ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে ‘৭৫ টাকার ভাড়া ৪০০’
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে স্বস্তি থাকলেও ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে রয়েছে ভোগান্তি। ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের জন্য নৌপথ পাড়ি দিতে কর্তৃপক্ষের নজরদারি রয়েছে। তবে, মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ।
এই মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ কারণে অল্প আয়ের মানুষেরা কিছুটা কম ভাড়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে খোলা ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও মহাসড়কে চলাচলে নিষিদ্ধ তিন চাকার গাড়িতে।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়ক এবং পাটুরিয়া ফেরিঘাটে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ঘাট, রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট হয়ে রাজবাড়ি, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ঝিনাইদহগামী অনেক যাত্রীর সঙ্গে পাটুরিয়া ঘাটে কথা হয়। তারা জানান, বিগত সময়ের তুলনায় এবার ঈদের আগে যাত্রাপথে পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ নেই। চাপ রয়েছে শুধু লঞ্চে। তবে, মহাসড়কে চলাচলরত বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সেখানে প্রশাসনের নজরদারি নেই।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার মো. হারুন উর রশিদ বলেন, 'আমি হেমায়েতপুর থেকে একটি লোকাল মিনিবাসে চড়ে পাটুরিয়া ঘাটে এসেছি। আমার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে ৪০০ টাকা। অথচ এই দূরত্বের বাস ভাড়া মাত্র ৭৫ টাকা। বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। তবে, পাটুরিয়া ঘাটে খুব একটা ভিড় নেই। এটা ভালো লাগলো।'
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপার অন্তরা খাতুন বলেন, 'আমি আমার স্বামী ও শিশু সন্তান নিয়ে নবীনগর এলাকায় বসবাস করি। আমরা সবাই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছি। সঙ্গে রয়েছেন আমার মা ও বাবা। আমাদের ৪ জনের কাছ থেকে ৪০০ করে মোট এক হাজার ৬০০ টাকা ভাড়া নিয়েছে। আমার স্বামী অল্প আয়ের একজন গার্মেন্টসকর্মী। এত টাকা দিয়ে যাওয়া-আসা খুবই কষ্টকর। ঈদ শেষে নবীনগরে ফিরতে আবারও এতগুলো টাকা লাগবে। প্রশাসন তো কিছুই করে না।'
গোপালগঞ্জের আবুল শেখ বলেন, 'লোকাল গাড়িতে নবীনগর থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত আমাদের ২ জনের ভাড়া লেগেছে ৮০০ টাকা। এটাতো খুবই জুলুম। আমাদের কষ্ট দেখার তো কেউ নেই।'
খোলা ট্রাকে ফেরি পার হয়ে কুষ্টিয়া যাচ্ছেন একদল দিনমজুর। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে চলাচল করছেন কেন, প্রশ্ন করতেই তারা বললেন, বাসে তো ভাড়া বেশি। এত টাকা দিয়া কেমনে যামু। তাইতো সবাই মিলা ট্রাক ভাড়া করছি। ভাড়া একটু কম পড়ছে।
অনেকেই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করছেন। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি নাকি আবারও খারাপ হচ্ছে। তাই বাসের ভিড়ে না গিয়ে এভাবে যাচ্ছেন।
অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেসব গাড়ি ঢাকা থেকে আসছে, সেগুলো যদি বেশি ভাড়া নেয়, সেটা আমার দেখার এখতিয়ারের মধ্যে নেই। কিন্তু, আমার এখান থেকে কোনো গাড়ি অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে না।'
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাতায়াত স্বাভাবিকভাবেই হচ্ছে। তবে, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে। দায়িত্বরত পুলিশ যাত্রী কমানোর নির্দেশ দিলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের বাধা দেন। পরে পুলিশের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের পরিদর্শক মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, 'সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। ঈদের আগে কিছু বাড়তি যাত্রী ওঠানো যাবে। পুলিশ এসে আমার লোকজনদের লঞ্চ ছাড়তে বলেন। আমিতো এসব দেখার জন্য আছি। তাদের এখানে এসে বাড়াবাড়ি করার দরকার কী?'
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান বলেন, 'পুলিশ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু, আমাদের সদস্যদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়াটা খুবই দুঃখজনক। তবে, শত প্রতিকূলতা নিয়েও পুলিশ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেই।'
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঢাকার দক্ষিণের জেলা মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালী, বরিশালসহ আশেপাশের এলাকার যাত্রী ও যানবাহন পদ্মা সেতু ব্যবহার করছে। সেকারণে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমে গেছে। তবে, ঈদকে সামনে রেখে গত দুদিন ধরে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ।
তিনি বলেন, '২১টির মধ্যে ২০টি ফেরি সচল থাকায় বাড়তি গাড়ি পার করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ঘাটে আসামাত্র যাত্রী ও যানবাহন ফেরিতে উঠতে পারছে।'
Comments