অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্টার ফাইল ফটো

জীবন সংগ্রামে জয়ী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের অর্থমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। এ কারণে সচেতনভাবেই রাজনীতিতে প্রবেশ তার। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তার স্বপ্নটি সত্য হয়। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হলেও চ্যালেঞ্জ তার পিছু ছাড়েনি।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট ঘোষণার মাত্র কয়েকদিন আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও সেখান থেকে সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সযোগে সংসদে যান তিনি। অনেকটা জোর করেই দাঁড়িয়ে তার প্রথম বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। কিন্তু শরীর তার যথেষ্ট দুর্বল ছিল। বাজেট বক্তৃতার মাঝপথে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। এ রকম ঘটনা ইতিহাসে আর হয়নি। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উঠে বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশ পড়ে শেষ করলেন।

গত সোমবার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বললেন, 'কিছুই আটকে থাকেনি।'

এরপর করোনা মহামারি শুরু। ১৯৩০ সালের 'গ্রেট ডিপ্রেশনের' পর বিশ্ব এ সময় সবচেয়ে খারাপ সংকটের মধ্যে দিয়ে গেছে। এর মধ্যেও ২টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন মুস্তফা কামাল। ৭২ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রীকে উচ্চ-ঝুঁকির মধ্যে বাজেট প্রস্তুত করতে হয়েছিল।

'ওই সময়টায় মানুষ শহর ছাড়ছিলেন। অর্থনীতির চাকা থমকে যাচ্ছিল। মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তাদের কাছে টাকা ছিল না, খাবার ছিল না। সে এক ভয়ানক পরিস্থিতি,' বলছিলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'তবুও, মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সংকটের প্রভাব বিবেচনা করেই বাজেট প্রণয়ন করেছি। প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা ভালো একটি বাজেট উপস্থাপন করতে পেরেছিলাম।'

মহামারির প্রথম ঢেউ মোকাবিলায় জনগণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সামাজিক নিরাপত্তা স্কিম ও প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল।

প্রকৃতপক্ষে, সে সময় প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা প্রথম দেশগুলোর মধ্যেই বাংলাদেশ ছিল।

অর্থমন্ত্রী বলেন, 'তখন আমি অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি বুঝতে বেশ কয়েকজন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি। পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ চাই। তারা কিছুই বলতে পারেননি। কারণ মহামারি মোকাবিলায় কী করতে হবে, তারাও তা জানতেন না।'

পরে তিনি তাদের জানান যে বাংলাদেশ সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে এবং কম রাজস্ব সংগ্রহ সত্ত্বেও প্রণোদনা প্যাকেজ শক্তিশালী করতে যাচ্ছে। তিনি জানান, দেশের অর্থনীতির কৌশল পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন।

তার কৌশল সঠিক প্রমাণ হওয়ায় অন্যান্য দেশও পরে সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতি অনুসরণ করে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে যতটা সম্ভব সহায়তা দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি।'

এ ক্ষেত্রে তিনি ৪টি মূল চালিকাশক্তির কথা উল্লেখ করেন, যা বিশ্বের অধিকাংশ অর্থনীতির তুলনায় বাংলাদেশকে দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।

প্রথম চালিকাশক্তি হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে বলেন, 'তিনি আমার দেখা সেরা প্রধানমন্ত্রী।'

দেশের জনগণকে দ্বিতীয় চালিকাশক্তি হিসেব উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এ রকম সহনশীল নাগরিক আর কোনো দেশে পাওয়া যাবে না। এ দেশের মানুষ সাহসী, উদ্যোগী এবং সবসময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। মহামারিতে অন্যান্য দেশের মতো তারা কাজ করা বন্ধ করে দেননি।'

তার মতে তৃতীয় চালিকাশক্তি স্থিতিশীল সরকার। তিনি বলেন, 'সরকার স্থিতিশীল থাকায় আমরা আমাদের কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি।'

নীতি বাস্তবায়নে সাফল্যকে তিনি চতুর্থ চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, 'অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে আপনার আর কী দরকার?'

এখন তিনি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। আজ তিনি সংসদে তার চতুর্থ বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে অস্থির করে রেখেছে এবং এতে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতিপথ অনিশ্চিত।

যুদ্ধের কারণে আমদানি নির্ভর দেশ হিসেবে, পণ্যের উচ্চমূল্য, মালামাল পরিবহনের উচ্চ খরচ ও সরবরাহ ব্যবস্থা বাঁধার কারণে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বর্ধিত আমদানি ব্যয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং এ অবস্থায় সরকার বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে পারছে না।

কিন্তু অর্থমন্ত্রী এ চ্যালেঞ্জ উত্তরণে আশাবাদী এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী কর্মীদের কারণে তার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা এই অর্থবছরে সর্বাধিক সংখ্যক অভিবাসী কর্মী পাঠাবো।'

এ ছাড়া দেশের রপ্তানি পণ্যগুলো বেশিরভাগই পশ্চিমা বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠী ব্যবহার করে, এটা বাংলাদেশের জন্য আরেকটি স্বস্তির বিষয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতসহ বেশ কিছু খাতকে।

এতে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Leading univs withdrawing from cluster system

Session delays, irregularities, and lack of central planning cited as reasons

10h ago