মোবাইল ফোন আসক্তি কমাতে যা করবেন

ছবি: টিওয়াইএন

বর্তমানে প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা এত বেশি সম্পর্কিত যে, কিছুক্ষণ এ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই; এই বুঝি কত কিছু মিস করে গেলাম। এর ফলে কোনো নোটিফিকেশন বা অ্যালার্ট ছাড়াই কিছু মানুষ অন্তত ১৫ মিনিটে একবার করে তাদের ফোন চেক করেন। 

মোবাইল ফোনে অধিক সময় ব্যয় করা কেবল সময়ের অপচয় নয়, মানসিকভাবে ক্লান্তিকরও বটে। মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার প্রায়ই নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে। তাই স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি কমানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা এবং সেই অনুযায়ী কমিয়ে ফেলা অবশ্যই একটি ভালো সিদ্ধান্ত।

ফোন ব্যবহারের অভ্যাস কমানো উচিত বলে মনে করেন কি?

কত ঘন ঘন এবং কতক্ষণ ধরে ফোন ব্যবহার করছেন সেটা ট্র্যাক করার বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। ফোন খুব বেশি ব্যবহার করছেন এমনটা পুরোপুরি বিশ্বাস না হতে চাইলে অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্টফোনে স্ক্রিনটাইম ডেটা দেখেও আসক্তি কমাতে পারেন। এ ছাড়া ফোন আসক্তি কমাতে যে ব্যবস্থাগুলো নিতে পারেন, সেগুলো হলো-  

নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন

আপনার ফোনে যখন একের পর এক নোটিফিকেশন আসার শব্দ বন্ধ হবে, তখন ফোনের আসক্তি উপেক্ষা করা কিছুটা সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে কাস্টমাইজ সেটিংস অপশনে গিয়ে অফিসের বা খুব বেশি প্রয়োজনীয় মানুষের ছাড়া বাকিদের নোটিফিকেশন অফ করে রাখা যেতে পারে। এতে আপনার ফোনের প্রতি আসক্তি কিছুটা কমতে পারে। 

ফোনে রাখুন একটি রাবার ব্যান্ড

অবচেতন মনে ফোন ব্যবহার বন্ধ করতে ফোনের চারপাশে একটি রাবার ব্যান্ড জড়িয়ে নিতে পারেন। এতে ফোন ব্যবহারের সময় সেটিতে হাত পড়লে ব্যবহার কমানোর কথা মনে পড়তে পারে। এ ছাড়া রাখতে পারেন কোনো স্ক্রিনসেভার। এটি করলে উদ্দেশ্যহীনভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সময় বাঁচবে।

অ্যালার্ম ঘড়ির ব্যবহার

মোবাইল ফোনটি অ্যালার্মের কাজে ব্যবহার করলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এলার্ম বন্ধ করে প্রথমে অপ্রয়োজনে মেসেঞ্জার বা মেইল বক্স চেক করার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করলে ফোন ব্যবহার ছাড়াই অতিরিক্ত কিছু সময় বাঁচানো যায়। এ ছাড়া ভিন্ন একটি রুমে ফোন চার্জে দেওয়া এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে ফোন চেক করা যেতে পারে।

গো কোল্ড তুর্কি

এর মাধ্যমে মূলত অবিলম্বে কোনো আসক্তি কমানোকে বোঝানো হয়। বিশেষজ্ঞরা ফোন ব্যবহার না করে ৩ দিন কাটানোর পরামর্শ দেন। যা মাত্রাতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের অভ্যাস কমাতে সাহায্য করে। প্রথমে শুধু কল এবং এসএমএস করার মাধ্যমে এটি ব্যবহারে সহনশীলতা এনে, চাইলে এরপর ধীরে ধীরে অতিরিক্ত অন্যান্য কাজগুলো করা শুরু করতে পারেন।

কিছু সময় প্রযুক্তি থেকে দূরে

যদি ৩ দিন ফোন ছাড়া বেঁচে থাকার চিন্তা করতে না পারেন, তাহলে অন্তত বাসায় ফোন-ফ্রি সময় নির্ধারণ করুন (চাইলে অন্যান্য ডিজিটাল গ্যাজেটও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন)। সেটা হতে পারে প্রতি রাতের খাবারের ১ বা ২ ঘণ্টা আগে বা প্রতি রোববার বিকেলে। এর পরিবর্তে বেড়াতে যাওয়া, কার্ড খেলা, বোর্ড গেইম বা এমন কিছু করা যা সরাসরি আলাপ এবং যোগাযোগের সুযোগ করে দেয়।

