করোনা মহামারি: ২৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের একটি দল। ছবি: এমরান হোসেন/স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত প্রতি ৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে একজন পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে উঠে এসেছে একটি সরকারি গবেষণায়।

কোনো আঘাতের কারণে পিটিএসডি হতে পারে এবং এর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে পুরনো কথা মনে পরা, দুঃস্বপ্ন, গুরুতর উদ্বেগ ও ঘটনা সম্পর্কে নিয়ন্ত্রণহীন চিন্তা।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের মধ্যে চিকিৎসকদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়েছিল। এরপরেই ছিলেন নার্স ও টেকনোলজিস্ট।

বাংলাদেশে করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের ওপর মানসিক প্রভাব, সংশ্লিষ্ট কারণ ও মোকাবিলার কৌশল শীর্ষক গবেষণাটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে ১ হাজার ৩৯৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর।

তাদের মধ্যে ছিলেন ৫৯৬ জন চিকিৎসক, ৭১৩ জন নার্স এবং ৮৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট।

এই স্বাস্থ্যকর্মীরা অন্তত এক মাস করোনা রোগীদের সঙ্গে কাজ করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের পিটিএসডির ঝুঁকি ছিল বেশি। যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৬৩ শতাংশেরই পিটিএসডি ছিল।

স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের কাজের চাপ অনেক বেশি ছিল, তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর (পিপিই) অপ্রতুলতায় ছিলেন এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই মানসিক চাপে ছিলেন, ক্লান্ত ছিলেন এবং অনেকেরই ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছিল। অনেকে তাদের পরিবার এবং আত্মীয়দের নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এতে করে তাদের উত্তেজনা ও উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়।'

একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, 'সংক্রামক রোগ হওয়ায় রোগীদের মতো আমাদেরও একই ভয় ছিল। অনেক কিছুই আমাদের কাছে ছিল অজানা। হাসপাতালগুলোও এই ধরনের নতুন রোগের চিকিত্সার জন্য প্রস্তুত ছিল না। রোগী, গণমাধ্যম ও গণমানুষসহ সমাজের নেতিবাচক মনোভাবের পাশাপাশি কাজের সময় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আমাদের মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।'

এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত প্রার্থনা, টিভি দেখা, বই পড়ার মতো কার্যক্রমে সময় ব্যয় করতেন, যাতে পিটিএসডির প্রভাব কম থাকে।

গবেষণা দলের প্রধান ও জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পিটিএসডি আক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা সবার থেকে দূরে সরে থাকতে পারেন বা চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন বা তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে।

তিনি আরও জানান, এই স্বাস্থ্য সমস্যাটির সমাধান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করা উচিত।

গবেষণায় স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের মানসিক সুস্থতায় কাউন্সেলিং প্রোগ্রামের ব্যবস্থা জোরদার ও প্রবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক বায়জীদ বলেন, পিটিএসডিতে আক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা এখন কীভাবে কাজ করছেন সে সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। কেননা, গবেষণার তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে গত বছর।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে এই গবেষণা পরিচালনা করে নিপসম।

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় এবং  ওই বছরের ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে ২৫ মে পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ৩২৮ জন এবং মারা গেছেন ২৯ হাজার ১৩০ জন।

Comments