রাজা-চাকাভার সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে সিরিজ হারাল জিম্বাবুয়ে
বাংলাদেশের দেওয়া প্রায় তিনশ ছোঁয়া লক্ষ্য তাড়ায় মহাবিপাকে পড়েছিল জিম্বাবুয়ে। ৪৯ রানে তারা হারিয়ে ফেলেছিল ৪ উইকেট। সেই দুর্যোগ সামলে পাল্টা আক্রমণে ২০১ রানের রেকর্ড জুটি গড়লেন সিকান্দার রাজা ও অধিনায়ক রেজিস চাকাভা। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের অপরাজিত থাকলেন ছন্দে থাকা রাজা। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো তিন অঙ্কের স্বাদ নিলেন চাকাভা। তাদের নৈপুণ্যে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিজেদের করে নিল জিম্বাবুয়ে।
রোববার হারারেতে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে জিতেছে স্বাগতিকরা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৯০ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ১৫ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে জিম্বাবুয়ে। নয় বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতার স্বাদ পেল তারা। শেষবার ২০১৩ সালে ঘরের মাঠেই তারা টাইগারদের হারিয়েছিল ২-১ ব্যবধানে। দুই দলের মাঝের পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয়েছিল জিম্বাবুয়ে।
অলররাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা রাজা ১২৭ বলে ১১৭ রান করেন। তার ব্যাট থেকে আসে ৮ চার ও ৪ ছক্কা। বোলিংয়েও নজর কাড়েন তিনি। অফ স্পিনে ৫৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের সফল বোলার তিনিই। চাকাভা করেন ১০২ রান। মাত্র ৭৫ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ১০ চার ও ২ ছক্কা। শেষদিকে সমান ২টি করে চার ও ছয়ে ১৬ বলে ৩০ রানের অপরাজিত ক্যামিও ইনিংস খেলেন অভিষিক্ত টনি মুনিয়োঙ্গা।
ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই টাকুজওয়ানাশে কাইটানোকে বিদায় করেন ১৬ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নামা হাসান মাহমুদ। অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের চমৎকার ডেলিভারিতে পরাস্ত হন এই ওপেনার। ডানদিকে ঝুঁকে বল গ্লাভসবন্দি করেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। ১ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি কাইটানো।
নিজের পরের ওভারে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইনোসেন্ট কাইয়াকে সাজঘরে পাঠিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন মাহমুদ। এই আউটটি যেন কাইটানোর উইকেটেরই রিপ্লে! অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মারেন কাইয়া। মুশফিক ক্যাচ নিলে থামে তার ৮ বলে ৭ রানের ইনিংস।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে আরও একবার উইকেটের উল্লাস করে তামিম ইকবালের দল। অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বল সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন ওয়েসলি মাধেভেরে। ১৬ বলে ২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ওপেনার টাডিওয়ানাশে মারুমানি একপ্রান্ত আগলে ছিলেন। আক্রমণে গিয়েই তাকে ছাঁটেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৪২ বলে ২৫ রান করে শর্ট কভারে ক্যাচ দেন তিনি।
এরপর শুরু হয় রাজা ও চাকাভার লড়াই। পাওয়ার প্লেতে ভীষণ আঁটসাঁট ছিলেন বাংলাদেশের পেসার-স্পিনাররা। তাদের সেই সাফল্যের ধারা বজায় থাকেনি। চাকাভা ক্রিজে যাওয়ার পর থেকেই ব্যস্ত ছিলেন রান তোলায়। মন্থর শুরুর পর রাজাও গতি বাড়াতে থাকেন। এক পর্যায়ে, তার রান ছিল ৩৬ বলে ১৭।
২৬তম ওভারে মিরাজের বল উইকেটের পেছনে ঠেলে দিয়ে দ্রুত সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রাজা। কিন্তু চাকাভার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হতে পারতেন তিনি। ফিল্ডার শরিফুল ইসলামের থ্রো দুই হাতে জমাতে পারেননি নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা মিরাজ। বল তার ডান হাতে থাকলেও তিনি স্টাম্প ভাঙেন বাঁহাতে। ফলে বেঁচে যান ৪২ রানে থাকা রাজা। অনেকটা সময় নিয়ে রিপ্লে দেখে নটআউটের সিদ্ধান্ত দেন তৃতীয় আম্পায়ার।
আগের ম্যাচে একই ওভারে সেঞ্চুরি করেছিলেন রাজা ও কাইয়া। এদিন কাইয়ার জায়গা নেন চাকাভা। মাহমুদের করা ৪৩তম ওভারের প্রথম বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন রাজা। তার লাগে ১১৫ বল। ওই ওভারের চতুর্থ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছান চাকাভা। ৩৬ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর তিনি সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৭৩ বলে।
মিরাজকে ওড়াতে গিয়ে থামেন চাকাভা। ফলে ভাঙে ১৬৯ বলে ২০১ রানের জুটি, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ। এতে পেছনে পড়ে প্রথম ওয়ানডেতে রাজা ও কাইয়ার ১৯২ রানের জুটি।
এই ব্রেক থ্রু কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। রাজা ও মুনিয়োঙ্গার ২৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪১ রানের জুটিতে ম্যাচ জিতে নেয় জিম্বাবুয়ে। ৪৭তম ওভারে শরিফুলের বলে শর্ট ফাইন লেগে তাসকিন ফেলে দেন মুনিয়োঙ্গার ক্যাচ। পরের তিন বলে তিনি মারেন যথাক্রমে ৪, ৬ ও ৬।
এর আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কল্যাণে ২৯০ রান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বাংলাদেশ। পাঁচে নেমে ৮৪ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে সমান ৩টি করে চার ও ছক্কা। এক পর্যায়ে, তার রান ছিল ৫০ বলে ২৭। বলের লাইনে যেতে পারছিলেন না, টাইমিং করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছিল। মুখোমুখি হওয়া পরের ৩৪ বলে অবশ্য ৫৩ রান আনেন তিনি।
প্রথম ওয়ানডেতে কিছুটা ধীর গতিতে ব্যাট করে বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন অধিনায়ক তামিম। দ্বিতীয় ওয়ানডের শুরু থেকেই রানের গতি সচল রেখে ব্যাটিং করেন তিনি। ৪৫ বলে ১০টি চার ও ১টি ছয়ে ৫০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। আফিফ হোসেন ৪টি চারের সাহায্যে করেন ৪১ বলে ৪১ রান।
Comments