‘জেগে ওঠা শহরের শরীর এখনো আধশোয়া’

গ্রিনরোডে সড়কের পাশে চেইনে আটকে রাখা সারবন্ধ রিকশাগুলো দেখে বোঝা গেল এর চালকরাও অবকাশে আছেন। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

কোরবানির ঈদ ঘিরে ৩ দিনের ছুটি কাটিয়ে অফিস আর ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো খুললেও এখনো কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠেনি প্রায় ২ কোটি মানুষের এ নগর।

আজ বুধবার ঈদের চতুর্থ দিনেও সদাব্যস্ত ঢাকার সময় কাটছে এক প্রকার আলস্যে।

আজ দুপুরে রাজধানীর ব্যস্ততম কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের চিত্র। ছবি: সাদী মুহাম্মাদ আলোক/স্টার

এদিন সকালের দিকে ঢাকার প্রধান-অপ্রধান সড়ক ও অলিগলি ছিল একেবারেই ফাঁকা। সড়কে অল্প কিছু গণপরিহন চলতে দেখা গেলেও তাতে ছিল না যাত্রীর চাপ। চিরাচরিত যানজটের দেখাও মেলেনি। ফুটপাতগুলোও ছিল মোটামুটি পথচারীশূণ্য।

সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয়, ঈদে অর্ধেকের বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়েন। কবি আল মাহমুদ ঢাকার বাসিন্দাদের এই ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে যেমন লিখেছিলেন, 'ঝাঁকবাঁধা সারসের মতো উড়ে গেল মানুষের অগণিত মাথা'।

পশ্চিম তেজতুরি বাজারের একটি গলি। ছবি: স্টার

ঈদের ছুটিতে যার যার গন্তব্যে উড়ে যাওয়া সেই মানুষগুলোর বেশিরভাগ এখনো ফিরে না আসায় এক সময়ের তিলোত্তমা এই মহানগরের ঘুম পুরোপুরি ভাঙেনি এখনো। এক্ষেত্রে শিল্পী কবীর সুমনের গানের কথা ধার করে বলা যায়, 'জেগে ওঠা শহরের শরীর এখনো আধশোয়া।'

আজ সকালে ঢাকার শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, শ্যামলী, আসাদগেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, পশ্চিম রাজাবাজার, ফার্মগেট, পান্থপথ, গ্রিনরোড ও কারওয়ান বাজারসহ  কয়েকটি এলাকা ঘুরে চলিষ্ণু এই শহরের 'আধশোয়া' অবস্থাই চোখে পড়েছে।

আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনের সড়ক। ছবি: স্টার

দেখা গেছে পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ দোকানের ঝাঁপ খোলেনি, কাঁচাবাজার ও সুপারশপগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কম। কেবল অল্পকিছু ফল-মূল, মুদি আর ওষুধের দোকান খোলা।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শেওড়াপাড়া-তালতলা সড়কে অবস্থিত একটি সবজির দোকানে কথা হলো এর মালিক ফখরুল ইসলামের সঙ্গে। জানালেন, ঈদের পর আজই দোকান খুলেছেন তিনি। তখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতা পাননি।

গ্রিনরোডে সড়কের পাশে চেইনে আটকে রাখা সারবন্ধ রিকশাগুলো দেখে বোঝা গেল এর চালকরাও অবকাশে আছেন। একইভাবে ইন্দিরা রোডের পাশে একটি খোলা জায়গায় 'বিশ্রামে' থাকতে দেখা গেল ইন্দিরা রোড-মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী অন্তত ২০টি লেগুনাকে।

ইন্দিরা রোড সংলগ্ন একটি ফাঁকা জায়গা অলস বসে আছে লেগুনাগুলো। ছবি: স্টার

এমন পরিস্থিতিতে ঈদের ছুটিতে যারা ঢাকায় থেকে গেছেন, তারা স্বস্তিতে যাতায়াত করছেন। সড়কে গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের মধ্যেও তেমন তোড়জোড় দেখা যায়নি।  

আসাদগেট মোড় এলাকায় কথা হয় ব্যবসায়ী ফজলুল কবিরের সঙ্গে। তিনি সেখানে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পুরান ঢাকার বংশালে তার একটি সাইকেল পার্টসের দোকান আছে। তিনি বলেন, 'একটা জরুরি কাজে হঠাৎ বাইরে আসতে হলো। না হলে ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। দোকান খুলব শনিবার থেকে।'

জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। ছবি: স্টার

খামারবাড়ি মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষারত রিকশাচালক আব্দুল কুদ্দুস জানালেন, প্রচণ্ড গরম থাকায় বিকেলের দিকে সড়কে মানুষের ভিড় খানিকটা বাড়ে।

ফার্মগেট এলাকায় সিএনজি অটোরিকশাচালক মোজাম্মেল বললেন, 'অন্য সময়ে অনেক প্যাসেঞ্জার থাকলেও জ্যামের কারণে বেশি ট্রিপ মারতে পারি না। এখন তো এক জায়গা থেইক্যা আরেক জায়গায় উইড়্যা যাইতেছি। তয় যাত্রী কম।'

ঈদের ছুটিতে ঢাকায় থেকে যাওয়া সরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুর হক বললেন, 'স্বাভাবিক সময়ে যানজট আর মানুষের চাপে কখনো মনেই হয় না যে, এই শহরে উপভোগের মতো কিছু আছে। কিন্তু ঈদের সময়টাতে মানুষের ভিড় কমে এলেই কেবল বোঝা যায়, এখানকার সড়কগুলো কত প্রশস্ত। কেবল এ সময়েই আশপাশে তাকিয়ে দেখার সুযোগ মেলে। মনে হয়, শহরটা আসলেই সুন্দর।'

Comments

The Daily Star  | English

How a 'Dervish Baba' conjured crores from a retired nurse

Want to earn easy money? Just find someone who thinks their partner is cheating on them, then claim to be a “Genie King” or “Dervish Baba,” and offer solutions to “relationship problems” for a fee

1h ago