‘পাচার করা অর্থ ফেরানোর সুযোগ পাচারকারীদের জন্য অনৈতিক সুরক্ষা ও পুরস্কার’

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনতে প্রস্তাবিত বাজেটে যে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেটাকে সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক, সংশ্লিষ্ট আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। 

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি এ তথ্য জানিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই প্রস্তাব অর্থ পাচারের মতো ঘৃণিত অপরাধের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার নামান্তর। এ ছাড়া প্রস্তাবটিকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে সেটি বাতিলের আহবান জানিয়েছে টিআইবি।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'অর্থমন্ত্রী যেভাবেই ব্যাখ্যা করেন না কেন- নামমাত্র কর দিয়ে প্রশ্নহীনভাবে পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে আনার সুযোগ স্পষ্টতই অর্থ পাচারকারীদের অনৈতিক সুরক্ষা ও পুরস্কার প্রদান। অথচ অর্থপাচার রোধ আইন-২০১২ এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অর্থপাচার গুরুতর অপরাধ, দেশের আইন অনুযায়ী যার শাস্তি পাচারকৃত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা এবং তার দ্বিগুন জরিমানা ও ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড নির্ধারিত রয়েছে। এই সুযোগ অর্থ পাচার তথা সার্বিকভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে, যা সংবিধান পরিপন্থী এবং প্রধানমন্ত্রীর 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুন্য সহনশীলতা' ঘোষণার অবমাননাকর।'

তিনি আরও বলেন, 'যারা বৈধ উপার্জননির্ভর করদাতা তাদের জন্য এই প্রস্তাব প্রকটভাবে বৈষম্যমূলক, কারণ তারা ৭ শতাংশের কমপক্ষে ৩গুণ হারে কর দিয়ে থাকেন। এটি বৈষম্য ও সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী। অবিলম্বে এ সুযোগ বাতিল করতে হবে এবং অর্থপাচারকারীদের জবাবদিহীতা নিশ্চিতের জন্য যে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইনি প্রক্রিয়া নির্ধারিত রয়েছে তা অনুসরণ করে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।'  

পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার সুযোগ প্রদান বিগত বছরগুলোর মতোই কালো টাকা সাদা করার বেআইনি ও অন্যায় সুযোগের ধারাবাহিকতা মাত্র, যা স্থানিক থেকে বৈশ্বিক করা হলো- এমন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'এতে বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ দেশের অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্তির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ও আয়কর রাজস্ব বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বারবার সুযোগ দিয়েও দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনেনি, সরকারও আকাঙিক্ষত রাজস্ব পায়নি। তাই নতুন এই বিশেষ বিধানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে তা না বললেও চলে। কারণ যারা অর্থ পাচার করেছেন তারা এ ধরনের প্রণোদনায় উৎসাহিত হয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে আসবে, এ রকম দিবাস্বপ্নের কোনো ভিত্তি নেই।'

'যেখানে পাচারকৃত দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের দেশের পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি ব্যতিরেকে এই অর্থ বা সম্পদ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। বরং এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীরাই শুধু স্বস্তি বোধ করবেন, পুলকিত হবেন। অর্থপাচারকে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হলে দেশে দুর্নীতি ও অর্থপাচার আরও বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে। এই অন্যায়, অপরিনামদর্শী ও আত্মঘাতি পথ থেকে সরে আসার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।'  

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আমদানি মূল্যস্ফীতির চাপ, ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখা, আমদনি ব্যয় বেড়ে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকার মতো বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটগুলোকে স্বীকার করলেও এগুলোকে মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল বা পথ নির্দেশিকা দিতে পারেননি মন্তব্য করে ড. জামান বলেন, 'প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আরও বড় করার প্রত্যাশা থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার তেমন কোনো নিদর্শন দেখা যায়নি; বরং সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয়কে বড় করে দেখাতে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ, করোনার অভিঘাত উত্তরণে দেওয়া ঋণের সুদ মওকুফকে অর্ন্তভূক্ত করে দেখানো হয়েছে, যেগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশই নয়! এমন বাস্তবতায় বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীকর্তৃক উল্লিখিত চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করার কার্যকর কৌশল নির্ধারণে বাস্তবসম্মত ও নিরপেক্ষ দিক নির্দেশনার জন্য সুখ্যাতি সম্পন্ন বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের জন্য বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটকে ঢেলে সাজানো উচিত।'

Comments

The Daily Star  | English

The wrongs of past 15yrs must be righted

The Daily Star spoke to BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir on a host of issues ranging from elections to media freedom 

15h ago