প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পর বন্ধ হচ্ছে রাজ্জাক বিশ্বাসের সাপের খামার

৩০০ বিষধর সাপ ছাড়া হবে প্রকৃতিতে
নিজের খামারের বিষধর সাপের সঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাস। ছবি: স্টার

পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নন্দিপাড়া গ্রামে গড়ে তোলা আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাসের 'বাংলাদেশ স্নেক ভেনম' নামের সাপের অবৈধ খামারটি অবশেষে বন্ধ করা হচ্ছে।

পটুয়াখালী বন বিভাগ ও ঢাকাস্থ বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট কর্মকর্তাদের যৌথ পরিদর্শনের পর এ খামারের সাপগুলো উদ্ধার করে উন্মুক্ত বনে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকাস্থ বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন ও পরিদর্শক অসীম মল্লিক এবং পটুয়াখালী বন বিভাগ সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রণব চক্রবর্তী খামারটি পরিদর্শনে যান।

পরিদর্শন শেষে অসীম মল্লিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজ্জাক বিশ্বাস অবৈধভাবে এ বিষাক্ত সাপের কামারটি স্থাপন করে এর ছবি ধারণ করে ইউটিউবের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন ও ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে সাপের বিষ নামানোর কুসংস্কার চালু করেন। এ খামারে কর্মীর মৃত্যুতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায় এখানকার সাপগুলোকে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরের জন্য রাজ্জাক বিশ্বাসকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও, সাপগুলো উদ্ধারের পর সেগুলোকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করার জন্য পটুয়াখালী বন বিভাগকে অনুরোধ করা হয়।'

ছবি: স্টার

গত ২৭ মে রাতে ওই খামারের কর্মী আব্দুল জব্বার সাপগুলোকে খাবার খাওয়ানোর সময় একটি বিষধর সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় খামারটি প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পর বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে খামার মালিক রাজ্জাক বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার প্রতিষ্ঠিত খামারের ৩০০ বিষধর সাপ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ কোটি টাকা মূল্যের বিষ উৎপাদন সম্ভব, যা দেশীয় ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যা থেকে উৎপাদিত হতে পারে ক্যানসার, বি-ভাইরাসের মতো মরণব্যাধিসহ একাধিক দুরারোগ্য রোগের মহৌষধ অথবা অ্যান্টিভেনম।'

তবে সরকারের অনুমোদন না থাকায় এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছিলেন না জানিয়ে তিনি বলেন, 'খামারটিকে অনুমোদন দেওয়া হলে সাপের বিষ আমদানি বাবদ সাশ্রয় হতে পারতো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।'

ছবি: স্টার

রাজ্জাক বিশ্বাস আরও জানান, তিনি ১৯৯৯ সালে এইচএসসি পাসের পর সৌদি আরবে যান। সেসময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এক সাপের খামারের সন্ধান পান। যোগাযোগ করেন খামারের মালিকের সঙ্গে। তার কাছেই জানতে পারেন সাপের বিষ রপ্তানি করে আয়ের সম্ভাবনার কথা। এতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন সাপের খামার গড়ার জন্য। ২০০০ সালে ছুটিতে দেশে এসে সাপের এই খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

পঙ্খীরাজ, কেউটে, দাঁড়াশ, বাসুয়া, কালকুলিন, সাদা গোমা, পদ্ম গোমা, বিষঝুড়ি ও গোঁড়াস প্রভৃতি প্রজাতির সাপ রয়েছে রাজ্জাকের খামারে।

পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই খামারের বিষাক্ত সাপগুলো উদ্ধারে একটি বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানোর জন্য ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আজ মঙ্গলবার একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই টিম এলেই খামার থেকে সাপগুলো উদ্ধার করে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে '

Comments

The Daily Star  | English
Yunus condemns lawyer’s murder in Chattogram

Keep calm, refrain from violence

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday condemned the murder of a lawyer in the port city of Chattogram.

1h ago