আল-জাওয়াহিরি কে এবং কেন তাকে হত্যা করল যুক্তরাষ্ট্র

আয়মান আল-জাওয়াহিরি। রয়টার্স ফাইল ফটো

আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় শীর্ষ আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন। তিনি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পরিকল্পনা করতে সহায়তা করেছিলেন বলে এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি নিশ্চিত করেছিলেন আল-কায়েদা সক্রিয় থাকবে এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার আল জাওয়াহিরিকে হত্যার ঘোষণা দিয়েছেন। মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার মাত্র ১১ মাস পর এ ঘটনা ঘটলো।

কিন্তু, কে এই আয়মান আল-জাওয়াহিরি। আর কেনইবা তিনি এতো গুরুত্বপূর্ণ। যিনি আত্মঘাতী বিমান হামলার পর ২১ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের চোখকে ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে ছিলেন।

কে ছিলেন আয়মান আল-জাওয়াহিরি

৯/১১ হামলায় বেঁচে থাকা আমেরিকানরা আল-জাওয়াহিরির নাম জানেন না। তবে অনেকের কাছেই দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তার মুখটি পরিচিত। চশমা পরা একজন ব্যক্তি, মুখে সামান্য হাসি- যাকে ছবিতে বিন লাদেনের পাশে দেখানো হয়েছে।

তিনি একজন মিশরীয় নাগরিক। আল-জাওয়াহিরি ১৯৫১ সালের ১৯ জুন কায়রোর শহরতলিতে একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহরিকে হত্যার ফলে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হামলায় নিহতদের পরিবারের জন্য আরও একটি প্রতিশোধ। আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর বাইডেন এ মন্তব্য করেন।

আল-জাওয়াহিরি একজন তরুণ চক্ষু সার্জন হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে ঘুরে বেড়ান এবং সোভিয়েত দখলদারদের বিরুদ্ধে আফগানদের যুদ্ধের সাক্ষী ছিলেন। সেসময় তিনি তরুণ ওসামা বিন লাদেন এবং অন্যান্য আরব জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। যা আফগানিস্তানকে সোভিয়েত সেনাদের বিতাড়িত করতে সহায়তা করেছিল।

টাইমস ইন্ডিয়া বলছে, ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যার পর মিশরের কারাগারে আটক ও নির্যাতিতদের একজন ছিলেন আল-জাওয়াহারি। এই অভিজ্ঞতা তাকে আরও উগ্রবাদী করে তোলে। সাত বছর পর যখন বিন লাদেন আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন তখন আল-জাওয়াহিরি তাতে যোগ দেন। আল-জাওয়াহিরি তার নিজের মিশরীয় জঙ্গি গোষ্ঠীকে আল-কায়েদার সঙ্গে একীভূত করেন। তিনি আল-কায়েদাকে সাংগঠনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এনে দেন। যা মিশরীয় গোয়েন্দা তথ্য এড়িয়ে আল-কায়েদা অনুসারীদের সেল সংগঠিত এবং বিশ্বজুড়ে হামলার সুযোগ করে দেয়।

যেভাব সিআইএ তাকে চিহ্নিত করে

এপি বলছে, জাওয়াহিরি বছরের পর বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। তাকে খুঁজে বের করে হত্যার জন্য একাধিক অভিযান চালানো হয়। একজন সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, তাকে হত্যা করা সন্ত্রাসবিরোধী ও গোয়েন্দাদের 'সতর্ক, ধৈর্যশীল এবং পরিশ্রমের' ফল। মার্কিন কর্মকর্তারা আল-জাওয়াহিরি যেখানে অবস্থান করতেন সেই নিরাপদ বাড়ির একটি স্কেল মডেল তৈরি করেন। পরে সেটি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দেখাতে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে নেওয়া হয়। তারা জানত যে আল-জাওয়াহিরি বাড়ির ব্যালকনিতে বসে থাকতেন।

যেভাবে হত্যা করা হলো

রোববর সূর্যোদয়ের সময় আল-জাওয়াহিরি আফগানিস্তানের কাবুলের একটি বাড়ির ব্যালকনিতে আসেন এবং সেখানে অবস্থান করেছিলেন। যেমনটি মার্কিন গোয়েন্দারা তাদের পরিকল্পনায় উল্লেখ করেছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন- এ দিন একটি মার্কিন ড্রোন আল-কায়েদা নেতাকে লক্ষ্য করে দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ওই হামলায় ব্যালকনিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা আল-জাওয়াহিরি নিহত হন।

বিশ্লেষকরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে আফগানিস্তানে তার উপস্থিতি ব্যাপকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা এ বছর জানতে পারেন জাওয়াহিরির স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সম্প্রতি কাবুলের একটি নিরাপদ বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। তারা শিগগির জাওয়াহিরিকে অনুসরণ করতে শুরু করেন বলে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান।

আল-জাওয়াহিরি কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন

১১ সেপ্টেম্বরে হামলার জন্য আত্মঘাতী হামলাকারীদের তহবিল সংগ্রহ এবং কয়েক বছরের গোপন পরিকল্পনার পেছনে তিনি ছিলেন। জাওয়াহিরি নিশ্চিত করেছিলেন, আল-কায়েদা বিশ্বব্যাপী পুনরায় আক্রমণের জন্য প্রস্তুত আছে।

এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯/১১-এর পর, আল-জাওয়াহিরি আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে পুনরায় আল-কায়েদার নেতৃত্ব গড়ে তোলেন। তিনি ইরাক, এশিয়া, ইয়েমেন এবং এর বাইরে অনেক শাখার সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন। ৯/১১-এর পর আল-কায়েদা বছরের পর থেকে বছরের পর বছর ধরে বালি, মোম্বাসা, রিয়াদ, জাকার্তা, ইস্তাম্বুল, মাদ্রিদ, লন্ডন এবং এর বাইরে অনেক জায়গায় আক্রমণ চালিয়েছিল। ২০০৫ সালে লন্ডনে ৫২ জন নিহত হওয়ার হামলা পশ্চিমে আল-কায়েদার সর্বশেষ বিধ্বংসী হামলার একটি। এসব কারণেই আল-জাওয়াহিরি আল-কায়েদার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন এবং মার্কিন চিন্তার কারণ ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

2 killed, 1 injured in clash at Meghna sand quarry

Two people were shot dead and one injured in a clash at a sand quarry on the Meghna river, at the bordering area between Munshiganj and Chandpur this evening

1h ago