রিজওয়ান-নাওয়াজের ঝলকের পর শেষ ওভারের উত্তেজনায় জিতল পাকিস্তান
চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় এক প্রান্ত আগলে দলকে টানলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। চারে প্রমোশন পেয়ে ফাটকা কাজে লাগিয়ে ঝড় তুললেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। শেষ দিকে জীবন পাওয়া আসিফ আলি খেললেন কার্যকর ইনিংস। আর্শ্বদীপ সিংয়ের শেষ ওভারেও হলো নাটকীয়তা। তবে সব পার করে রোমাঞ্চকর জয় পেল বাবর আজমের দল।
রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বে হারলেও এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল তারা। এদিন আগে ব্যাটিং পেয়ে ভারত করেছিল ১৮১ রান। ১ বল আগে ওই রান পেরিয়ে যান রিজওয়ানরা।
দলকে জেতাতে ৫১ বলে ৭১ করে বড় অবদান রিজওয়ানের। তবে মাত্র ২০ বলে ৪২ করে মোড় ঘোরানোর নায়ক নাওয়াজ। আর্শ্বদীপের হাতে জীবন পেয়ে আসিফ আলির ৮ বলে ১৬ রানের ইনিংসও তাদের জয়ে রাখল বড় ভূমিকা।
পাকিস্তানের জিততে শেষ ৩ ওভারে দরকার ছিল ৩৫ রান। রবি বিষ্ণুইর ওভারে হলো নাটকীয়তা। আসিফের বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদন নাকচ হলে রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয় ভারত। পরের বলেই সহজ ক্যাচ তুলে দেন আসিফ। কিন্তু আর্শ্বদ্বীপ সিং শর্ট থার্ড ম্যানে ফেলে দেন লোপ্পা ক্যাচ। ওই ওভার থেকে আসে ৮ রান।
শেষ দুই ওভারে লাগত ২৬ রান। সেটা সহজ হয়ে যায় আসিফের ব্যাটে। ভুবনেশ্বর কুমারের ওভারে এক ছক্কা, দুই চার মেরে সমীকরণ সহজ করে দেন তিনি। শেষ ৬ বলে ৭ রান হলেই চলত। তরুণ আর্শ্বদ্বীপ প্রথম দুই বলে ৫ রান দেওয়ার তৃতীয় বল করেন ডট, চতুর্থ বলে আউট করে দেন আসিফকে। ২ বলে ২ রান আর আটকাতে পারেননি। পঞ্চম বলটি ছিল ফুলটস। ইফতেখার আহমেদ সোজা ব্যাটে খেলে নিয়ে নেন এক রান।
দুবাইরের মাঠে রাতের আলোয় পরে ব্যাট করা দলই পায় সুবিধা। টস হারা ভারত ম্যাচ জেতার আশা বড় করতে আনে উড়ন্ত উড়ন্ত শুরু। পাওয়ার প্লেতে ঝড় তুলে দুশো ছাড়ানোর আশা জাগিয়েছিলেন রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল। কিন্তু মাঝের ওভারে মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় খেই হারায় তারা। পরে বিরাট কোহলি নৈপুণ্যে আসে লড়াইয়ের পুঁজি। কোহলি করেন ৪৪ বলে ৬০ রান। কিন্তু সূর্যকুমার যাদব, রিশভ পান্ত হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যার্থতায় পুড়তে হয় তাদের। অন্তত ১৫ থেকে ২০ রানের ঘাটতি ছিল স্পষ্ট।
রান তাড়ায় পাকিস্তানের ভাল শুরুর পথে প্রথম বাধা আসে চতুর্থ ওভারে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার খেলতে নামা লেগ স্পিনার বিষ্ণুই আউট করে দেন বাবরকে। বিষ্ণুইর বলের গতি পড়তে গড়বড় করে শর্ট মিড অনে ক্যাচ দেন ১০ বলে ১৪ রান করা বাবর। ২২ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান।
এরপর রিজওয়ান বের করেন দারুণ কিছু বাউন্ডারি, আসে ছক্কাও। পাওয়ার প্লে বিফলে যেতে দেননি তিনি।
তিনে নামা ফখর জামান দ্রুত রান আনতে ধুঁকছিলেন। যুজভেন্দ্র চেহেলের বলে পুষাতে গিয়ে ইতি তার। সরে গিয়ে কাভার দিয়ে এক বাউন্ডারি পাওয়ার পর লঙ দিয়ে উড়াতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা দেন তিনি। ১৮ বলে এই বাঁহাতি করেন ১৫ রান।
রান তাড়ায় চাপ দেখে চার নম্বরে নাওয়াজকে পাঠিয়ে দেয় পাকিস্তান। সেই সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগান তিনি। মাঝের ওভারে বিস্ফোরক ইনিংস খেলে বদলে দিতে থাকেন ম্যাচের ছবি।
২০ বলে ৪২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে তিনি যখন ক্যাচ দিয়ে ফিরছেন, ততক্ষণে ম্যাচ অনেকটা মুঠোয় পাকিস্তানের। রিজওয়ান ছিলেন তেতে, খেলে রেখেছিলে ধরে। তবে কাজটা অসমাপ্ত রেখে ফেরেন তিনিও। ১৭তম ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় নেন ৫১ বলে ৭১ করা কিপার ব্যাটসম্যান।
শেষ দিকের সমীকরণ কিছুটা যখন কঠিন হয়ে যাচ্ছিল জীবন পাওয়া আসিফ সেটা করে দেন সহজ। এক বল আগে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা।
এদিন পাওয়ার প্লেতে ৬২ রান এনেছিল ভারত। ১০ ওভারে তাদের বোর্ডে ছিল ৯২ রান। কিন্তু এরপর খেলার গতি মন্থর হয়ে যায়। পাঁচে নামা পান্ত দীনেশ কার্তিকের জায়গায় সুযোগ পেয়ে টি-টোয়েন্টিতে নিজের কার্যকারিতে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
বেশ কয়েকটি ডট বল খেলে তিনি ফেরেন ১২ বলে ১৪ রান করে। আগের ম্যাচের হিরো হার্দিক এদিন ছিলেন ব্যর্থ। ২ বল খেলে কোন রান না করেই ক্যাচ দেন।
কোহলি শেষ পর্যন্ত টিকে টানছিলেন দলকে। দীপক হুডা কিছু শট খেললেও ঝড় তুলতে পারেননি। হুডাকে পরে বোলিংয়েও ব্যবহার করেননি রোহিত।
এই হারের ফলে ফাইনালে যেতে হলে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাকি দুই ম্যাচ জিততেই হবে ভারতকে।
Comments