টিকটকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার উপায়

২০১৮ সালের আগস্ট মাসে বাইটড্যান্স নামক একটি চীনা ভিডিও স্টার্টআপ কোম্পানি মিজিকাল.লি নামের একটি অ্যাপ কিনে নেয়। এরপর সেই অ্যাপটিকে জোড়া দেওয়া হয় অন্য আরেকটি অ্যাপের সঙ্গে। যার ফলাফল হয় টিকটক। অ্যাপটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যে এই অ্যাপ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ডাউনলোড হওয়া অ্যাপগুলোর মধ্যে অন্যতম।

তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া টিকটকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক বিলিয়নেরও বেশি। যা স্ন্যাপচ্যাট এবং টুইটারের সম্মিলিত ব্যবহারকারীর সংখ্যার দ্বিগুণ। কোনো কোনো টিকটক তারকা প্ল্যাটফর্মটি থেকে বছরে ৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেন।

টিকটক দ্রুত জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অ্যাপটির কিছু দিক নিয়ে সমালোচনাও আছে। বিভিন্ন দেশে টিকটক নিয়ে তদন্ত হয়েছে। মডারেশন এবং কন্টেন্ট নিয়ে অ্যাপটি আগেও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তবে, এবার সমালোচনার কারণ একটি শক্তিশালী রিকমেন্ডেশন অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ডেটা সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা।

যদিও টিকটকের গোপনীয়তা নীতি বেশ স্বচ্ছ তবুও অ্যাপটিতে কেউ সাইন আপ করার সময় টিকটক তার ইমেইল অ্যাড্রেস বা ফোন নম্বর এবং জন্ম তারিখ জানতে চায়। এই তথ্য আপলোড বা সংরক্ষণ না করলেও ব্যবহারকারী যা যা রেকর্ড করবেন তার সবকিছুই সংগ্রহ করে টিকটক, সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেটাডেটা।

অর্থাৎ, ব্যবহারকারী কখন, কোথায় এবং কার সঙ্গে রেকর্ড করছেন, তার সব তথ্যই টিকটক সংগ্রহ করে। এমনকি ব্যবহারকারী এই রেকর্ড করা কন্টেন্ট আপলোড কিংবা সেভ না করলেও তা টিকটকের সংরক্ষণে থেকে যায়। আর কেউ যদি ফেইসবুক দিয়ে সাইন ইন করে, তাহলে ফেইসবুকে থাকা সব তথ্যই টিকটকের কাছে চলে যাবে।

টিকটকের প্রাইভেসি সেটিংসে স্পষ্ট বলা আছে অ্যাপটি আপনার ডিভাইসের ক্লিপবোর্ড থেকে টেক্সট, ইমেজ এবং ভিডিও সংগ্রহ করবে। তবে ব্যবহারকারীদের গতিবিধি ট্র্যাক করার জন্য ডিভাইস থেকে প্রচুর পরিমাণে ডেটা সংগ্রহ করার রেকর্ড আছে টিকটকের। অ্যাপটির নিয়ন্ত্রণমূলক অ্যালগরিদমের জন্য এই ডেটা সংগ্রহের প্রক্রিয়া প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হতে পারে।

একজন ব্যবহারকারী হিসেবে সে বলতেই পারবে না যে তার কোন তথ্য কোথায় অথবা কার কাছে চলে যাচ্ছে। তবে, ব্যবহারকারী যতটা সম্ভব প্রাইভেসি রক্ষা করে যদি টিকটক ব্যবহার করতে চায়, তাহলে প্রাইভেসি রক্ষার জন্যে কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন।

টিকটকের ডেটা সংগ্রহ বন্ধ করার জন্য প্রাইভেসি সেটিংস

টিকটকের সব ফিচারের সুবিধা ভোগ করতে ব্যবহারকারীকে অ্যাপের ডেটা সংগ্রহের বেশিরভাগ শর্তে সম্মতি দিতে হবে। তবে এমন কিছু সেটিংস আছে যা ব্যবহারকারীকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ডেটা লক করার সুবিধা এবং পারসোনালাইজড বিজ্ঞাপন বন্ধের সুযোগ এনে দেয়।

