল ৪ শতাংশে। তবে, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ সালে এসে এই হার ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, এ হার ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) রিসার্চ ফেলো ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক সরকার গতকাল এক সেমিনারে 'ম্যাসিভ বুম অব সি-সেকশন ডেলিভারি ইন বাংলাদেশ অ্যা হাউসহোল্ড লেভেল অ্যানালাইসিস ২০০৪-২০১৮' শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

তিনি বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের (বিডিএইচএস) ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫টি জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করেন।

প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়েও বাংলাদেশে সিজারিয়ানের হার বেশি। ভারতে সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশুজন্মের হার ২২ শতাংশ (২০১৯-২০২১ সাল), পাকিস্তানে ২২ শতাংশ (২০১৭-২০১৮), নেপালে ১৬ শতাংশ (২০১৬) ও মিয়ানমারে ১৭ শতাংশ (২০১৫-১৬)।

যদিও বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের নারীদের মধ্যে সি-সেকশনের মাধ্যমে শিশুজন্মের ঘটনা নিয়মিত (২০০৪ সালে ১২ শতাংশ ও ২০১৭-১৮ সালে ৪৪ শতাংশ), তবে, গ্রামাঞ্চলের নারীরাও এখন একই দিকে ঝুঁকছেন।

২০০৪ সালে মাত্র ২ শতাংশ গ্রামীণ নারী সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। ২০১৭-১৮ সালে এসে তা বেড়ে ২৯ শতাংশে দাঁড়ায়। এই হারের বার্ষিক বৃদ্ধি ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে এ হার ১০ শতাংশ।

সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি ও এনজিওভিত্তিক হাসপাতালে সি-সেকশনের মাধ্যমে শিশুজন্মের হার বেশি। সেখানে এ হার যথাক্রমে ৮৩ দশমিক ৭০ ও ৪৩ দশমিক ৯০ শতাংশ।

যে বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ গবেষণা করা হয়, তার আগের ২ বছর জীবিত শিশু জন্ম দিয়েছেন, এমন ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মোট ২৭ হাজার ৩২৮ নারীর তথ্য এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সাক্ষাৎকার নেওয়া নারীরা জানান, ম্যালপ্রেজেন্টেশন, ফেইলিওর টু প্রগ্রেস ইন ল্যাবার, প্রসব যন্ত্রণা এড়ানো, প্রি-একল্যাম্পসিয়া, প্রোল্যাপসড কর্ড, ডায়াবেটিস ও আরও কয়েকটি কারণে তারা সি-সেকশনের মাধ্যমেই সন্তান জন্মদান করে থাকেন।

সি-সেকশনের জন্য সামগ্রিক খরচও বিশ্লেষণ করেছেন ডা. আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশে এর জন্য প্রয়োজন ২০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, 'সি-সেকশনের জন্য গড় খরচ সরকারি হাসপাতালে ১৩ হাজার ৬২২ টাকা ও বেসরকারিতে ২১ হাজার ৫০৬ টাকা। আর এনজিওর ক্লিনিকগুলো থেকে এ সেবা নিতে লাগে ১৬ হাজার ৮৬০ টাকা। ২০১৮ সালে মোট ৮ লাখ ৬০ হাজার সি-সেকশন হয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জনের অস্ত্রোপচারই ছিল অপ্রয়োজনীয়।'

স্থূলতায় আক্রান্ত নারীদের স্বাভাবিক ওজনের নারীদের তুলনায় সি-সেকশন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩ গুণ বেশি ছিল। পক্ষান্তরে, যেসব নারীরা ৪ বা তার বেশি বার অ্যান্টিনেটাল পরিদর্শক করেছেন, তাদের সি-সেকশনের প্রবণতা ৬ দশমিক ৯১ গুণ বেশি ছিল।

এ ছাড়াও, নিরক্ষর নারীর তুলনায় শিক্ষিত নারীর সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা ২ দশমিক ৮৭ গুণ বেশি ছিল। যেসব নারীর মাসিক আয় বেশি, তাদের মধ্যেও সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের প্রবণতা বেশি।

ডা. আব্দুর রাজ্জাকের মতে, সিজারিয়ান প্রসবের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপের জন্য কর্তৃপক্ষের উচিত যথাযথভাবে নজরদারির ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা।

নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন হক ভার্চুয়ালি ওই সেমিনারে যোগ দিয়ে পরামর্শ দেন, সন্তান জন্মদানের জন্য ধাইদের প্রশিক্ষণ পুনরায় শুরু করতে হবে এবং তাদের অবশ্যই রেফারেল চেইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

শিরীনের মতে, শতভাগ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে জন্য সরকারের যে উদ্যোগ, সেটি ছিল ভুল।

'এর ফলে রেফারেল চেইন থেকে প্রশিক্ষিত ধাইদের বাদ দেওয়া হয়েছিল', যোগ করেন তিনি।

সেমিনারটি পরিচালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারিতে সি-সেকশন বেশি হওয়ার কারণ কী, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

'গণমাধ্যমও নারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যাতে প্রসবের আগে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে তাদের আসলেই সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজন আছে কি না', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

US starts war with Iran bombing key nuclear sites

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

1h ago