অফ লাইনেই করুন আনন্দের পরিকল্পনা

মোবাইল সরিয়ে বই পড়া কিংবা নিজের পোষা প্রাণীকে পার্কে নিয়ে যাওয়ার মতো কিছু সাধারণ কাজ করা যায়। এসবের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার না করলেও চলে। তার পরিবর্তে, কিছু বন্ধু বা প্রতিবেশীকে কফি খাওয়ার বা জগিং করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো যায়। সরাসরি দেখাও করা যায়। তাদের জানান, আপনি ফোনের ব্যবহার সীমিত করেছেন এবং তারাও চাইলে অনুসরণ করতে পারে।

নো-ফোন জোন তৈরি করুন

বিশ্রামের সময় বাইরে সব জায়গায় ফোন নিয়ে যাওয়া মোটেও ভালো কিছু না। ফোনকে জীবনের কিছু কিছু অংশ থেকে দূরে রাখা উপকারী হতে পারে। বিশেষত, মৌলিক স্বাস্থ্যবিধির কারণে। যেমন: মিটিং, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলার সময় এবং গাড়ি চালানোর সময়। অল্প সময়ের জন্য হলেও এগুলো মোবাইল ছাড়া মানিয়ে নেওয়ার ভালো পদ্ধতি।

ডু নট ডিস্টার্ব মুড

প্রায় সব মোবাইল ফোনেই 'ডু নট ডিস্টার্ব' অপশন থাকে। যা প্রতিদিন একটি পূর্বনির্ধারিত সময়ে মোবাইলে ফাংশনের কিছু বৈশিষ্ট্য সীমিত করে দেয়। বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা এবং মধ্যরাতের পরে কল এবং এলার্টগুলো বন্ধ করা যায়।

যতটা সম্ভব কম অ্যাপস রাখুন

মোবাইল গেমসগুলো আপনাকে বারবার মোবাইলে ফিরিয়ে আনে, যদি সেগুলো ডিলিট না করা হয়। বরং আপনি কম্পিউটারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন এবং ফোন, টেক্সট ও ই-মেইলের জন্য ফোন ব্যবহার করতে পারেন।

সহায়ক সরঞ্জাম

কিছু অ্যাপস নির্দিষ্ট সময়ে বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ফাংশন লক করে আপনার ফোন ব্যবহার সীমিত করতে পারে। আবার কিছু অ্যাপস প্রতিদিন ৫ হাজার কদম হাঁটার কিংবা এ জাতীয় কাজের জন্য উৎসাহিত বা পুরস্কৃত করে।

প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণ

আপনি ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন কিন্তু উদ্বিগ্ন এটা ভেবে যে, অন্যরা এটা কীভাবে দেখবে, অভদ্রতা হয়ে যাবে কি না। এ ক্ষেত্রে সরাসরি অন্যদের জানান, ফোনের ব্যবহারের কমানোর চেষ্টা করছেন বলেই রেসপন্স করতে সময় লাগছে।

'ডাম্বফোন' বা সাধারণ কী-প্যাড মোবাইলের ব্যবহার

ফোন যদি হয় ছোটখাট একটি কম্পিউটার, ব্যবহার তো করতে মন চাইবেই। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার কমাতে একটি কী-প্যাড ফোন যা দিয়ে কেবল কল এবং এসএমএস পাঠানো যায় কিন্তু অ্যাপ ডাউনলোড বা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ নেই এ ধরনের ফোন ব্যবহার করতে পারেন। 

মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার করতে শেখাও হতে পারে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। নিজেকে প্রযুক্তির খাঁচায় আবদ্ধ না রেখে চারপাশ উপভোগ করা উচিত।

 

অনুবাদ করেছেন তানজিনা আলম

 

Comments

The Daily Star  | English

Local mechanics rev up the road, now govt needs to catch up

Amid the worldwide development of electric vehicles, which is changing the traffic landscape away from fossil fuels, Bangladeshi mechanics brought their humble version of an e-vehicle to the road: a battery-run rickshaw -- awkwardly wired, with visible battery units slinging on the back.

14h ago