পারসোনালাইজড বিজ্ঞাপন বন্ধ করার জন্য প্রথমে টিকটকের 'মি' অপশন বেছে নিতে হবে। এরপর সেটিংস থেকে প্রাইভেসি, এবং তারপর সেফটি অপশন বেছে নিতে হবে। এখানে 'পার্সোনালাইজ এবং ডেটা' নামক একটি ফিচার দেখা যাবে, এটি 'অফ' করে দিলেই ব্যবহারকারীর বেশ কিছু ডেটা ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে।

সাইন ইন করার জন্য থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন

অন্যান্য অনেক অ্যাপের মতোই টিকটক তার ব্যবহারকারীদেরকে ফেইসবুক এবং টুইটার সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্ল্যাটফর্মে সাইন ইন করতে দেয়। সাইন ইন-এর প্রতিটি তথ্যের ঘর পূরণ করে সাইন ইন করার চেয়ে পুরনো কোনো অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করে ফেলা সহজ মনে হতে পারে।

তবে, এটি টিকটককে এই সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টে থাকা সব তথ্য ও ডেটা নির্বিঘ্নে সংগ্রহ করতে অনুমতি দিয়ে দেয়। আর এই ফিচারটি অ্যাপটিকে অনলাইনে ব্যবহারকারীর গতিবিধি নিরীক্ষণ করতে সহায়তা করে। তাই সাইন ইন করার জন্য থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলতে হবে।

টিকটকের গোপনীয়তা নীতিতে স্পষ্টভাবে বলা অ্যাছে যে এটি থার্ড পার্টি অ্যাপ থেকে ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করতে পারে, এমনকি তার অনুমতি ছাড়াই। তাই প্রথমবার টিকটকে সাইন-ইন করার সময় ব্যবহারকারীর সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করে ফোন অথবা ইমেইল অ্যাড্রেসটি বেছে নিতে পারে। এর ফলে ইমেইল এর ডেটা টিকটক সংগ্রহ করলেও ফোন নম্বর ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা এড়ানো যাবে।

বিভিন্ন অ্যাপ এবং ব্রাউজারে 'কুকিজ' এর অনুমোদন দেওয়া থেকে বিরত থাকুন

টিকটক এর গোপনীয়তা নীতিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে অ্যাপটি ব্রাউজারের কুকি থেকে ডেটা সংগ্রহ করবে। এবং এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থাকুক বা না থাকুক, তাতে কিছু পরিবর্তন হবে না।

আবার ব্রাউজারে সংরক্ষিত কুকিগুলো ব্যবহারকারীর মোবাইল অ্যাপের ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে, যা আবার পৌঁছে যেতে আরে টিকটকের কাছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবহারকারীর কখনও কখনও তার ব্রাউজার থেকে সরাসরি ইন্সটাগ্রাম, টুইটার এবং ফেইসবুক অ্যাক্সেস করে। ফলে, এই অ্যাপগুলোর কুকিগুলো টিকটক চাইলে সংরক্ষণ করতে পারে।

লোকেশন ট্র্যাকিং এড়াতে ব্যবহারকারী তার আইপি অ্যাড্রেস প্রকাশ না করে ব্রাউজ করতে পারেন। আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করার মাধ্যমে অযাচিত কেউ ব্যবহারকারীকে ট্র্যাক করতে পারে। ভিপিএন এখানেই ব্যবহারকারীকে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও প্রাইভেট ব্রাউজিং, 'কনট্যাক্ট ও ফেইসবুক সিংক' বন্ধ করার মাধ্যমে ব্যবহারকারী টিকটকের ডেটা সংগ্রহের পরিমাণ সীমিত করতে পারেন।

 

তথ্যসূত্র: ওয়্যার্ড, ফোর্বস, মেইক ইউজ অফ

 

Comments