পদ্মায় পানি বৃদ্ধি: দৌলতপুরে ২০ গ্রাম পানিবন্দি, বন্ধ ৮ স্কুল

গত কয়েকদিনে পদ্মার পানির অব্যাহত বৃদ্ধির ফলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মাপাড়ের ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, তলিয়ে গেছে প্রায় ৩০০ বিঘা আবাদি জমি।
ফাইল ফটো

গত কয়েকদিনে পদ্মার পানির অব্যাহত বৃদ্ধির ফলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মাপাড়ের ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, তলিয়ে গেছে প্রায় ৩০০ বিঘা আবাদি জমি।

প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ছে। তলিয়ে যাচ্ছে মাষকলাই, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের আবাদি ফসল। ইতোমধ্যে অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত এসব এলাকার ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

উপদ্রুত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে উপজেলার চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর ও ফিলিপনগর ইউনিয়ন।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রতিদিন নদীতে গড়ে ১২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে পানি বেড়েছে অন্তত ৮২ সেন্টিমিটার। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমা হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৫ মিটার। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ ছিল। বর্তমানে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় অন্তত ৩০০ বিঘা আবাদি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে মাষকলাই, মরিচসহ অন্যান্য ফসলের খেত ডুবে গেছে। বেশ কিছু উঠতি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, তার ইউনিয়নের অন্তত ১৮টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। চলাচলের রাস্তাঘাটও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। একটি মাদরাসা ও ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেতে পারছে না।

তিনি জানান, ওই ইউনিয়নে নদীভাঙনও দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে বিস্তীর্ণ এলাকার আবাদি জমি, কয়েকশ ঘর-বাড়িসহ চরচিলমারী বিজিবি ক্যাম্প, জোতাশাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়েছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল জানান, তার ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি। পদ্মার চরের বিস্তীর্ণ আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর ফলে চরের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, 'চিলমারী ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা হাতে পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্য ইউনিয়নের তালিকা এখনো পাইনি।'

বন্যা কবলিত হারুন আলী আসকারী বলেন, 'কাজে যেতে পারছি না। পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে গেছি। খাওয়ার পানিরও সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।'

তিনি জানান, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষ। বাড়ি-ঘরের চারপাশ পানিতে ডুবে থাকায় এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাতায়াতের জন্য ছোট-বড় ও ডিঙি নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। চিলমারী ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ১১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্য ইউনিয়নে সরেজমিনে খোঁজখবর নেওয়ার পর এ সম্পর্কে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

PM’s India Visit: Dhaka eyes fresh loans from Delhi

India may offer Bangladesh fresh loans under a new framework, as implementation of the projects under the existing loan programme is proving difficult due to some strict loan conditions.

9h ago