কিয়েভের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করলেন ইউরোপের ৪ নেতা

ইউরোপের ৪ নেতার সঙ্গে বৈঠক করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ইউরোপের ৪ নেতার সঙ্গে বৈঠক করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: এপি

গতকাল বৃহস্পতিবার ইউরোপের ৪ নেতা ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিষয়ে এবং সার্বিকভাবে দেশটির প্রতি তাদের সমর্থনের কথা আবারও জানিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকে তারা রুশ হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আরও অস্ত্র সহায়তা দেওয়ারও অঙ্গীকার করেন।

আজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ইউক্রেনকে আরও ৬টি ট্রাকে বসানো আর্টিলারি বন্দুক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

জেলেনস্কি ও অন্যান্যদের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে মাখোঁ আরও বলেন, 'ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও রোমানিয়া তাদের সাধ্য অনুযায়ী সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে ইউক্রেন নিজেই তার ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে।'

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেন, 'আমি ও আমার সহকর্মীরা আজ একটি পরিষ্কার বার্তা নিয়ে কিয়েভে এসেছি, যা হল, ইউক্রেন ইউরোপীয় পরিবারেরই অংশ।'

ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি, তিন দেশই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রক্ষার জন্য এবং প্রয়োজনের সময় কিয়েভ কে অস্ত্র সহায়তা না দেওয়ায় সমালোচিত হয়েছে। তাদের এই একতাবদ্ধ বক্তব্য সেই সমালোচনাকে কিছুটা হলেও কমাতে পারবে বলে ভাবছেন বিশ্লেষকরা।

'আজ, এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে হবে। সুনিশ্চিতভাবে ফ্রান্স, ইউক্রেনকে সমর্থন করছে যাতে তারা জয়ী হতে পারে', যোগ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।

বৈঠক শেষে রাতে জেলেনস্কি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে জানান, তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এটা শোনা, যে ইউরোপের নেতারা একটি বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন।

'বিষয়টি হল, ইউক্রেনের ইচ্ছে অনুযায়ী যুদ্ধের অবসান ও শান্তি আসা উচিৎ', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, ইউক্রেন তাদের ভূখণ্ডের জন্য যুদ্ধ অব্যাহত রাখবে।

ইউক্রেন এবং তাদের কিছু ইউরোপীয় প্রতিবেশী আশঙ্কা করেন, পশ্চিমের শক্তিরা যুদ্ধের দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ অবসানের জন্য ইউক্রেনকে চাপ দেবে, যাতে তারা রাশিয়ার কাছে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দেয়। ইউরোপের নেতাদের বক্তব্যে সে আশঙ্কা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে।

জার্মানির নেতা শোলজ জানান, ইউক্রেনীয়দের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদেরকেই নিতে হবে এবং তাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।

ইতালির নেতা মারিও দ্রাঘি কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলোতে রপ্তানির জন্য অপেক্ষমাণ লাখো টন শস্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি জানান, এ বিষয়টি একটি বৈশ্বিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে।

'আমরা চাই এই নৃশংসতাগুলো বন্ধ হোক এবং শান্তি আসুক। কিন্তু ইউক্রেনকে নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরকেই দিতে হবে এবং তাদেরকেই ঠিক করতে হবে, কোন ধরনের শান্তি তারা চায়', যোগ করেন দ্রাঘি।

বৈঠক ও সংবাদসম্মেলন শেষে নেতারা ইরপিন পরিদর্শন করেন। কিয়েভের এই মহল্লায় ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে এবং বেশ কিছু বেসামরিক ব্যক্তি হতাহত হয়েছে। নেতারা এই ধ্বংসযজ্ঞের প্রতি নিন্দা জানান এবং মাখোঁ জানান, তিনি 'যুদ্ধাপরাধের চিহ্ন' দেখতে পাচ্ছেন।

বৈঠক ও সংবাদসম্মেলন শেষে নেতারা ইরপিন পরিদর্শন করেন
বৈঠক ও সংবাদসম্মেলন শেষে নেতারা ইরপিন পরিদর্শন করেন। কিয়েভের এই মহল্লায় ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে এবং বেশ কিছু বেসামরিক ব্যক্তি হতাহত হয়েছে। ছবি: এপি

সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, 'রাশিয়া নতুন ভাবে ইউরোপকে ভয় দেখাতে এবং আমাদের কাছ থেকে আরও ভূখণ্ড দখল করে নিতে চাইছে। এ যুদ্ধের রাশিয়ার লক্ষ্য হচ্ছে ইউক্রেনকে বিভক্ত করা এবং একইভাবে, পুরো ইউরোপকেও ভাঙা।'

ইতোমধ্যে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা ব্রাসেলসে এ বৈঠক করছেন। সে বৈঠকে সামরিক জোটের পূর্ব সীমান্তে সামরিক শক্তি আরও বাড়িয়ে রাশিয়াকে আরও আক্রমণাত্মক কোনো উদ্যোগ নেওয়া থেকে বিরত রাখার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।

যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনকে দ্রুত সদস্যপদ দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারগুলোর ওপর চাপ এসেছে। বৃহস্পতিবারের একতাবদ্ধ বার্তা ইউক্রেন ও প্রতিবেশী মলদোভার ইইউ জোটে অন্তর্ভুক্তির দাবি আরও জোরদার হয়েছে। ২৭ দেশের এই জোটে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ, যার জন্য ১-২ বছর থেকে আরও বেশি সময়ও লেগে যেতে পারে।

ইতোমধ্যে ইউরোপের মিত্ররা ইউক্রেনকে শক্তিশালী অস্ত্র দিয়েছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চালু করেছে। 

ইউরোপের চার নেতার সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি। ছবি: এপি
ইউরোপের চার নেতার সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি। ছবি: এপি

কিন্তু দনবাস অঞ্চলে রুশ আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের আরও বেশি সহায়তা প্রয়োজন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় ৩ অর্থনীতির নেতা মাখোঁ, শোলজ ও দ্রাঘি একটি বিশেষ ট্রেনে করে কিয়েভে এসে পৌঁছান। তারা পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরেই কিয়েভে উড়োজাহাজ হামলার সতর্কতা সূচক সাইরেন বাজতে শুরু করে।

রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইয়োহানিস একটি আলাদা ট্রেনে করে কিয়েভে আসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, রোমানিয়া ইউক্রেনের পণ্য রপ্তানির জন্য ট্রানজিটের ব্যবস্থা করছেন, যার মধ্যে খাদ্যশস্য অন্যতম।

 

Comments

The Daily Star  | English

Admin getting even heavier at the top

After the interim government took over, the number of officials in the upper echelon of the civil administration has become over three times the posts.

10h ago