ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পর বিশ্বে গমের দাম বাড়ছে

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক দেশ
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক দেশ হলেও এতদিন পর্যন্ত রপ্তানিতে খুব বড় ভূমিকা রাখেনি। কারণ, তাদের উৎপাদিত শস্যের বেশিরভাগটাই বিক্রি হয় অভ্যন্তরীণ বাজারে। ছবি: রয়টার্স

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ভারত গত শনিবার গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করায় আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়ে গেছে।

আজ সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, শিকাগোয় গমের মূল্য সূচক ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে, যা গত ২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এতে আরও বলা হয়, গত মার্চে তাপপ্রবাহের কারণে বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতির পর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারেও এই নিত্যপ্রয়োজনীয় শস্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

এ বছর সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাজারে গমের দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে রুটি থেকে শুরু করে নুডলস পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণের দামও বেড়েছে।

ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে ইস্যু করা এলসির (লেটার অব ক্রেডিট) বিপরীতে গম রপ্তানি করবে। এ ছাড়াও, যদি কোনো দেশ তাদের 'খাদ্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা' মেটাতে গমের চালান পাঠানোর অনুরোধ করে, তা বিবেচনা করা হবে।

সরকারের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা সাময়িক এবং তা যেকোনো সময় প্রত্যাহার করা হতে পারে।

জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিল্পোন্নত জি৭ দেশগুলোর কৃষিমন্ত্রীরা ভারতের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।

জার্মান খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী জেম ওজদিমির বলেন, 'যদি সবাই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা চালু করে অথবা নিজেদের বাজার বন্ধ করে দেয়, তাহলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।'

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক দেশ হলেও এতদিন পর্যন্ত রপ্তানিতে খুব বড় ভূমিকা রাখেনি। কারণ, তাদের উৎপাদিত শস্যের বেশিরভাগটাই বিক্রি হয় অভ্যন্তরীণ বাজারে।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর কিয়েভের গম রপ্তানি কমে যায়। অন্যান্য বড় উৎপাদক দেশগুলোয় খরা ও বন্যার কারণে শস্যের ক্ষতি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আশা করছিলেন ভারতের কাছ থেকে কিনে গমের বৈশ্বিক চাহিদা মেটাবেন।

নিষেধাজ্ঞার আগে, ভারত চলতি বছরে ১ কোটি টন গম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল। তবে এই মুহূর্তে তা অর্জনের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে হচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মার্চে বিশ্বে খাদ্য পণ্যের দাম নতুন রেকর্ড গড়েছে।

ইউক্রেন বিশ্বের বৃহত্তম সূর্যমুখী তেল রপ্তানিকারক। যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে তেলের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে, রান্নায় ব্যবহৃত অন্যান্য বিকল্প তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে।

দেশটি একই সঙ্গে গম ও ভুট্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্যেরও অন্যতম প্রধান উৎপাদক। এ কারণেও সার্বিকভাবে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে।

জাতিসংঘ আরও জানায়, চলতি এপ্রিলে খাবারের দাম কিছুটা কমলেও এখনও তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।

খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

ফলে, সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছে ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ ও দ্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ঋণ নেওয়ার খরচ (সুদের হার) বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। অর্থনীতিতে নেমে আসতে পারে নজিরবিহীন মন্দা।

গতকাল রোববার ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস'র সিনিয়র চেয়ারম্যান লয়েড ব্ল্যাংকফেন বলেন, 'বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিতে (যুক্তরাষ্ট্র) মন্দা নেমে আসার অতি উচ্চ পর্যায়ের ঝুঁকি রয়েছে।'

ইতোমধ্যে গোল্ডম্যান স্যাকস তাদের সর্বশেষ পূর্বাভাসে মার্কিন অর্থনীতির চলতি ও আগামী বছরের প্রবৃদ্ধির হার কমিয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago