সৌরভী কি তবে দমে যাবে

সৌরভী রায়
সৌরভী রায়। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

এক মনোরম চা-বাগানে জন্ম নেওয়া সৌরভী রায় সফল ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিশোর বয়স থেকে ফুটবল খেলে অনেক প্রশংসিত হয়েছিল তিনি। কিন্তু, তার সব অর্জন এখন ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

চা-শ্রমিক বাবা তাকে দেশের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাকে বিকেএসপিতে পাঠিয়েছিলেন শেষ সামর্থ্য দিয়ে।

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সৌরভীকে ৬ মাসের মধ্যে বিকেএসপি থেকে ফিরে আসতে হয়েছে বেগম খান চা-বাগানে।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই সৌরভী নিজেদের বাড়ির উঠানে সকাল-বিকাল ফুটবল খেলতেন। ওই সময় খুব বেশি নারী খেলোয়াড় ছিল না। তিনি ছেলেদের সঙ্গে খেলতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন।'

সৌরভী রায়
বাবা সূর্য কুমার রায়ের সঙ্গে সৌরভী রায়। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

২০১৬ সাল থেকে সৌরভী স্থানীয় টুর্নামেন্টে খেলতে শুরু করেন। তিনি নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাহের শামছুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের স্ট্রাইকার ছিলেন। তার স্কুল ৪৬তম সামার স্কুল জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০১৭ মাদ্রাসা স্পোর্টসে সিলেট বিভাগের চ্যাম্পিয়ন হয়।

২০১৯ সালে সৌরভী প্রথম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে (অনূর্ধ্ব-১৬) উপজেলা ও জেলা দলের নেতৃত্ব দেন। উপজেলা পর্যায়ে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চ্যাম্পিয়ন হয় এবং তিনি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন।

জেলা পর্যায়ে তার দল সিলেটের রানার্স আপ হয় এবং সৌরভী আবারও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।

২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও অনুশীলন চালিয়ে যেতে থাকে সৌরভী।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে তাকে বিকেএসপিতে পাঠানো হয়। সেখানেও তিনি বেশ ভালো করছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংগঠনের (উৎস) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ কৈরি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফুটবলার সৌরভী রায় ক্যাম্প শেষ করে এখন বাগানে আছেন। মাঝে মাঝে তিনি সুরমা চা-বাগানে প্র্যাকটিস করতে যান। কিন্তু, নিয়মিত যেতে পারেন না।'

'সৌরভীর স্বপ্ন মনে হয় স্বপ্নই থেকে যাবে। তিনি চা-বাগানের মেয়ে এবং তাকে কোনো ক্লাবে ভর্তির সামর্থ্য তার বাবার নেই,' যোগ করেন তিনি।

সৌরভীর বাবা সূর্য কুমার রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুরমা টি এস্টেটে গিয়ে মেয়ের অনুশীলন করার ভাড়া জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই বিকেএসপিতে সৌরভীকে আর রাখতে পারিনি।'

'আমরা তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারি না। একমাত্র মেয়েকে ঠিকমতো লেখাপড়া করাতে পারিনি। অনেক কষ্টে মেয়েকে এতদূর নিয়ে এসেছি। আমি আর পারছি না,' বলেন তিনি।

মেয়েকে দেশের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে সূর্য কুমার রায়ের।

সৌরভীর মা কুসুম রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের মেয়ের স্বপ্ন পূরণে প্রধান বাধা অর্থ সংকট।'

তবে হাল ছাড়েননি সৌরভী রায়।

'আমাকে ফুটবলার হতেই হবে। ভালো ফুটবলার হতে অনেক খরচ। আমার বাবা স্থায়ী চা-শ্রমিক। তার সামান্য আয়ে পরিবার চলে। ইতোমধ্যে বাবা আমার জন্য তার সব সম্পদ শেষ করে দিয়েছেন,' বলছিলেন সৌরভী।

সূর্য কুমার রায় বলেন, 'অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে মেয়েকে এত দূর এনেছি। মানুষের সহযোগিতা পেলে ওর স্বপ্ন পূরণ হতো।'

Comments

The Daily Star  | English

Dengue turns deadlier for Ctg in Nov

So far, 35 dengue patients died in Chattogram this year, including 10 in just the first two weeks of this month alone. The death toll is likely to rise further by the end of the month

38m ago