যাত্রী কল্যাণ সমিতি

রাজধানীর গণপরিবহনে দিনে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

যাত্রী কল্যাণ সমিতি
জাতীয় প্রেসক্লাবে যাত্রী অধিকার দিবসের আলোচনা সভায় রাজধানীর গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে গণপরিবহণে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে যাত্রী অধিকার দিবসের আলোচনা সভায় একথা জানানো হয়।

তারা বলেন, বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপে যাত্রীদের কাছ থেকে এ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়।  

ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে, পণ্যমূল্য বেড়েছে, সামাজিক অপরাধ বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।

সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, 'গত ১ বছরে দুই বার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় গণপরিবহন ভাড়া। এতে অস্থির হয়ে উঠে গণপরিবহন খাত। বর্তমানে নগরীর কোনো পরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নেই।'

তিনি বলেন, 'অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এই সময়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় তর্কের জেরে গণপরিবহগুলোতে ২৫টি যাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। এতে বাস থেকে ফেলে ১৪ যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে ১০ জন যাত্রী। এতে গণপরিবহন ব্যবহারে যাত্রীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হয়।'

এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে বলে জানান বক্তারা।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জাইকার সমীক্ষানুযায়ী রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। কোনো কোনো পরিবহনে দ্বিগুণ-তিন গুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষণকালে বিভিন্ন যানবাহনের চালক, সহকারী ও ভাড়া আদায়কারীর সাথে কথা বলা হয়।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, রাজধানীর ৫ হাজার বাস-মিনিবাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। লক্কড়-ঝক্কড় এসব সিটি সার্ভিসের শতভাগ বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব বাস-মিনিবাসে যাতায়াতে যাত্রী প্রতি মাথাপিছু গড়ে ১৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। এতে ৫০ লাখ ট্রিপ যাত্রী দৈনিক গড়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছে।

এছাড়াও রাজধানীতে ১৫ হাজার বৈধ অটোরিকশার পাশাপাশি আরও ১৫ হাজার ঢাকা ও আশেপাশের জেলায় নিবন্ধিত অটোরিকশা অবৈধভাবে চলাচল করে বলে জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ৩০ হাজার অটোরিকশা দৈনিক গড়ে ১২ ট্রিপ হিসেবে ৩ লাখ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করে। এসব অটোরিকশায় প্রতিট্রিপে গড়ে ১৪৫ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় হয়। এতে দৈনিক ৩ লাখ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রীকে অটোরিকশা খাতে কেবল বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

হিউম্যান হলারের ভাড়া নির্ধারণের আইন থাকলেও সরকার ভাড়া নির্ধারণ না করায় বরাবরই দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়ায় যাতায়াত করতে হচ্ছে নিম্নআয়ের যাত্রী সাধারণকে। ১২ হাজার বৈধ হিউম্যান হলারের পাশাপাশি মেয়াদোর্ত্তীণ, স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি আরও প্রায় ১৮ হাজার হিউম্যান হলারসহ ৪০ হাজার হিউম্যান হলার রাজধানীতে দৈনিক গড়ে ৮০ লাখ ট্রিপ যাত্রী বহন করে। প্রতিট্রিপে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। এতে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা কেবল হিউম্যান হলারের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে বলে জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

এছাড়া, ৫ লাখ রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, ট্যাক্সিক্যাবে দৈনিক গড়ে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করছে। এসব যানবাহনে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৭৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব যানবাহনে প্রতিদিন গড়ে ১৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

ভাড়া নৈরাজ্য প্রতিরোধে ১০টি দাবির কথা জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর মধ্যে--পরিবহন খাত আমুল সংস্কার, ভাড়া নির্ধারণে মালিক সমিতি একচ্ছত্র আধিপত্য বন্ধে আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে বাসভাড়া নির্ধারণ কমিটি পূণর্গঠণ, বাস ভাড়ার তালিকা সংস্কার, পজ মেশিনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টিকিটে ভাড়া আদায় উল্লেখযোগ্য।

Comments