সাড়ে ৯ ঘন্টার লড়াইয়ের পর ১৯৯ রানের দুর্ভাগা রেকর্ডে ম্যাথিউস
আগের বলটিতে থার্ড ম্যানে ফেলে দুই রান নিয়ে ১৯৯ রানে পৌঁছেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ৩৯৭ বল, ৯ ঘন্টা ৩৮ মিনিটের লড়াই শেষে পূর্ণাতার কিনারে ছিলেন তিনি। ১৫৩তম ওভারে নাঈম হাসানের শেষ বলটা ছিল নিরিহ। এত লম্বা সময় যিনি চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা দেখালেন, সেই তিনি ডাবল সেঞ্চুরির কিনারে এসে হুট করে হয়ে পড়লেন অস্থিরর। এই অস্থিরতা হৃদয়ভাঙার আক্ষেপে পুড়াল তাকে।
ম্যাথিউস ১৯৯ রানে থাকায় এবং ওভারের শেষ বল হওয়ায় ক্লোজ ফিল্ডারের সংখ্যা বাড়িয়েছিলেন মুমিনুল হক। সেই চাপ থেকে উড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করে থাকবেন এই ব্যাটার। নাঈমের বলে এগিয়ে গিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে সাকিব আল হাসানের হাতে ধরা দেন ম্যাথিউস। আউট হয়ে যান ১৯৯ রানে। শ্রীলঙ্কাও থেমে যায় ৩৯৭ রানে। বাংলাদেশের মাটিতে ১৯৯ রানে আউট হওয়া প্রথম কোন দুর্ভাগা টেস্ট ব্যাটসম্যান তিনি।
টেস্ট ইতিহাসে ১৯৯ রানে আউট হওয়া দ্বাদশ ব্যক্তি ম্যাথিউস। বাংলাদেশের বিপক্ষে এমনটা ঘটল দ্বিতীয়বার। এর আগে ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রমে ডিন এলগার আউট হয়েছিলেন ১৯৯ রানে।
ম্যাথিউসকে আউট করার মধ্য দিয়ে নিজের ৬ষ্ঠ উইকেট নেন লম্বা সময় পর টেস্টে ফেরা নাঈম। ইনিংস শেষে তার ফিগার দাঁড়ায় ১০৬ রানে ৬ উইকেট।
১৭৮ রান নিয়ে চা-বিরতিতে গিয়েছিলেন ম্যাথিউস। শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দলের চারশো আর তার দুশো দুটোই যেন ছিল নাগালে। কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে সেদিকেই এগুচ্ছিলেন লঙ্কান অভিজ্ঞ তারকা।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে পারলেন। বাউন্ডারি দিয়ে নিজের দ্বাদশ সেঞ্চুরিটাকে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে ইতি টানেন এই ডানহাতি।
তার ডাবল সেঞ্চুরির আশা ফিকে হয়ে গিয়েছিল লাঞ্চের পর পরই। লাঞ্চের ঠিক আগে নাঈম জোড়া উইকেট নিয়ে দলকে খেলায় ফেরান। লাঞ্চের পর সাকিব পর পর দুই বলে ফিরিয়ে দেন রমেশ মেন্ডিস আর লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে।
৩২৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বসে লঙ্কানরা। তখন ১৪৮ রানে ছিলেন ম্যাথিউস। এরপর বিশ্ব ফার্নান্দোকে নিয়ে চলতে থাকে তার প্রতিরোধ।
সাকিবদের অনেক চেষ্টা নসাৎ করে ছুটে চলে তাদের পথচলা। সাকিবের ঝুলন্ত বলের লোভগুলো সংবরণ করছিলেন পরিণত মাথায়। খালেদ আহমেদ-শরিফুল ইসলামদের বাউন্সার ডাক করেছেন একের পর এক।
শরিফুলের এরকমই এক বাউন্সারে আঘাত পেয়ে চা-বিরতির পর অবসরে গিয়েছিলেন তিনি। তার আগে নবম উইকেট জুটিতে আসে ১৪৭ বলে ৪৭ রানের জুটি। বিশ্বের অবসরের সময়টায় আসিতা ফার্নান্দোকে নিয়েও ৪৭ বল খেলেন ম্যাথিউস। এই জুটি যোগ করে ১৫ রান। বিশ্ব ফেরার পর আরও ২৫ বলে ৭ রানের জুটি আসে। তারপরই ম্যাথিউসের ওই তালগোল পাকানো। এবং চরম আক্ষেপ।
এর আগে দিনের শুরুতে আক্ষেপ সঙ্গী ছিল বাংলাদেশের। একদম চতুর্থ ওভারেই ফিরতে পারতেন ম্যাথিউস। খালেদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান বাংলাদেশ আবেদন না করায়।
বেঁচে গিয়ে চান্দিমালের সঙ্গে জুটিটা শতরান ছাড়িয়ে দেড়শোর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। লাঞ্চের ঠিক আগে ৬৬ রানে থাকা চান্দিমাল নাঈমের বলে আচমকা সুইচ হিটের নেশায় ডুবেন, ডোবান তার দলকে। ১১ রানের মধ্যে লঙ্কানরা হারায় ৪ উইকেট। সেই ধসের পরও সফরকারীরা চারশো কিনারে যেতে পেরেছে ম্যাথিউসের কারণে।
আগের দিন দুই উইকেট পড়ার পর কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে গড়েছিলেন ৯২ রানের জুটি। তৃতীয় সেশনে পর পর আরও দুই উইকেট পড়লে চান্দিমালের সঙ্গে তার ওই জুটি।
৬৯ আর ১১৯ রানে দুবার সুযোগ দিলেও ধৈর্য্য, নিবেদন, পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োগে ম্যাথিউস ছিলেন অনবদ্য। সেটা শেষ পর্যন্ত পূর্ণতার পেল না নাটকীয় এক বিদায়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ১৫৩ ওভারে ৩৯৭ (ওসাদা ৩, দিমুথ ৯, মেন্ডিস ৫৪, ম্যাথিউস ১৯৯, ধনঞ্জয়া ৬, চান্দিমাল ৬৬, ডিকভেলা ৩, রমেশ ১, এম্বুলদেনিয়া ০, বিশ্ব ১৭*, আসিতা ১; শরিফুল ০/৫৫, খালেদ ০/৬৬, নাঈম ৬/১০৫, তাইজুল ১/১০৭, সাকিব ৩/৬০)
Comments