‘এটা উন্নয়নের জোয়ার না, অধিকার হরণের জোয়ার’

মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ফটো

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় দেশের কৃষকরা চোখে অন্ধকার দেখছেন। কিন্তু এতে সরকারের কিছু যায় আসে না। কারণ জনগণের তাদের দরকার নেই। তাদের আছে পুলিশ বাহিনী, বন্দুক বাহিনী, বিজিবি বাহিনী-এই বাহিনী দিয়ে তারা দেশ চালাবে।'

আজ রোববার সকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কৃষক দলের এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'যারা মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালায় তারা এখন চোখে অন্ধকার দেখছে। অন্ধকার দেখছে আমাদের কৃষক ভাইয়েরা যে, ডিজেলের দাম বাড়লে কীভাবে সেচের কাজ করবেন।'

'আমাদের স্পষ্ট কথা—আর হবে না। এদেশের মানুষ আর এভাবে দেশ চালাতে দেবে না। তারা আমাদের রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে, আমাদের অর্থনীতিকে তারা ধ্বংস করেছে, তারা আমাদের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করেছে। সুতরাং এই সরকারকে আর টিকতে দেওয়া যায় না।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা সবাই সংঘবদ্ধ হচ্ছি, ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। গতকাল আমি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি—আসুন আর নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বিভেদ সৃষ্টি না করে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।'

'সরকারকে বলব, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন এবং পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে জনগণের পার্লামেন্টে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে তারাই সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র পথ, আর অন্য কোনো পথ নাই।'

'সরকার মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'দেশে কিছু মানুষকে আপনারা ধনী থেকে আরও ধনী বানিয়েছেন। আর কিছু মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হয়েছে। বড় বড় বড়াই করেন, মিথ্যা তথ্য দেন। একটা তথ্যও তাদের সঠিক না। সমস্ত তথ্য জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য।'

'জনগণকে বলব এদের তথ্যে বিভ্রান্ত না হয়ে আপনারা নিজেকে প্রশ্ন করুন। তাহলে দেখবেন, চালের দাম কত বেড়েছে, তেলের দাম কত বেড়েছে, সবজীর দাম কত বেড়েছে, মাছের দাম কত বেড়েছে, মাংসের দাম কত বেড়েছে? তাহলে বুঝবেন দেশের অবস্থা কী?'

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'পেট্রল-ডিজেল-অকটেন সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। গ্যাসের দাম বাড়িয়েছেন, পানির দাম বাড়িয়েছেন, সারের বাড়িয়েছেন। কোথায় যাবে মানুষ? আপনাদের পকেটে বহু দুর্নীতির টাকা আছে, ঘুষের টাকা আছে। কিন্তু আমাদের পকেটে ভাই নিজের বেঁচে থাকার পয়সাটুকু শেষ হয়ে যাচ্ছে।'

'আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশে কমে না'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সারের দাম বাড়বে, যাতায়াত খরচ বেড়ে যাবে, সব কিছুর দাম বাড়বে। অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অর্থনীতি খারাপের দিকে যাবে। তেলের দাম বাড়ানোর কারণ  হিসেবে বলছে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লোকসান হচ্ছে। লোকসান কেন হবে? পাঁচ বছর তো এই প্রতিষ্ঠান লাভ করেছে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম ছিল। কিন্তু তখন আপনারা দাম কমাননি।'

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, 'আমরা গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন উন্নয়ন শুনে আসছি। এই উন্নয়নটা কিসের উন্নয়ন? এই উন্নয়নটা হচ্ছে বাংলাদেশে ধর্ষণের জোয়ার, এটা কোনো উন্নয়নের জোয়ার না, বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জোয়ার, এটা কোনো উন্নয়নের জোয়ার না, বাংলাদেশে মানুষের অধিকার হরণের জোয়ার, কোনো উন্নয়নের জোয়ার না।'

'এটা হচ্ছে ব্যাংক লুটের জোয়ার, এই জোয়ারে বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে আর কিছু অবশিষ্ট নাই। প্রত্যেকটা ব্যাংককে আওয়ামী লুটেরা বাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছে। এই জোয়ার ডলারের অতিমূল্যায়ন এবং টাকার অবমূল্যায়ন। অতএব এই জোয়ারের বিরুদ্ধে আর প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।'

গত ৩১ জুলাই ভোলায় পুলিশের গুলিতে আবদুর রহিম ও নুরে আলমের মৃত্যু এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কৃষক দলের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে সমাবেশটি শেষ হয় দুপুর ১টায়।

রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে কৃষক দলের নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ লাগিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

6h ago