মাহমুদউল্লাহ-তামিমের ফিফটিতে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি

ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু পাইয়ে দিলেন বাঁহাতি তারকা তামিম ইকবাল। এরপর দেড়শ ছোঁয়ার আগে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর জুটি বেঁধে দলকে টানলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন। সাবলীল খেলতে থাকা আফিফ না পারলেও ফিফটির স্বাদ নিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাতে জিম্বাবুয়েকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুঁড়ে দিল টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংস খেললেও শুরুতে ভীষণ ধুঁকতে হয় মাহমুদউল্লাহকে।

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারারেতে রোববার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৯০ রান তুলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে একই ভেন্যুতে ৩০৩ রানের পুঁজি নিয়েও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে আছে তারা।

পাঁচে নামা মাহমুদউল্লাহ ৮৪ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন। তার ব্যাট থেকে আসে সমান ৩টি করে চার ও ছক্কা। এক পর্যায়ে, তার রান ছিল ৫০ বলে ২৭। বলের লাইনে যেতে পারছিলেন না, টাইমিং করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছিল। পরের ৩৪ বলে ৫৩ রান তুলে বাংলাদেশের সংগ্রহকে তিনশর কাছাকাছি নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। তার কল্যাণে শেষ ১০ ওভারে ৮৪ রান যোগ করে সফরকারীরা। ১৩ ম্যাচ পর ওয়ানডেতে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। সবশেষ গত বছর মেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে ৫৩ রান করেছিলেন তিনি।

তবে ডট বলের সংখ্যা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কারণ রয়েছে বাংলাদেশের। ১৫১ বল অর্থাৎ ইনিংসের অর্ধেকের বেশি বলে রান নিতে পারেননি ব্যাটাররা। আগের ম্যাচে তাদের ডট বলের সংখ্যা ছিল ১৪৫টি।

প্রথম ওয়ানডেতে কিছুটা ধীর গতিতে ব্যাটিং করে বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন অধিনায়ক তামিম। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শুরু থেকেই রানের গতি সচল রেখে ব্যাটিং করেন তিনি। নিয়মিত বাউন্ডারি মেরে ৪৩ বলে তুলে নেন ফিফটি।

সিরিজে টানা দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরির পর তামিম টিকতে পারেন আর মাত্র ২ বল। আরও একটি বাউন্ডারি মারতে গিয়েছিলেন। টানাকা চিভাঙ্গার বল পুল করেছিলেন তিনি। তবে বাড়তি বাউন্সে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ধরা পড়েন মিড উইকেটে। শেষ পর্যন্ত ৪৫ বলে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫০ রান করেন তামিম। তাতে পাওয়ার প্লের ঠিক পরের ওভারেই ভাঙে ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি। 

আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের আউটের ক্ষেত্রে নিজেদের কিছুটা দুর্ভাগা ভাবতেই পারে টাইগাররা। চিভাঙ্গার বলে ড্রাইভ করেছিলেন শান্ত। বোলার নিজেই বল ধরতে গেলে তার হাতে লেগে ভাঙে স্টাম্প। ক্রিজের বাইরে কিছুটা এগিয়েছিলেন বিজয়। অলসভাবে চেষ্টা চালালেও ফিরতে পারেননি। ২৫ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ২০ রান করেন তিনি।

৬ রানের ব্যবধানে দুই ওপেনার সাজঘরে ফিরলে জুটি বাঁধেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। দুজনে মিলে স্কোরবোর্ডে ঠিক ৫০ রান যোগ করার পর তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে জিম্বাবুয়ে। থিতু হয়ে বিদায় নেন তারা। অভিজ্ঞ মুশফিক আউট হন স্লগ সুইপ খেলে। লিটন দাসের চোটের কারণে একাদশে ফেরা শান্ত একবার জীবন পাওয়ার পরও কাজে লাগাতে পারেননি সুযোগ।

ডিপ মিড উইকেটে টনি মুনিয়োঙ্গার হাতে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক সাজঘরে ফেরেন ২৫ রানে। ৩১ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ১টি চার। অফ স্পিনার ওয়েসলি মাধেভেরের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে থামে তার ক্রিজে থাকা। মন্থর ইনিংস খেলা বাঁহাতি শান্তর হন্তারকও মাধেভেরে। অনেক বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক রেজিস চাকাভাস গ্লাভসবন্দি হন তিনি। তার ৫৫ বলে ৩৮ রানের ইনিংসে চার ৫টি। ১২তম ওয়ানডে খেলতে নামা শান্তর এটি ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস।

শান্তকে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে দেখা যায়নি, ছিলেন বেশ নড়বড়ে। এমনকি ব্যক্তিগত ৩৪ রানে মাঠ ছাড়তে পারতেন তিনি। পেসার লুক জঙ্গুয়ের ডেলিভারিতে টাইমিং করতে ব্যর্থ হয়ে বল আকাশে তুলে দিয়েছিলেন। মিড-অনে থাকা ব্র্যাডলি ইভান্স পেছনের দিকে দৌড়ে বলের গতিপথে যেতে পারেননি ঠিকঠাক। ডাইভ দিলেও বল তার হাতের নাগালে যায়নি।

১৪৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের ইনিংস মেরামতের কাজে লাগেন মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ। পঞ্চম উইকেটে তারা যোগ করেন ইনিংসের সর্বোচ্চ ৮২ বলে ৮১ রানের জুটি। তাতে ভালো পুঁজির রসদ মেলে। এই জুটিতে আফিফ আক্রমণাত্মক ঢঙে থাকলেও অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ ধুঁকছিলেন।

ব্যক্তিগত ৪১ রানে নিশ্চিত রানআউট থেকে বেঁচে যাওয়া আফিফ রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন। যে সিকান্দার রাজা সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন, তিনিই বিদায় করেন আফিফকে। শর্ট থার্ড ম্যানে সহজ ক্যাচ নেন চিভাঙ্গা। আফিফের ব্যাট থেকে ৪টি চারে আসে ৪১ বলে ৪১ রান।

নিজের পরের ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে ঝুলিতে নেন অফ স্পিনার রাজা। সুইপ করার চেষ্টায় ১২ বলে ১৫ রানে এলবিডব্লিউ হন তিনি। ২ বলে ১ করা তাসকিন আহমেদকে একইভাবে ফেরান রাজা। তাইজুল ইসলাম ৪ বলে ৬ করে এক্সট্রা কভারে পেসার ভিক্টর নিয়াউচির বলে ক্যাচ দেন। ইনিংসের শেষ বলে রানআউট হন ২ বলে ১ রান করা শরিফুল ইসলাম। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে হার না মানা ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ।

জিম্বাবুয়ের পক্ষে রাজা ১০ ওভারে ৫৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল। ৯ ওভারে ২ উইকেট নিতে মাধেভেরের খরচা ৪০ রান। ১টি করে উইকেট নেন চিভাঙ্গা ও নিয়াউচি।

Comments

The Daily Star  | English

$14b a year lost to capital flight during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

15h ago