ঈদে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শ্রমিকদের খাওয়ালেন প্রধানমন্ত্রী
ঈদের দিন, মঙ্গলবার দুপুর ২টা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মনকাশাইর এলাকায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে খাসজমিতে বিশালাকার এক প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের ভেতরে ২০টি টেবিল সাজানো।
এসব টেবিলে প্রায় ২০০ মানুষ বসে আছেন খাবারের অপেক্ষায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের প্রত্যেকের সামনে পৌঁছে গেল পোলাও আর মাছ-মাংসের প্লেট।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণে নিয়োজিত মানুষদের ঈদের দিনে খাওয়ানোর এই আয়োজন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণের স্বার্থে এই শ্রমিকদের কেউই এবারের ঈদে তাদের বাড়িতে যায়নি।
শুধু দুপুরে নয়, সকালেও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের জন্য মুড়ি, সেমাই আর পায়েশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মধ্যাহ্নভোজের পর আনন্দ বিনোদনের জন্য ছিল সঙ্গীতেরও আয়োজন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের মনকাশাইরে ১২ দশমিক ৩৫ একর খাস জমিতে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে সেটি দেশের সবচাইতে বৃহত্তম আশ্রয়ণ প্রকল্প। এখানে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য ৪০৩টি বাড়ি নির্মাণের কাজ চলমান আছে। এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ৩০০ নির্মাণ শ্রমিক। এবারের ঈদে এই শ্রমিকদের কেউই তাদের বাড়িতে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের এই সেক্রিফাইসের বিষয়টি জানার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদের দিনে তাদেরকে খাওয়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন।'
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, 'এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া নির্মাণাধীন এই আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে শ্রমিকদের সেক্রিফাইসের কথা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করেন। এ কথা জেনে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে ঈদের দিনে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরে জেলা ও কসবা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই আয়োজনের বাস্তবায়ন করা হয়।'
জেলা প্রশাসক বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী এই মানুষগুলোর শ্রম ও নিষ্ঠার কথা জেনে আবেগে অভিভূত হন। তাদের মধ্যাহ্নভোজে আমরাও অংশ নিয়েছি। আমার জীবনে এমন ঈদ আগে কখনো উদযাপন করিনি।'
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম বলেন, 'এই শ্রমিকদের অধিকাংশের বাড়ি নীলফামারী জেলায়। অল্প সংখ্যক শ্রমিকের বাড়ি জামালপুর জেলায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তাদের পছন্দকেও প্রাধান্য দিয়েছে। সে অনুযায়ী, সকালের নাস্তায় মুড়ি, সেমাই ও পায়েশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মধ্যাহ্নভোজে ছিল পোলাও, মাছ ভাজা, মোরগ ও খাসির মাংস, সবজি, টিক্কা, মুড়িঘণ্ট এবং মিষ্টি ও কোল্ড ড্রিংকসের ব্যবস্থা।'
গতকাল দুপুরে দেখা যায়, কসবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদেরকে টেবিলে বসিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে। অল্প কয়েকজন ছাড়া শ্রমিকদের অধিকাংশই যুবক। সবাই একসঙ্গে খেয়েছেন, কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি।
দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে। ঈদের দিন এমন ব্যতিক্রম আয়োজনে তারা সবাই খুশি। তাদেরই একজন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রামের এনামুল মিয়া। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদে বাড়ি না গেলে মন ভালো লাগে না। কিন্তু আজ মন খারাপ হয়নি। আজকের আয়োজন দেখে মনটা ভালো হয়ে গেছে।'
এনামুল মিয়ার পাশের টেবিলেই বসে খাচ্ছিলেন লাল চাঁন মিয়া। তিনি বললেন, 'স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করবেন এবং এভাবে যত্ন করে খাওয়াবেন, এমনটা কখনও কল্পনাও করিনি। এখানে উপস্থিত না থাকলে বিশ্বাসই হতো না।'
শ্রমিকদের গ্রুপ লিডার রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা যে পরিবার-পরিজনের কাছে যাইনি, সেই কষ্ট ভুলে গেছি। দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে যেভাবে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন, সেটা সত্যিই বিরল। এটাকে আমার জীবনের সেরা ঈদ হিসেবে স্বীকৃতি দিলাম।'
পতিত শ্রেণির জমিতে বালু ও মাটি ফেলে এই জায়গাটি বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। একসময় এ জায়গার বেশিরভাগই ভূমি বেদখল ছিল। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৪০০ ভূমিহীন পরিবারের দেড় হাজারের বেশি মানুষ এখানে থাকতে পারবেন। বসত ঘর ছাড়াও প্রকল্প ঘিরে বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও বাজারের পরিকল্পনা আছে।
আগামী জুলাইয়ে ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
Comments