‘হেটস্পিচ বৃদ্ধি ও জনরোষ তৈরি করে সহিংসতা সংখ্যালঘুদের অনিশ্চিত ঝুঁকিতে ফেলেছে'

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম রাশেদ হুসেইন
রাশেদ হুসেইন। স্টার ফাইল ফটো

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম রাশেদ হুসেইন গত ১৭-২০ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং ঢাকায় সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও তরুণদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ওই সফরের উদ্দেশ্য এবং বাংলাদেশে তিনি যে বার্তা পৌঁছে দিতে এসেছিলেন বা ওয়াশিংটনে কী বার্তা নিয়ে গেলেন, সে বিষয়ে গত ৫ মে দ্য ডেইলি স্টারকে ইমেইলে একটি সাক্ষাত্কার দেন তিনি।

ডেইলি স্টার: আপনি বাংলাদেশ সফরের জন্য এই সময়টিকে কেন বেছে নিলেন এবং এই সফর থেকে আপনি কী অর্জন করতে চেয়েছেন?

রাশেদ হুসেইন: বাংলাদেশে আবার যেতে পেরে আমি খুব খুশি। ওবামা সরকারের সময় অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক কো-অপারেশনের বিশেষ দূত হিসেবে আমি বাংলাদেশে ছিলাম। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর চালানো গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বীকৃতি দেওয়ার পরই আমি এসেছি। এছাড়াও তখন রমজান মাস চলছিল বলে পরিদর্শনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল।

ডেইলি স্টার: আপনি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং অন্যান্য সিভিল সোসাইটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?

রাশেদ হুসেইন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। আমি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি আমাদের সরকারের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে চেয়েছি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান হামলার বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, যেমন ২০২১ সালের অক্টোবরে হিন্দুদের দুর্গাপূজার সময়কার সহিংসতা। গত ১ বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষামূলক বক্তব্য বেড়ে যাওয়া এবং জনরোষ তৈরি করে সহিংসতার ঘটনা সংখ্যালঘুদের জন্য ক্রমশ একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমরা অক্টোবরের সহিংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রশংসা করি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে এবং ধর্মীয় সহনশীলতার বিষয়ে দৃঢ় বক্তব্য এবং ঘটনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা জানাই।

ডেইলি স্টার: আপনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেছেন। হিন্দু ও খ্রিস্টান রোহিঙ্গাদের একটি ছোট দলও সেখানে বাস করে। সফরে আপনি কী দেখেছেন?

রাশেদ হুসেইন: হিন্দুদের ক্যাম্প পরিদর্শনে তারা বলেছে যে তারা স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করতে পারে। তবে ক্যাম্পের সীমানায় কঠোরতা থাকায় তারা কিছু আধ্যাত্মিক আচার ও চর্চা করতে সমস্যায় পড়ছেন বলে জানিয়েছেন।

সফরে আমরা খ্রিস্টান রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। তবে আমার অফিস তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। তারা উপাসনালয়ের অভাব, অন্যান্য ক্যাম্পে অবস্থানরত নিজ ধর্মের প্রবীণদের সঙ্গে দেখা করতে না পারা, শিশুদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগের অভাবের বিষয়ে তাদের উদ্বেগ আমাদের জানিয়েছে।

ডেইলি স্টার: আপনি এখানে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। আমাদের সরকারের জন্য কী বার্তা দিচ্ছেন?

রাশেদ হুসেইন: সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি এবং বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছি। আমি রোহিঙ্গাদের প্রতি সরকারের অব্যাহত সহায়তার প্রশংসা করেছি। এত বড় একটা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় ও সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে বিশাল দায়িত্ব পালন করছে এবং অসুবিধার মধ্যে পড়ছে, আমরা তা স্বীকার করি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন গত ২১ মার্চ ঘোষণা দিয়েছেন যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, দেখা যাচ্ছে যে এই সংঘাতের নিষ্পত্তি হতে এখনো অনেক সময় লেগে যাবে।

ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগিতা সম্প্রসারণে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ায় আমি উৎসাহিত হয়েছি। কিন্তু একটা উদ্বেগের বিষয় এই যে ভাসানচরে স্থানান্তরিতরা চাইলে কক্সবাজারে পুনরায় ফিরে আসতে পারবেন, এই অধিকারের নিশ্চয়তা নেই।

কক্সবাজারে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় সরকার চলাচলের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে এবং ক্যাম্প এলাকায় বেষ্টনী দিয়েছে। এতে আমি কিছুটা নিরুৎসাহিত হয়েছি। পায়ে হেঁটে যেন বেষ্টনীর ভেতর ঢোকা যায়, এমন পকেট গেট দেখতে আগ্রহী মার্কিন সরকার। ক্যাম্পের চারপাশে বেড়া দেওয়ায়, অনেক জায়গায় সেবা পৌঁছে দেওয়া দুরূহ করে তুলেছে। পকেট গেট হলে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে এবং প্রয়োজনে অবাধে চলাচল করতে সুবিধা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

1h ago