রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়দানকারী বিনা টিকিটের ৩ যাত্রীকে জরিমানা করে বিপদে টিটিই

রেলওয়ে পাকশী বিভাগের একজন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শককে (টিটিই) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণকারী ৩ যাত্রীর কাছ থেকে জরিমানাসহ টিকিটের টাকা আদায় করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।

রেলওয়ে পাকশী বিভাগের একজন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শককে (টিটিই) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণকারী ৩ যাত্রীর কাছ থেকে জরিমানাসহ টিকিটের টাকা আদায় করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।

তবে রেলওয়ে জানিয়েছে, যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।

বরখাস্ত টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম রেলওয়ে পাকশী বিভাগের ঈশ্বরদী সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। বরখাস্ত হওয়ায় গতকাল শুক্রবার তিনি কাজে যোগ না দিলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

ঘটনার বিষয়ে শফিকুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঈশ্বরদী থেকে ৩ জন যাত্রী বিনা টিকিটে এসি কেবিনে উঠে বসেন। তারা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। শফিকুল ওই ৩ যাত্রীকে নন-এসি টিকিটের ভাড়া হিসেবে ৩৫০ টাকা করে এক হাজার ৫০ টাকা নিয়ে নন-এসির টিকিট দেন।

শফিকুল ইসলাম আজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তাদের কাছ থেকে মোট ১ হাজার ৫০ টাকা ভাড়া আদায় করেছি এবং তার রিসিটও দিয়েছি। এ সময় তাদের সঙ্গে আমি কোনো খারাপ আচরণ করিনি এবং তারাও কিছু বলেননি। খারাপ আচরণ করার তো প্রশ্নই ওঠে না।'

এ সময় রেলের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে শফিকুল বলেন, 'তারা এসি কামরাতে বসেই ঢাকা এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে ট্রেনের মধ্যে কোনো সমস্যা না হলেও পরবর্তীতে ঢাকা পৌঁছানোর পর ওই যাত্রীরা আমার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন বলে শুনেছি এবং এরপর আমাকে বরখাস্ত করা হয়।'

টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, 'যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।'

তিনি জানান, এ ঘটনায় মো. ইমরুল কায়েস প্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষের কাছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫ মে দিবাগত রাত সোয়া ২টায় ঈশ্বরদী স্টেশনে গিয়ে টিকিট পাননি অভিযোগকারী। তখন ট্রেন চলে আসায় তিনি ও তার সঙ্গে থাকা অপর ২ জন ট্রেনে উঠে পরেন।

অভিযোগে তিনি লিখেছেন, 'আমিসহ আমার ছোট ২ মামা তারাহুরা করে ট্রেনের যেখানে জায়গা পাব সেখানেই বসে পরব এমন অবস্থায় ট্রেন ছাড়ার অবস্থায় আমরা কোনোমতে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে দরজার সামনে উঠে পড়ি। ট্রেন চলার মিনিট ৩০ এর মধ্যে টিটিই আমাদের সামনে টিকিট চাইলো। আমি বলি ট্রেনে উঠতে তারাহুরাতে টিকিট কাটতে পারি নাই।'

'বললো কয়জন আমি বলি ৩ জন তখন বলে ৫০০ করে ১৫০০ টাকা দেন আমি তাকে টাকা দেই এবং বলি সাধারণত ৩০০ টাকা ভাড়া আপনি ৫০০ করে নিলেন। এবার টিকিট দেন ১৫০০ টাকার। উনি বলে টিকিট চাইলে ৩৬০০ করে ৩ জন দেন তাহলে টিকিট দিচ্ছি।'

'আমি বললাম টেক্সটাইলে চাকুরী করি আমার পক্ষে এতো টাকা দেওয়া সম্ভব না। আপনি ১৫০০ টাকার টিকিট দেন, এ কথা বিনয়ী সাথে বলেছি। হঠাত করে উনি অনেক উচ্চ স্বরে বলে যে ট্রেন কি তোর বাপের লাথি দিয়ে দরজা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিবো। তারপর বাবা, মা তুলে মুখে যা আসে তাই বলে আমাকে গালি দেই (দেয়)।'

এ ঘটনায় তিনি মর্মাহত উল্লেখ করে লিখেছেন, 'আমি বাংলাদেশ রেলওয়ের উর্দ্ধতম কর্মকর্তাদের জানাচ্ছি টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হক।'

আবেদনে মো. ইমরুল কায়েস প্রান্তর সই রয়েছে।

তবে, তার এবং তার সঙ্গে থাকা অপর ২ জনের সুনির্দিষ্ট পরিচয় জানা যায়নি।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, 'যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের জন্য গত ৩ মাস আগে টিটিই শফিককে পাকশী দপ্তরে বুক অফ করা হয়। তারপর তিনি যাত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তাকে কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হয়।'

গতকালের ঘটনায় ব্যাখ্যার জন্য টিটিই শফিককে আগামী রোববার ডিসিও পাকশী দপ্তরে তলব করা হয়েছে জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, 'সরকারি পরিবহন কর্মকর্তা পাকশীকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এই ঘটনা তদন্তে।'

Comments

The Daily Star  | English
Why did the Khagrachhari school reinstate a known sexual predator?

Why did the Khagrachhari school reinstate a known sexual predator?

This incident exposes the added vulnerability of young women and girls when they belong to Indigenous communities.

6h ago