কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্ত

মায়ের হাত ফসকে স্রোতে ভেসে যাওয়া ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার

পারভীন খাতুন ও শাকিবুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নীলকমল নদী পাড়ি দেওয়ার সময় মায়ের হাত ফসকে পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া দুই সহোদর পারভীন খাতুন (৮) ও শাকিবুল হাসানের (৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সেউতি-১ এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয়রা নীলকমল নদী থেকে শিশু দুটির মরদেহ উদ্ধার করে।

শনিবার ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধর্মপুর সীমান্তে বাবা-মায়ের সঙ্গে নীলকমল নদী পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পথে শিশু দুটি নিখোঁজ হয়েছিল।

তবে শিশু ২টির বাবা-মা রহিম উদ্দিন (৩৮) ও সামিনা খাতুন (৩৩) বেঁচে যান।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কাশিপুর কোম্পানি ক্যাম্পের কমান্ডার কবির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

নিহত শিশু দুটির বাবা রহিম উদ্দিন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম শুকাতি গ্রামের মৃত একাব্বর আলীর ছেলে।

পরিবারে লোকজন ও স্থানীয়রা জানান, রহিম উদ্দিনের ২০০২ সালে দেশ ছেড়ে অবৈধভাবে ভারতের দিল্লীতে ইটভাটায় কাজ শুরু করেন। সেখানে সাজেদুল হকের মেয়ে সামিনা খাতুনের সঙ্গে ২০০৫ সালে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুটি সন্তান জন্ম নেয়। শিশু দুটি ভারতে জন্ম নেওয়ার পর কোনদিন বাংলাদেশ আসেনি। বাংলাদেশে বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করার জন্য রহিম তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে নীলকমল নদী পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসতেছিলেন।

শিশু দুটির বাবা রহিম উদ্দিন শনিবার রাতে কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, দালালদের মাধ্যমে তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার জন্য নীলকমল নদীপাড়ে অপেক্ষা করছিলেন। এসময় ভারতের কোচবিহার জেলার সেউতি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ টহল দল তাদের ধাওয়া করে। বিএসএফ'র হাত থেকে রক্ষা পেতে দালালদের কথামতো নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন তারা। তার হাতে ছিল জিনিসপত্র আর তার স্ত্রী সামিনা খাতুনের সঙ্গে ছিল ২ সন্তান। নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় স্ত্রীর হাত থেকে সন্তান ২টি ফসকে পানির স্রোতে ভেসে যায়। স্ত্রীকে নিয়ে নীলকমল নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসলেও সন্তানদের খুঁজে পাননি। তাদেরকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আনার জন্য রহিম উদ্দিন দালালদের ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।

রহিম উদ্দিনের ছোট ভাই আজিজুল হক জানান, তার ভাতিজি ও ভাতিজার জন্ম ভারতে হওয়ায় বাংলাদেশি হিসেবে কোন প্রমাণপত্র নেই। জন্মের পর তারা কোনদিন বাংলাদেশেও আসেনি।'

তিনি বলেন, 'দুই দেশের প্রশাসন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে যেন শিশু দুটির মরদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করে, এটাই চাওয়া।' 

বিজিবি কাশিপুর কোম্পানি ক্যাম্পর কমান্ডার কবির হোসেন আজ দুপুরে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু শিশু দুটির জন্ম ভারতে তাই বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে কোন প্রমাণপত্র নেই। এ কারণে বিএসএফ শিশু দুটির মরদেহ বিজিবি'র কাছে হস্তান্তর করেনি। শিশু দুটির মরদেহ ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ।'

এ ঘটনায় বিজিবি-বিএসএফ'র মধ্যে রোববার দুপুরে সীমান্তে একটি পতাকা বৈঠকও হয়েছে বলে জানান তিনি। 

Comments

The Daily Star  | English

Cybergangs breaking into NBR server at will

On May 20, 2024, Chattogram Custom House Deputy Commissioner Mohammad Zakaria was in Kolkata, India, where he had gone for treatment a week earlier.

16h ago