বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছানোর ২ সপ্তাহ পরে এসএসসি পরীক্ষা

education_minister_6jul22.jpg
ছবি: সংগৃহীত

বন্যায় অনেক শিক্ষার্থীদের বই হারিয়ে গেছে। তাদের কাছে বই পৌঁছে দেওয়ার অন্তত ২ সপ্তাহ পরে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

এসএসসি পরীক্ষা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা খোঁজ রাখছি নিয়মিত। এখনো কিছু কিছু এলাকায় শহর থেকে পানি নেমে গেছে, একদম গ্রাম পর্যায়ে এখনো হয়তো কোথাও কোথাও আছে। সেটাও হয়তো নেমে যাবে। কিন্তু ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। আমাদের কাছে তথ্য আসছে আমাদের অনেক পরীক্ষার্থীর বইপত্র...স্বাভাবিক, ওই বন্যার মধ্যে লোকে তার একেবারে গুরুত্বপূর্ণ যা জিনিস সেটা নিয়ে, কোনো রকমে জানটুকু নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন অনেকে কোনোমতে। সেখানে বই নিয়ে আসার হয়তো সুযোগ হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা এখন পুরোটা অ্যাসেস করছি আমাদের কত পরীক্ষার্থীকে নতুন করে বই দিতে হবে। আমাদের কাছে প্রতি বছর কিছু বাফার স্টক থাকে। এ রকম একটা বড় অঞ্চল নিয়ে বন্যা হয়ে পরীক্ষার্থী বই হঠাৎ এই পর্যায়ে হারিয়ে যাবে সেই রকমটা আসলে আমাদের বিবেচনায় ছিল না। আর সেটা প্রতি বছর রাখা হয়তো সম্ভবও না।

আমরা দেখছি, হিসাব করছি। যদি প্রয়োজন হয় আমরা নতুন বই ছাপিয়েও ফেলবো। তারপরও আমরা পরীক্ষার্থীদের হাতে তাদের বইগুলো পৌঁছে দেবো, যাদের বই নষ্ট হয়েছে। তাদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়ার পরে অন্তত ২ সপ্তাহ সময় দিতে হবে, তারা বিরাট একটা ট্রমার মধ্যে দিয়েও গেছে। ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। অনেক পরিবার নিঃস্বপ্রায় হয়ে গেছে এই সময়ে। এটা হলো আমাদের মোটামুটি টাইমলাইন। সেটা গিয়ে কোন মুহূর্তে ঠেকবে সেটা বলা সম্ভব না, বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিশুদের ভ্যাকসিনের বিষয়ে আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলবো। সেই বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার পরে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে চিন্তা করতে পারবো। এটা ঠিক সংক্রমণ আবার বাড়ছে। আমাদের সবাইকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। আমাদের ১২'র উপরে সবার তো ভ্যাকসিন দেওয়া আছে। ১২'র নিচে যদি ভ্যাকসিনটা দিয়ে ফেলতে পারি, তাহলে হয়তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রয়োজন হবে না। আমরা চাচ্ছি যতটা সম্ভব স্কুল খোলা রেখেই আমরা আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানের দিকে যাব। কাজে এই মুহূর্তে আমরা স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছি না। বরং অনেক বেশি সচেতন থেকে, স্বাস্থ্যবিধি অনেক বেশি মেনে চলে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছি। তবে এটাও বলবো সব কিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। সব শেষে গিয়ে কিন্তু আমার শিক্ষার্থী বা তার পরিবারের কিংবা শিক্ষকের জীবন সেটি নিশ্চয়ই আমাদের কাছে জরুরি। 

এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি তখন দেশে ছিলাম না, একজন সংসদ সদস্য সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদের পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছেন। সেটা তিনিই আবার কদিন পরে স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়ে বলেছেন, তার এই তথ্যগুলো সঠিক ছিল না এবং এখনকার বইয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। তিনি এগুলো প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। আমরা যে যেখানেই থাকি, জনপ্রতিনিধি হই বা অন্য যে কোনো দায়িত্বেই থাকি না কেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেটা দেশের প্রতিটি মানুষকে ছুঁয়ে যায়। সেই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার সময় সব থেকে ভালো সঠিক তথ্য জেনে নিয়ে কথা বলা।

তিনি আরও বলেন, সমাজের একটি অংশ সব সময়ই কিছুটা হলেও ধর্মের দোহাই দিয়ে নানানভাবে আমাদের এগিয়ে যাওয়াকে বন্ধ করার চেষ্টা করে। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করে। তারা তার এই বক্তব্যের ভিডিওটা ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি যেখানে বলেছেন, যেখানে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, সেখানেই শেষ না। এটা একটা ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। এই বক্তব্য দেওয়ার বেশ কিছু দিন আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে একটা প্রচারণা চলছিল যে, আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ধর্ম শিক্ষা সব সময় ছিল, এখনো আছে। না থাকার কোনো কারণ দেখি না। আমরা বারবার বলছি, আমাদের শিক্ষায় জ্ঞান-দক্ষতা যেমন থাকবে তার পাশাপাশি সঠিক মনোভাব এবং তার মূল্যবোধ এবং নৈতিক জায়গায় ধর্ম শিক্ষা একটি আবশ্যিক বিষয়।

যারা ধর্ম শিক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে বলে ধোঁয়া তুলছেন, তাদের উদ্দেশ্য ধর্মকে রক্ষা করা নয়, ধর্মের পক্ষে থাকা নয়, তাদের উদ্দেশ্য ধর্মকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করা। দেশের ধর্মভীরু সাধারণ মানুষকে অন্যায়ভাবে উসকে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে একটা পরিবেশ তৈরি করা এবং আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করা, বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

Comments